বাগেরহাট প্রতিনিধি : জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে সড়ক বিভাগের বাগেরহাট- রূপসা-সড়ক। জোয়ারের পানিতে এই সড়কটির বাগেরহাট সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের রহিমাবাদ, বাগমারা, মাঝিডাঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানের প্রায় এক কিলোমিটার অংশ প্রতিদিন ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পানির নিচে থাকছে। যাত্রাপুর ইউনিয়নের রহিমাবাদ গ্রামে এই সড়কটির উপর দিয়ে জোয়ারের পানি উপচে লোকালয়ে ঢুকছে। কোনো কোনো জায়গায় সড়কের উপরে প্রায় ২ ফুট পানি দেখা গেছে। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। প্রতিদিন জোয়ারের সময় সড়কের উপর দিয়ে পানি উপচে রহিমাবাদ, বাগমারা, মাঝিডাঙ্গা গ্রাম প্লবিত হচ্ছে। উপচে পড়া পানিতে পুকুর, ঘরবাড়ি ও মৎস্য ঘের তলিয়ে যাচ্ছে। সড়কে যানচলাচলে ঘটছে দুর্ঘটনা। পানি প্রবল শ্রোত পার হয়ে স্কুলের শিশু শিক্ষার্থীদের যাতায়াত করতে হচ্ছে। গত ৫ বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই এই সড়কের উপর পানি উপচে পড়ে। ফলে প্রতিনিয়ত শিশুরা দুর্ঘটনা পড়ছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও যাত্রাপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম এ মতিন বলেন, বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের সময় ভৈরব নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাগেরহাট-রূপসা সড়কের রহিমাবাদসহ বিভিন্ন জায়গার এক কিলোমিটার অংশ জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। এতে করে মাছের ঘের, বাগান এবং বাড়ির উঠান ডুবে যায়। স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার পথে সড়কের উপর দিয়ে উপচে পড়া জোয়ারের পানির তোড়ে হাবিবা নামে ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ভেসে যায়।

স্থানীয় লোকজন তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে সে চিকিৎসাধীন রয়েছে। জোয়ারের পানি ঠেকাতে প্রতি বছর বালুর বস্তা দিয়ে সড়কের পাশে বাঁধ দিলেও কাজ হচ্ছে না। এ অবস্থা মূল সড়কটি উঁচু করলেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

রহিমাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী দিপা বলে, সড়কে পানি থাকায় আমাদের ভিজে স্কুলে যেতে হচ্ছে। সড়কটি পাকা হলেও পানির জন্য স্যান্ডেল পায়ে হাঁটতে পারিনা। অনেক সময় বই খাতাও ভিজে যায়।

রহিমাবাদের বাসিন্দা মোসলেম জমাদ্দার বলেন, অনেকদিন ধরে এ সড়কটি বর্ষা মৌসুমে জোয়ারের সময় পানি ওঠে। পানিতে আমাদের বাড়ি ঘর ডুবে যায়। এমন অবস্থা হয় যে, কেউ মারা গেলে ওই পানির মধ্যে কবর দিতে হবে। পানি থাকা অবস্থায় সড়কটি চিনতে না পেরে যানবাহন পাশে খাদে পড়ছে।

অটোচালক জাহিদুল কবির বলেন, জোয়ারের সময় সড়কে কোনো কোনো জায়গায় দুই ফুট পানি থাকে। মাঝে মাঝে ইঞ্জিনে পানি ঢুকে বিকল হয়ে যায় যানবাহন। এ অবস্থায় সড়কটি উঁচু করলে আমরা যানবাহন চালিয়ে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারব।

এদিকে, ঘটনাস্থলে দেখা যায় পানির চাপে যাতে সড়ক ভেঙে না যায় সে জন্য পাইলিংয়ের কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের কার্যসহকারী মো. সাইদুর রহমান মীর বলেন, আমরা জরুরি ভিত্তিতে সড়কের পাশের ভাঙন ঠেকাতে গাছ ও মাটির ফেলে পাইলিংয়ের কাজ করছি।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান মাসুদ বলেন, এ সড়কের কয়েকটি স্থান প্রচন্ড ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তারপরও আমরা কিছু কাজ করে সড়কটিকে চলাচলের উপযোগী করে রেখেছি। এ সড়কের স্থায়ী সমাধানের জন্য পুরাতন রেল লাইনের উপর থেকে বিকল্প সড়ক তৈরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

(এসএকে/এসপি/আগস্ট ১৪, ২০১৮)