আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে নারীর টানে বাড়ি ফেরা দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীসেবা দেয়ার জন্য দেশের সর্ববৃহৎ ও বিলাসবহুল ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে ৩০টি ব্যক্তি মালিকানাধীন লঞ্চ এবং ছয়টি সরকারী জাহাজ ও স্টিমার সার্ভিস প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সূত্র মতে, যাত্রীদের নিরাপত্তায় বিগত সময়ের মতো নানান ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা। তবে গার্মেন্টস সেক্টরে ছুটি একত্রে হলে গতবারের মতো হঠাৎ যাত্রীচাপ সামাল দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হতে পারে নৌ-কর্তৃপক্ষকে।

বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ এবং নদী বন্দর কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ঈদ-উল আজহাকে ঘিরে ১৮ আগস্ট থেকে ঢাকা থেকে বরিশালে উদ্দেশে যাত্রা শুরু করবে ঘরমুখো মানুষ। সে লক্ষ্যে ১৮ তারিখ থেকেই স্পেশাল সার্ভিসের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়েছে। তবে গার্মেন্টস সেক্টরের ছুটিকে কেন্দ্র করে ১৯, ২০ ও ২১ জুলাই এ রুটে যাত্রীদের চাঁপ বেশি থাকবে। যারমধ্যে ২০ জুলাই চাঁপ সবচেয়ে বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

অপরদিকে রাজধানীমুখী মানুষের চাপ ২৪ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে ধারনা করছেন লঞ্চ মালিকরা। এরমধ্যে ৩১ জুলাই বরিশাল থেকে রাজধানীমুখী মানুষের চাঁপ বেশি থাকবে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, ইতোমধ্যে যাত্রীদের নিরাপত্তায় বরিশাল নদীবন্দরকে ঘিরে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। যারমধ্যে নদী বন্দর এলাকায় যাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত যাত্রী ছাউনি নির্মাণ, আর্চওয়ে গেট বসানো, ঢাকামুখী নৌযানের বার্দিং (পার্কিং) প্লেস প্রসারিত করা, ঈদের আগে ও পরের সাতদিন করে ১৪ দিন বাল্কহেডসহ ঝুঁকিপূর্ণ নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা, নদীতে ফায়ার সার্ভিস, নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র টহল নিশ্চিত করা।

এছাড়াও মেরিন ক্যাডেট, স্কাউট, গার্লস গাইডের সদস্যরা যাত্রীদের লঞ্চে ওঠা-নামসহ সার্বিক সহযোগিতা করবেন। থানা ও নৌ-পুলিশের পাশাপাশি আনসার সদস্যরা বন্দর এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। অসুস্থ্যসহ উদ্ধার কাজে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও যানবাহনসহ বন্দর এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন।

বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার বলেন, এবার বরিশাল নদী বন্দর থেকে লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে দেয়া হবেনা। তিনি আরও বলেন, ঈদের সময় লঞ্চে মালামাল পরিবহন অনেকটাই বন্ধ রাখা হয়। এ সময় লঞ্চগুলো মালামাল পরিবহন বন্ধ রেখে লোড লাইনের ওপর ভিত্তি করে যাত্রী নিয়ে চলাচল করে। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট লোড লাইনের ওপরে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করতে কোনো লঞ্চকেই সুযোগ দেয়া হবেনা।

ঘাটে বিআইডব্লিউটিএ’র মনিটরিং ছাড়াও জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটরা থাকবেন। সবাই সমন্বিতভাবে কাজ করলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে লঞ্চ মালিক, চালক ও বিশেষ করে যাত্রীদের নিজ থেকে সচেতন হওয়াটাও প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, নৌপথের নিরাপত্তায় এরইমধ্যে বরিশালের আওতাধীন নৌরুটে বিকনবাতি-বয়াসহ সার্বিক সব নিরাপত্তা সাইন চেক করা হয়েছে। সবগুলো ঠিক রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। পাশাপাশি মাস্টারদের বিআইডব্লিউটিএ’র নিয়ম মেনে লঞ্চ চালনা করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবারেও বরিশাল নদী বন্দরে একত্রে ২২টি লঞ্চ বার্দিংয়ের সুবিধা পাবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) চালকদের পাশাপাশি, মালিক ও যাত্রীদের উদ্দেশে ১৫টি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

সূত্রমতে, ঢাকা-বরিশাল নৌরুটে সরাসরি যাত্রীসেবা দেবে এমভি অ্যাডভেঞ্চার-১, ৯, কীর্তনখোলা-২, ১০, সুরভী-৭, ৮, ৯, সুন্দরবন-৮, ১০, ১১, পারাবত-৮, ৯, ১০, ১১, ১২, কালাম-১, দীপরাজ, ফারহান-৮, টিপু-৭, কালামখান-১, গ্রীনলাইন-২, ৩।

এছাড়া ভায়া হিসেবে বরিশাল নদী বন্দর হয়ে আরও আটটি লঞ্চ যাত্রীসেবা দেবে। অপরদিকে সরকারী প্রতিষ্ঠান বিআইডব্লিউটিসি’র জাহাজ বাঙালি ও মধুমতি ছাড়াও স্টিমার সার্ভিসে পিএস মাহসুদ, লেপচা, অস্ট্রিচ, টার্ন নামে ছয়টি নৌযান যাত্রীসেবার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব নৌযানে আগামী ১৬ আগস্ট থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত ঈদ স্পেশাল সার্ভিসে যাত্রীসেবা দেবে।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ১৫, ২০১৮)