রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির পুরাতন ভবন জবর দখলের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে শতাধিক শ্রমিক পুলিশের উপস্থিতিতে মাটি গর্ত করে তাতে লোহার খাচা বসিয়ে এ জবরদখলের চেষ্টা করে।

সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন (২) জানান, কাটিয়া মৌজার ‘ক’ তপশীলে সরকারি খাস খতিয়ানের এসএ ১৯৩৯, ১৯৪২ ও ১৯৪৭ এর হাল ৪৫০৩ ও ৪৫০৪ দাগসহ ‘খ’ তপশীলের সাবেক ১৯৪৭ এর হাল ৩০৮৮ দাগে প্রায় চৌদ্দ শতক জমি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসকের নামে রেকডীয় ও জেলা আইনজীবী সমিতির দখলীয় জমি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে। ১৮৭২ সালে ওই জমিতে জেলা আইনজীবী সমিতি, রার লাইব্রেরী, আইনজীবী সহকারিদের বসার জায়গা, পায়খানা ও বাথরুমসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ভবন নির্মিত হয়। পরবর্তীতে সমিতির উত্তর পাশে পুলিশ সুপারের কার্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে পুলিশ সুপারের কার্যালয়সহ পিছনের কিছু জায়গা নিয়ে এক একর ৫৫ শতক জায়গা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের নামে ৩০ ধারায় রেকর্ড দেখানো হলেও তা সংশোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ি সদর সহকারি ভুমি কমিশানের মাধ্যমে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তিনি আরো জানান, পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবীর আইনজীবী সমিতির সামনে পৌরসভার রাস্তা সংলগ্ন প্রায় সোয়া এক শতক বা ১৬০ বর্গফুট জায়গায় বেড়া দিয়ে ফুল গাছ লাগিয়ে দখলের প্রক্রিয়া শুরু করলে আইনজীবী সমিতির তৎকালিন সভাপতি অ্যাড. শাহ আলম বাদি হয়ে ২০১৪ সালের পহেলা ডিসেম্বর সাতক্ষীরা সদর সহকারি জজ আদালতে মামলা( দেঃ- ২৭৯/১৪) করেন। মামলায় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিবাদী ও জেলা প্রশাসককে মোকাবিলা বিবাদী করা হয়। একই দিনে একইসাথে মামলায় বর্ণিত সমিতির ক ও খ তপশীলভুক্ত সকল জমি যাতে তারা শান্তিপূর্ণভাবে দখলে থাকতে পারেন সেজন্য আদালতে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। বিচারক কেরামত আলী পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই জমির শ্রেণী পরিবর্তণ বা কোন প্রকার স্থাপনা নির্মাণ না করার কথা বলে উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দেন। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ি যাহা নিষেধাজ্ঞারই সামিল।

তিনি আরো জানান, সমিতির পক্ষে এ মামলা পরিচালনা করার জন্য আইনজীবী অ্যাড শহীদুল্লাহকে (২) দায়িত্ব দেওয়া হয়। গত ২৩ জুলাই ধার্য দিনে সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য ছিল। ২২ জুলাই গভীর রাতে পুলিশ পরিচয়ে অ্যাড. শহীদুল্লার বাড়িতে দু’ বার অভিযান চালানো হয়। তাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশ্য করে সাক্ষী না দেওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি ও গালিগালাজ করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অন্যত্র চলে যান। আতঙ্কিত ওই আইনজীবী দু’ দিন পর ওই মামলা পরিচালনার দায়িত্ব থেকে অব্যহতি চেয়ে আইনজীবী সমিতির সভাপতির কাছে আবেদন করেন। আগামি ৩০ আগষ্ট সাক্ষীর জন্য আদালত চুড়ান্ত দিন ধার্য রয়েছে।

অ্যাড. আবুল হোসেন (২) বলেন, আইনজীবী অ্যাড. শহীদুল্লাহ’র বাড়িতে পুলিশ পরিচয়ে অভিযান, চলমান দেওয়ানী মামলা নিয়ে করণীয় ও বিচারিক হাকিম আদালতে যাওয়ার জন্য করিডর সৃষ্টির বিষয়ে গত ৭ আগষ্ট সমিতির নির্বাচিত কমিটির সদস্য, সরকারি আইনজীবী,সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে পরামর্শ সভা আহবান করা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি পরদিন ঘণ্টা বাজিয়ে সাধারণ সভা ডাকা হয়। সভায় ওই তিনটি বিষয় সমাধানের লক্ষ্যে ১৩ আগষ্ট আদালত চত্বরে মানববন্ধন কর্মসুচি পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে ১২ আগষ্ট জেলা প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদের অনুরোধে শান্তিপূর্ণ সমস্যার সমাধানের স্বার্থে মানববন্ধন কর্মসুচি স্থগিত করা হয়।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. আ.ক.ম রেজওয়ানউল্লাহ সবুজ বলেন, বৃহষ্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলমের নিয়োগকৃত শতাধিক শ্রমিক আইনজীবী সমিতির পুরাতন ভবনের দক্ষিণ পাশে পোষ্ট অফিসের প্রাচীর লাগোয়া কয়েকটি গর্ত খুড়ে তাতে লোহার রড ও তার দিয়ে তৈরি চারটি খাচা বসিয়ে দেন। এ সময় তারা সিমেন্ট, বালি ও স্টোনচিপ মিশিয়ে ঢালাই এর পরিকল্পনা করলে তারা খবর পেয়ে বাধা দেন। এ সময় গোয়েন্দ পুলিশের তিন জন উপপরিদর্শকসহ কয়েকজন পুলিশ উপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিক জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেন। তিনি রাত ১০ টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে পুলিশ সুপার মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেন।
ঠিকাদার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তিনি চুক্তি অনুযায়ি আইনজীবী সমিতির পূর্ব পাশে প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু করেন। আপত্তি ওঠায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে তা বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার সাজ্জাদুর রহমানের সঙ্গে শুক্রবার বিকেলে তার ০১৭১৩-৩৭৪১৩৫ নং মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

তবে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোঃ ইফতেখার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইনজীবী সমিতির পুরাতন ভবনের পাশে প্রাচীর নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার জন্য পুলিশ সুপার মহোদয়কে বলা হয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতি ও পুলিশ সুপারের মধ্যকার উদ্ভুত পরিস্থিতি নিরসনে আগামি ২৫ আগষ্ট তার বাসায় আলোচনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১৮, ২০১৮)