রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বিএনপি সমর্থিত দু’ পরিবারের মধ্যে জমি দখল বেদখলের খেলায় মদত দেওয়ার নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার  ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষপর্যায়ের এক জনপ্রতিনিধি ও তার পোষ্যরা। তার মদতে পুলিশের উপস্থিতিতে ঘরবাড়ি ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও মারপিটের পর মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে এলাকা ছাড়া না করতে পেরে নতুন করে মামলা দেওয়ার জন্য শনিবার দুপুরে  বাধঘাটা কিং স্টার ক্লাবের সভাপতি  গোলাম মোস্তফা পরিচয়ে মোবাইল ফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। কোন প্রকারে বেচে থাকার জন্য নির্যাতিত ওই পরিবারের কয়েকজন সদস্য শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে অবস্থানরত কয়েকজন সাংবাদিকের শরনাপন্ন হন।

শনিবার সকালে বাধঘাটা গ্রামে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী ব্যবসায়ি সামছুর রহমান, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল করিম, জামিলা খাতুনসহ কয়েকজন জানান, শ্যামনগর উপজেলার বাধঘাটা গ্রামের আব্দুস সবুর তরফদারের স্ত্রী সাবিনা খাতুন ও ছেলে এমদাদুলের কাছ থেকে চলতি বছরের মে মাসে ছয় শতক জমি কিনে তাতে ঘরবাড়ি বানিয়ে শান্তিপূর্ণ দখলে ছিলেন আবুল কালাম গাজী। ওই জমি নিয়ে সাবিনা খাতুনের দেওয়ানী মামলা থাকায় ১৬ শতক জমি সোলে করে দেওয়া নিয়ে আইনের অপব্যাখ্যা দিয়ে ওই জনপ্রতিনিধির সহায়তায় বারি মাষ্টার ও তার সহযোগী ভাইয়েরা কালাম ও তার তিন ভাইকে ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চলছিল প্রথম থেকেই।

গত ১০ আগষ্ট পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য দিবালোকে ছয় ঘণ্টাব্যাপি যেভাবে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটলো তা যে কোন বর্বরতাকে হার মানায়। হামলাকারিরা একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধ ও রোগাক্রান্ত তার স্ত্রীকে টেরে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে যেভাবে মারপিট করেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। বাধা দিতে যাওয়ায় উল্টে হামলাকারিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে উপপরিদর্শক রাজ কিশোর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশ পাল্টা মারপিট করেছে।

নির্যাতিত কালাম, সালাম ও সাত্তারের পরিবারের অষ্টম শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে ঘরের মধ্যে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। হামলাকারিদের মামলা পুলিশ আগে রেকর্ড করে তাদের ভূমিকাকে আবারো প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা জানান, বারি মাষ্টার ও আবুল কালামের পরিবারের লোকেজন বিএনপির কট্টর সমর্থক। এ জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে কালামকে আইনজীবী আলাউদ্দিন ও আবুল হোসেনের মতামত নিয়ে জমি দখল করে ঘর বানানোর জন্য তাদের কাছ থেকে ওই জনপ্রতিনিধি প্রথমে শ্যামনগরের এক সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউলের মাধ্যমে প্রথমে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

কয়েক দফায় ওই জনপ্রতিনিধি, তার কাছের লোক বলে পরিচিত আশরাফ ও মোস্তাক সাড়ে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। মোস্তাক সর্বশেষ নিয়েছেনে একটি হাংঙ গাড়ি কেনার জন্য এক লাখ টাকা। একইভাবে ভাঙা গড়ার খেলায় ৫৮ শতক জমির মালিক হয়েও অনিয়মের মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি জমি দখলকারি বারি মাষ্টারদের কাছ থেকে লুটে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। কালাম ও সালামের ভাণ্ডার শুন্য হয়ে যাওয়ায় ওই জনপ্রতিনিধি জোরে সোরে ভর করেছেন বারি মাষ্টারের উপর।

নির্যাতিতদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রেকর্ড করিয়েও তাদেরকে বেদখল না করতে পারায় ওই জনপ্রতিনিধির বরাত দিয়ে শনিবার দুপুরে বাধঘাটা কিং স্টার ক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফার মোবাইল ফোন থেকে জায়গা খালি করার হুমকি দেওয়া হয়েছে। তবে ভিডিও ফুটেজে রাজ কিশোর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশ হামলাকারিদের পক্ষ নেওয়ার একশানটি দেখা গেলেও তিনি আর্থিক সুবিধা নেওয়া ও ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। যা কিছু করেছেন জগলুল স্যারের কথামত করেছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

তবে সাংসদ এসএম জগলুল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, আব্দুল বারি ও আবুল কালামের মধ্যে বিরোধ নিয়ে তার কিছু জানা ছিল না। যদি কেউ তার নাম ভাঙায় বা মোবাইল ফোনে তার কথা বলে টাকা চেয়ে হুমকি দেয় সে দায় তার নয়। তবে গত ১০ আগষ্ট খবর পেয়ে পুলিশকে যথাযথ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি বলেছিলেন।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জিয়াউর রহমান জানান, মোবাইলে হুমকির ঘটনাটি থানায় এসে কেউ অভিযোগ করেনি।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১৮, ২০১৮)