উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : দুপুর ১২ টায় পাকবাহিনীর তিনটি নৌকা শালদা নদী অবস্থান থেকে ব্রাহ্মণপাহাড় দিকে অগ্রসর হলে মুক্তিবাহিনী ছোট নাগাইশের কাছে নৌকাগুলোর ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর দু‘টি নৌকা পানিতে ডুবে যায় ও ২০ জন পাকসেনা নিহত হয়। পিছনের নৌকাটি দ্রুত পাড়ে ভিড়িয়ে পাকসেনারা নৌকা থেকে নেমে পড়ে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর পাল্টা আক্রমণ চালায়। প্রায় চারঘন্টা গুলিবিনিময়ের পর পাকসেনারা পিছু হটে।

মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনী শালদা নদী গুদাম অবস্থানের ওপর কামান আক্রমণ চালায়। এতে পাকবাহিনীর একটি বাঙ্কার ধ্বংস হয় ও ৮ জন পাকসেনা নিহত হয়।

সন্ধ্যায় মুক্তিবাহিনী কুড়িগ্রামে পাকহানাদার বাহিনীর চিলমারী ঘাঁটি আক্রমণ করে। এতে হানাদারদের কিছু বাঙ্কার ধ্বংস হয় ও ৪ জন পাকসেনা নিহত হয়।

ঢাকায় মুক্তিবাহিনী সাটুরিয়া থানা আক্রমণ করে। এ অভিযানে ৪ জন পাকসেনা ও ৫ জন পুলিশ নিহত হয় এবং ১৪ জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বন্দী হয়। থানা থেকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ দখল করে।

খুলনার পাইকগাছায় মুক্তিবাহিনী পাকহানাদার বাহিনীর একটি লঞ্চকে এ্যামবুশ করে। এতে লঞ্চে অবস্থানকারী ২৬ জন পাকসেনার সকলেই নিহত হয় এবং লঞ্চটি বিধ্বস্ত হয়।

পাকিস্তান সরকার ঘোষনা করে : পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যপদে অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত ৯৪ জন সদস্যের সদস্যপদ ব্যক্তিগত পর্যায়ে বহাল থাকবে।

ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র রবার্ট ম্যাকক্লক্সি বলেন, পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে বলে সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডী যে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সরকার তার সাথে একমত নন।

ঢাকায় সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল টিক্কা খান আওয়ামী লীগের ২৯ জন জাতীয় পরিষদ সদস্যকে সামরিক আদালতে হাজির হবার নির্দেশ দেয়। এঁরা হচ্ছেন : আবদুল মমিন, আবদুল হামিদ, জিল্লুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মৌলবী হুমায়ুন খালিদ, শামসুর রহমান, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, আলী আজম, আবদুস সামাদ আজাদ, মোহাম্মদ আবদুর রব, মোস্তফা আলী, এ.কে. লতিফুর রহমান চৌধুরী মানিক, দেওয়ান ফরিদ গাজী, মোহাম্মদ ইলিয়াস, ফজলুর রহমান, এ.কে.শামসুজ্জোহা, আবদুল করিম ব্যাপারী, এ. ভুঁইয়া, শামসুল হক, কে.এম. ওবায়দুর রহমান, মোল্লা জালাল উদ্দিন, শামসুদ্দিন মোল্লা, এম.এ. গফুর, শেখ আবদুল আজিজ, নূরুল ইসলাম মঞ্জুর, এ. মান্নান হ্রালাদার, আবদুর রব সেরানিয়াবাত এবং এনায়েত হোসেন খান।

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত কথিকা ‘ বিশ্বজনমত’ :

..............পাকিস্তানের সাবেক এয়ার মার্শাল আসগর খান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার প্রহসনের তীব্র নিন্দা করেছেন। তিনি পাকিস্তানি সামরিক চক্রকে এই বলে হুঁশিয়ার করেছেন যে, পাকিস্তানি সামরিক জান্তা বাংলাদেশে যা করেছে এবং বঙ্গবন্ধু বিচার প্রহসনে মেতে যা করতে যাচ্ছে তার পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ এবং এর ফলে পাকিস্তানটাই তাসের ঘরের মতো এক মুহুর্তে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে।
..............গত সপ্তাহে পাকিস্তানি জাহাজ আল-আহমাদী মার্কিন সমরাস্ত্র বহনের জন্যে ফিলাডেলফিয়া বন্দরে ভেড়ার চেষ্টা করছিল কিন্তু সেখানে পাকিস্তানি জঙ্গিশাহীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয় এবং বিক্ষোভকারীরা ছোট ছোট নৌযান দিয়ে পাকিস্তানি জাহাজের সম্মুখে অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে পাকিস্তানি জাহাজটিকে ফিলাডেলফিয়া বন্দরে ভেড়ার সংকল্প পরিত্যাগ করে বাল্টিমোরের দিকে এগুতে হয়।
শুধু ফিলাডেলফিয়া বন্দর নয়, পৃথিবীর সর্বত্রই পাকিস্তানি সামরিক চক্রের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ধিক্কার উঠেছে। পাকিস্তানি জঙ্গিশাহী সর্বত্রই লাঞ্ছিত। যুদ্ধবাদ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মদত পেয়ে পাকিস্তানের গোঁয়ার সামরিক চক্র এখনও আস্ফালন করছে সত্যি কিন্তু এর শোচনীয় পরিসমাপ্তি অত্যাসন্ন।

তথ্যসূত্র : মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর।

(ওএস/এএস/আগস্ট ১৯, ২০১৮)