নবীগঞ্জ প্রতিনিধি : নবীগঞ্জ উপজেলার সিমান্তবর্তী গ্রাম বানিয়াচঙ্গ উপজেলার বড়ইড়ি ইউনিয়নের নোয়াগাঁওয়ে পঞ্চায়েত এর টাকা নিয়ে এবং পূর্ব বিরোধের জের ধরে একের পর এক হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনা ঘটছে। এতে আহত হয়েছে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় মুর্শেদকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে এবং আহত কলেজ ছাত্র সাইদুর রহমানকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি ও বাকীদের বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। 

এসব ঘটনায় উভয় পক্ষের একাধীক মামলা রয়েছে। এক পক্ষের নেতৃত্বে রয়েছে মুছা মিয়া ও ফরিদ উদ্দিন অপর পক্ষে সাবেক মেম্বার আরজু মিয়া। শুধু হামলা এবং মামলার মাঝেই সীমাবদ্ধ নেই তাদের এই বিরোধ। এসব ঘটনার জের ধরে গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার অর্ধশতাধিক বাড়িঘরে লুটপাট, ভাংচুর করা হয়েছে। এতে প্রায় ১৫/২০ লাখ টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ এসল্ট মামলা করেছে পুলিশ। এতে উভয় পক্ষের লোকদের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা লোকদের আসামী করা হয়েছে। ফলে পুরুষ শুন্য রয়েছে নোয়াগাওঁ গ্রাম। বুধবার রাত এবং বৃহস্পতিবার সারা দিন ওই এলাকায় চিরুনী অভিযান চালায় পুলিশ। হাওর থেকে দৌড়িয়ে ৮ দাঙ্গাবাজকে আটক করে পুলিশ।

গতকাল শনিবার দুপুরে নোয়াগাওঁ গ্রামে সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, আহত মুর্শেদ আহমদের পরিবারের সদস্যরা হাহাকার করছেন। গ্রামের প্রায় অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর ভাংচুর, নগদ টাকা, গরু, মোরগসহ বিভিন্ন মালামাল লুটপাট এর দৃশ্য দেখা যায়। পুরুষ শুন্য গ্রামের মহিলাদের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়–ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষের লোকজন হত্যার হুমকী দেয়ায় কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্টানে যেতে পারছেনা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নোয়াগাও গ্রামের মেন্দি বিল ও সরকারী পতিত জমি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়েই মুলত বিরোধের সূত্রপাত। বিভক্ত গ্রামবাসীর এক গ্রুপের নেতৃত্ব দেন মুছা মিয়া, ফরিদ উদ্দিন। অপর পক্ষে নেতৃত্ব দেন সাবেক ইউপি মেম্বার আরজু মিয়া। এই দু’গ্রুপের বিরোধ চরম পর্যায়ে রূপ নেয়। দীর্ঘ ১৫/২০ বছর ধরে চলে তাদের বিরোধ। উভয় পক্ষে কমপক্ষে ৩০/৩৫টি মামলা মোকদ্দমা হয়। অসংখ্য দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনায় বিপুল সংখ্যক লোকজন আহত হয়। দীর্ঘদিনের বিরোধটি এক পর্যায়ে শেষ হয় শালিসের মাধ্যমে। গ্রামে সৌর্হাধ্যপুর্ণ পরিবেশ ফিরে আসে। এই অবস্থায় গ্রামবাসী বিভিন্ন খাতের আয়ের টাকা জমা দেয়া হয় মুছা মিয়ার হাতে। প্রায় ২২ লাখ ৫ হ্জাার টাকা। গ্রামবাসী পঞ্চায়েতের মাধ্যমে অতি সম্প্রতি গ্রামের জমাকৃত টাকা ২২ লাখ ৫ হাজার টাকার জন্য মুছা মিয়াকে চাপ দিলে নতুন করে আবার বিরুধের সৃষ্টি হয়।

অভিযোগ উঠেছে, চলতি বছরের ৩১ জুলাই সন্ধ্যায় আরজু মিয়া মেম্বারের কলেজ পড়–য়া ছেলে সাইদুর রহমান বাড়ি ফেরার পথে রাস্তায় আটকিয়ে মুছার বাহিনী প্রধান ক্যাডার মুর্শেদ তার লোকজন নিয়ে সাইদুরের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়। তাকে হবিগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর আরজু মিয়ার লোকজন উক্ত মুর্শেদকে মারার জন্য পরিকল্পনা করে। গত ১৫ই আগষ্ট আরজু মিয়ার লোকজন জানতে পারেন বিকালের দিকে স্থানীয় রসূলগঞ্জ বাজার থেকে সিএনজি যোগে মুর্শেদ একা বাড়ি ফিরছে। এই খবর পেয়ে ওৎ পেতে বসে থাকে আরজু মেম্বারের ক্যাডার বাহিনী। বিকাল ৫টার দিকে সিএনজি যোগে মুর্শেদ বাড়িতে আসার পথে আরজুর বোনের বাড়ীর নিকটে গাড়ী থেকে নামিয়ে ৫/৭ জনের একদল ক্যাডার বাহিনী মুর্শেদকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে।

এসময় হামলাকারীরা তার ১ টি হাতের কবজি কেটে ফেলে। দু’পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য দা’য়ের কুপ রয়েছে। মুমূর্ষ অবস্থায় তাকে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে তার অবস্থা আশংখ্যা জনক। তাকে লাইফ সার্পোটে রাখা হয়েছে বলে জানাগেছে। এই ঘটনার পর থেকেই উত্তোপ্ত হয়ে উঠে নোয়াগাঁও গ্রাম। পুরুষ শুন্য হয়ে পড়ে গ্রামটি। এরপরই চলে নারকীয় তান্ডব। এক পক্ষ অপর পক্ষকে খুজতে থাকে আক্রমন করার জন্য। কাউকে না পেয়ে বাড়ী-ঘর লুটপাট করা হয়। খবর পেয়ে বানিয়াচং থানার ওসি মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করে ৮ দাঙ্গাবাজকে আটক করে।

বড়ইউড়ি ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সভাপতি ফরিদ মিয়া জানান, আরজু মিয়ার নেতৃত্বে এলাকায় সন্ত্রাসী হামলাসহ বিভিন্ন অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালিত হয়। সে সব সময় গ্রামে বিরোধ সৃষ্টি করে এবং গ্রামের সরকারী সম্পদ একা একা ভোগ করতে চায়। মুরুব্বিয়ানদের সালিশ বিচারেরও সে ধার ধারে না। সালিশে তাকে একবার ১লাখ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সে সেই সময় গ্রামবাসীকে মুচলেকা দেয় ভবিষ্যতে সে নোয়াগাও গ্রামে, মদ, জুয়াসহ কোন ধরনের অবৈধ কাজ করবে না। কিন্তু সে তার অভ্যাস পরিবর্তন করেনি।

নোয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা শাহজাহান চৌধুরী জানান, ১৫ বছর যাবৎ আরজু মিয়ার সাথে গ্রামবাসীর বিরোধ চলে আসছে। এর আগে ৪০ বছর পূর্বে গ্রামের সরকারী পতিত জমি নিয়ে আরজু মিয়ার ভাতিজা সফিকের সাথে বিরোধ হয়। এমপিসহ মুরুব্বিরা একাধিকবার সমাধান করার পরও আরজু মিয়া ও তার লোকজন নতুন করে ঘটনার জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে সাবেক মেম্বার আরজু মিয়া বলেন, গ্রামের পঞ্চায়েতের ২২ লক্ষ ৫ হাজার টাকা ফরিদ মিয়া ও মুছা মিয়ার আমানত হিসেবে রাখা হয়েছিল। বর্তমানে গ্রামের প্রয়োজনে টাকা চাইলে তারা নানান টালবাহানা শুরু করে। এক পর্যায়ে টাকা দিতে অস্বীকার করে। এনিয়ে নতুন ঘটনার সুত্রপাত।

বানিয়াচং থানার ওসি মোজাম্মেল হক জানান, দুই পক্ষের বিরোধ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও কোন সমাধান হয়নি। পুলিশ উভয় পক্ষের দাঙ্গাবাজ লোকজনকে আটক করতে অভিযান পরিচালনা করছে। ইতোমধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

(এমআরএম/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০১৮)