আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : আগৈলঝাড়ায় বাবার বাড়িতে নিজ ভাইয়ের হাতে প্রবাসীর স্ত্রী নিহত। দাফন করার প্রস্তুতি নিলে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে। ওই ঘটনায় নিহতর মা হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে মেয়ের ননদ জামাতার উপর পরকীয়ার অভিযোগ চাপিয়ে মামলা দায়ের করেছে। 

নিহতর পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তি জয়রামপট্টি গ্রামের করিম মোল্লার ছেলে আল আমিন মোল্লার সাথে সীমান্তবর্তী কোটালীপাড়া উপজেলার নারায়ণখানা গ্রামের জাহান আলী খানের মেয়ে মুন্নীর সাথে সামাজিকভাবে বিয়ে হয়। তিন বছর আগে থেকেই আল আমিন মালয়েশিয়ার প্রবাস জীবনে রয়েছে। দাম্পত্য জীবনে মুন্নি ও আল আমিনের ছেলে জিহাদ (১০) ও উম্মে কুলসুম (৭) নামের দুটি সন্তান রয়েছে। জিহাদ স্থানীয় মাদ্রাসায় ও উম্মে কুলসুম জয়রামপট্টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়া লেখা করছে।

গত ১৫ আগষ্ট মুন্নীর বাবা জাহান আলী তার মা রহিমা বেগম অসুস্থ বলে মুন্নিকে ফোনে ডেকে পাঠায়। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে মুন্নী তার সাত বছরের মেয়ে নিয়ে বাবার বাড়ি গিয়ে তার মাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

ওই দিন রাতে মুন্নীর একমাত্র ভাই নারায়নখানা বাজারের চা দোকানী সোহাগ খান তার মাকে চিকিৎসা করানো নিয়ে মুন্নির সাথে ঝগড়ার এক পর্যায়ে ভাই সোহাগ বোন মুন্নীকে বেদম মারধর করে। মারধরের কারণে মুন্নি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে মুন্নী অসুস্থর ঘটনা তার তার শ্বশুর পরিবারকে না জানিয়ে বাবার বাড়ির স্বজনেরা মুন্নিকে প্রথমে কোটালীপাড়া উপজেলা হাসপাতালে নেয়। সেখানে থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য পরে গোপালগঞ্জ জেলা হাসপাতাল ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খুলনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ আগষ্ট দুপুরে মুন্নী মারা যায়।

মুন্নির লাশ বাবার বাড়ি নিয়ে দাফনের চেষ্টা করলে খবর পেয়ে কোটালীপাড়া পুলিশ মুন্নির লাশ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেমের জন্য মর্গে প্রেরণ করে। পোস্টমর্টেম শেষে মুন্নির লাশ তার শ্বশুর বাড়িতে দাফন করতে চাইলেও মুন্নির বাবার পরিবার মুন্নির লাশ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে শনিবার বিকেলে মুন্নীর লাশ তার বাবার বাড়িতে দাফন করা হয়।

পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে মুন্নির সাথে থাকা তার সাত বছরের মেয়ে উম্মে কুলসুম জানায়, ঘটনার দিন গত ১৫ আগষ্ট রাতে ঝতার মামা সোহাগ তার মাকে মারধর করে। মামার লাথি মায়ের পেটে পরে মা অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে মা মারা যায়।

মুন্নির বাবা জাহান আলী খান জানান, মুন্নির সাথে তার ননদ জামাতা সজীবের অবৈধ মেলামেশায় মুন্নি অন্তসত্তা হয়ে পরে। এমআর করতে গিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণে মুন্নীর মৃত্যু হয়েছে।

এ ব্যাপারে কোটালীপাড়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. কামরুল ফারুক সাংবাদিকদের জানান, মুন্নির সাথে তার ননদ জামাতা সজিবের অবৈধ সম্পর্কের কারণে মুন্নি অন্তসত্বা হলে এমআর করাতে গিয়ে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় মুন্নির মা রহিমা বেগম বাদী হয়ে সজীবকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন, যার নং-১৩ (১৭-৮-২০১৮)। মুন্নির লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করে অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলে প্রকৃত ঘটনা জেনে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মুন্নির শ্বাশুরী আলেয়া বেগম বলেন, মুন্নির সাথে কারো কোন অবৈধ সম্পর্ক ছিল না। তার ছেলে আল আমিন বিদেশ থেকে সকল টাকা মুন্নির নামে পাঠাত। ওই টাকা থেকে সোহাগ টাকা নিয়ে আত্মসাত করতেই তার ছেলে বউকে মেরেছে। এব্যাপারে তিনি হত্যা মামরা করার প্রস্ততি নিচ্ছেন। বাড়িতে কোন পুরুষ লোক না থাকায় মামলা করতে বিলম্ব হচ্ছে।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০১৮)