রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বাধঘাটা গ্রামের নূর আলী গাজীর পরিবারের সদস্যদের ঘরবাড়ি ভাঙচুরের পর মিথ্যা মামলা মাথায় নিয়ে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবন যাপনের ঘটনায় তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার নূর আলী গাজীর পুত্রবধু  সাকিবুন্নাহার সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে এ অভিযোগ করায় তিনি তাৎক্ষণিক এ আদেশ দেন।

একইভাবে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয়টি উপস্থাপন করায় সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ম্যজিষ্ট্রেট অনিন্দিতা রায় শান্তি শৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করে বিরোধপূর্ণ জমির আকৃতি, প্রকৃতি ও ধরণ অপরিবর্তিত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে আগামি ১৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

সাকিবুন্নাহারের অভিযোগ থেকে জানা যায়, এক সময়কার হোটেল ব্যবসায়ী বাধাঘাটা গ্রামের পক্ষাঘাত আক্রাস্ত নূর আলী গাজীর ছেলে আবুল কালাম, আব্দুস সালাম ও আব্দুস সাত্তার একই গ্রামের সাবিনা খ্তাুন ও তার ছেলে এমদাদুল হকের কাছ থেকে গত মে মাসে ছয় শতক জমি কিনে তাতে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে শান্তিপূর্ণ ভোগদখলে ছিলেন। সাবিনা খাতুনের দেবর বারী মাষ্টারসহ চার ভাইয়ের সঙ্গে ওই জমিসহ ২২ শতক জমি নিয়ে দেওয়ানী আদালতে মামলা রয়েছে। ওই মামলার জের ধরে শ্যামনগরের শীর্ষপর্যায়ের এক জনপ্রতিনিধির সহায়তায় বারি মাষ্টার ও তার সহযোগি ভাইয়েরা কালাম ও তার তিন ভাইকে ওই জমি থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে। এরই অংশ হিসেবে গত ১০ আগষ্ট পুলিশের উপস্থিতিতে প্রকাশ্য দিবালোকে ছয় ঘণ্টাব্যাপি যেভাবে ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের যে ঘটনা ঘটলো তা যে কোন বর্বরতাকে হার মানায়।

হামলাকারীরা একজন পক্ষাঘাতগ্রস্ত বৃদ্ধ শ্বশুর ও রোগাক্রান্ত শ্বাশুড়িকে টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে যেভাবে মারপিট করেছে তা মেনে নেওয়া যায় না। বাধা দিতে যাওয়ায় উল্টে হামলাকারিদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে উপপরিদর্শক রাজ কিশোর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে পুলিশ পাল্টা মারপিট করেছে। নির্যাতিত কালাম, সালাম ও সাত্তারের পরিবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী এক স্কুল ছাত্রীকে ঘরের মধ্যে ফেলে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। হামলাকারিদের মামলা পুলিশ আগে রেকর্ড করে। ওই জমি দখলে রাখার সহযোগিতার নামে ওই জনপ্রতিনিধি প্রথমে শ্যামনগরের এক সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউলের মাধ্যমে প্রথমে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কয়েক দফায় ওই জনপ্রতিনিধি, তার কাছের লোক বলে পরিচিত আশরাফ ও মোস্তফা সাড়ে ১৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। মোস্তফা সর্বশেষ একটি হাংঙ গাড়ি কেনার জন্য এক লাখ টাকা নিয়েছেন।

একইভাবে ৫২ শতক জমির মালিক হয়েও অনিয়মের মাধ্যমে তার চেয়ে বেশি জমি দখলকারী বারি মাষ্টারদের কাছ থেকে লুটে নিয়েছেন মোটা অংকের টাকা। কালাম ও সালামের ভাণ্ডার শুন্য হয়ে যাওয়ায় ওই জনপ্রতিনিধি জোরে সোরে ভর করেছেন বারি মাষ্টারের উপর। নির্যাতিতদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা রেকর্ড করিয়েও তাদেরকে বেদখল না করতে পারায় ওই জনপ্রতিনিধির বরাত দিয়ে শনিবার দুপুরে বাধঘাটা কিং স্টার ক্লাবের সভাপতি গোলাম মোস্তফার মোবাইল ফোন থেকে জায়গা খালি করার হুমকি দেওয়া হয়।

রবিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসা সাবিকুন্নাহার ও সাবিনা খাতুন জানান, পুলিশ সুপার মহোদয় পুলিশের উপস্থিতিতে তাদের টিনের চালের ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ভিডিও চিত্র ধৈর্যসহকারে দেখেছেন। এ ছাড়া তাদের অভিযোগ শুনেছেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মোবাইল ফোনে নির্দেশ দেওয়ার পাশপাশি অভিযোগপত্রে সুপারিশও করেছেন।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলিয়াস হোসেন জানান, পুলিশ সুপারের নির্দেশমত তিনি কাজ করে যাবেন।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ১৯, ২০১৮)