স্টাফ রিপোর্টার : রাষ্ট্রের সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে প্রচলিত শতকরা ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে জানতে চাওয়া মতামত প্রস্তুত করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আজ সোমবার (২০ আগস্ট) সংশ্লিষ্ট দফতরে মতামতটি পাঠিয়ে দেয়া হবে। তবে, মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা না রাখার বিষয়ে গণমাধ্যমে কোনো রকম তথ্য জানাবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।

সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার মতামত প্রস্তুত হয়েছে। আজই তা পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু আপনারকে (সাংবাদিকদের) অ্যাড্রেস করব না ‘

মতামতে কী বলেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা বলা যাবে না। তবে -আমি শুধু রায়ের বিষয়ে মতামত দেব। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।’

অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিমত আজ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে জমা দেয়া হতে পারে। মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণে সুপ্রিমকোর্টের পৃথক দুটি রায়ের আলোকে অ্যাটর্নি জেনারেল এ অভিমত দেন বলে জানা গেছে।

সরকারি চাকরিতে বর্তমানে শতকরা ৩০ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রয়েছে। এছাড়া জেলা কোটা, পোষ্য কোটা, নারী কোটা, উপজাতি কোটা পদ্ধতি চালু রয়েছে। এই কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছেন। আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে তাদের দাবি মেনে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের প্রতি আলটিমেটাম দিয়েছেন তারা।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। প্রাথমিকভাবে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরবর্তীতে আরও ৯০ কার্যদিবস সময় পায় এ কমিটি।

কমিটি কোটা নিয়ে সুপ্রিমকোর্টের রায়ের বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেলের অভিমত নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। গত সপ্তাহে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে একটি চিঠি পাঠানোও হয়। জানা যায়, চিঠি পাওয়ার পর অ্যাটর্নি জেনারেল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের দুটি রায় পর্যালোচনা করেন। এরপর তার মতামতের একটি খসড়া তৈরি করেন। রোববার (১৯ আগস্ট) এই খসড়া চূড়ান্ত করা হয় বলে জানা গেছে।

এর মধ্যে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠক শেষে ১৩ আগস্ট নিজ থেকেই কোটা নিয়ে কথা বলেন সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা (কমিটি) প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কমিটির মোটামুটি সুপারিশ হলো- কোটা অলমোস্ট উঠিয়ে দেয়া, মেধাকে প্রাধান্য দেয়া। তবে আদালতের একটা ভারডিক্ট (রায়) আছে- মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা প্রতিপালন করতে হবে, সংরক্ষণ করতে হবে এবং যদি খালি থাকে খালি রাখতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার আদালতের কাছে মতামত চাইবে। যদি আদালত এটাকেও ওকে করে দেয় তাহলে কোটা থাকবে না।’

‘আর যদি আদালত বলেন, ভারডিক্ট দেন যে, না ওই অংশটুকু সংরক্ষিত রাখতে হবে, তাহলে ওই অংশটুকু বাদ দিয়ে বাকি সব উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এটা হলো প্রাথমিক সুপারিশ।’

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধা-সরকারি, প্রতিরক্ষা ও জাতীয়করণ হওয়া প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত নারীদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়।

পরে বিভিন্ন সময়ে এই কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করেছে সরকার। বর্তমানে প্রজাতন্ত্রের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলাগুলোর জন্য কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ৫ শতাংশ কোটা পদ্ধতি সংরক্ষিত।

গত ১১ জুলাই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘আদালতের সিদ্ধান্তে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা সংরক্ষণের আদেশ অগ্রাহ্য করার কোনো সুযোগ নেই। অগ্রাহ্য করা হলে তা আদালত অবমাননার শামিল হবে।’

(ওএস/এসপি/আগস্ট ২০, ২০১৮)