আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ায় প্রতিপক্ষর জায়গা নিজের দখলে নিতে শ্রমিকলীগ নেতার নেতৃত্বে আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড লাগিয়ে এক মুক্তিযোদ্ধার জমি দখল করে দোকান নির্মানের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সদস্যরা জানান, উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের ছোট ডুমুরিয়া (ভালুকশী) বাজারের জেল নং-১৪, এসএ ৮৫নং খতিয়ানের ৬৮নং দাগের ৫৪শতাংশ জমি পৈত্রিক সূত্রে মালিক ওই গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত মো. মোজাম্মেল হক খান ও ভাই মো. সিরাজুল হক খান।

মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল খানের ছেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী তুজাম্মেল হক খান জানান, তাদের পূর্ব পুরুষ ১৯৪৯ সালে একই এলাকার বিপিন বিহারীর ছেলে হরলাল দে ও অন্নদা চরন দে’র কাছ থেকে ৫৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। উত্তরাধিকার সূত্রে ওই জমির মালিক হিসেবে তারা জমি ভোগ দখল করে আসছিলেন। চলতি ভূমি জরিপে ২৭১নং খতিয়ানে ৪৬শতক জমি শুদ্ধভাবে তাদের নামে রেকর্ড হয়। বাকি জায়গা সরকারী রাস্তায় চলে যায়।

উল্লেখিত জমি ভালুকশি বাজারের মধ্যে অবস্থান হওয়ায় গত এক বছর যাবত ওই জমি দখলে নিতে পায়তারা শুরু করেন উপজেলা শ্রমিক লীগ সহ-সভাপতি একই এলাকার বাসিন্দা মো. শাহাদাত হোসেন কাজী। শাহাদাত কাজীর নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী রিন্টু, টিটু ও রিটু গত ৪ আগষ্ট তাদের ভোগ দখলীয় সম্পত্তি দখলে নিতে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। পরের দিন ওই জমিতে দোকান ঘর উত্তোলনের কাজ শুরু করে তারা। তাদের কাজে বাধা দিতে গেলে অকথ্য ভাষায় দখলদাররা গালিগালাজ করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেয়।

নিরূপায় হয়ে ৫আগষ্ট বরিশাল অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মামলা করেন, যার নং ৬৪। বিজ্ঞ আদালত জায়গার উপর স্থিতি অবস্থা জারি করে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার নির্দেশ দেন।
আগৈলঝাড়া থানার এএসআই মো. সরোয়ার বশির জানান, আদালতের নির্দেশ তার উপর হাওলা হলে তিনি ৮ আগষ্ট জমিতে নির্মান কাজ বন্ধ করে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে নোটিশ প্রদান করেন। এরই মধ্যে দলীয় অফিসের নামে ঘর নির্মান কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন ওই শ্রমিক লীগ নেতা।

সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, ছোট ডুমুরিয়া (ভাল্লুকসি) বাজারের পশ্চিম প্রান্তে ব্রিজ সংলগ্ন জমিতে একটি নুতন ঘর উত্তোলনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে, চালায় শুধু টিন লাগানো বাকি । নির্মানাধীন ঘরো দুই পাশে দুটি সাইনবোেের্ড লেখা রয়েছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজিহার ইউনিয়ন ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কার্যালয়’।

অভিযুক্ত শ্রমিকলীগ নেতা মো. শাহাদাত কাজী সাংবাদিকদের জানান, অভিযোগকারীদের দাবি করা ৬৮নং দাগে তিনি কোন স্থাপনা নিমান করছেন না। তিনি সরকারের অধিগ্রহণকরা ৯৫ দাগ ও স্কুলের রেকর্ডিও ৯৬ দাগের অংশে ১৩ ফুট জায়গায় দলীয় কার্যালয় নির্মান করছেন। এটা কারো কোন ব্যক্তিগত জায়গা নয়, স্বার্ধও নয়। খবর পেয়ে রাজিহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক হেমায়েত উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

শাহাদাত কাজী চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেন, যদি তারা প্রমান করতে পারে যে, তাদের জায়গায় ঘর নির্মান হচ্ছে তবে সকল প্রকার দায়, জবাবা ও ক্ষতি পুরণ দেবেন তিনি না হলে অযথা হয়রানীর জন্য তাদের বিচার করারও আহ্বান জানান তিনি।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান, আদালত স্থিতি অবস্থা জারি করে শান্তি শৃংখলা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিকেদন চায়নি। পুলিশ শান্তি শৃংখলা বজায় রাখতে নোটিশ দিয়েছে। তার পরেও সেখানে ঘর তোলার ঘটনায়র বিষয়টি আদালতকে অবহিত করা হয়েছে।

রাজিহার ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ হেমায়েত উদ্দিন জানান, দলের অফিস নির্মানের কথা তার জানা নেই। সেখানে অফিস নির্মানের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সকল ওয়ার্ডে অফিস নির্মানের কথা রয়েছে। স্থানীয় নেতা কর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়ে সুবিধা মত জায়গায় দলের অফিস নির্মান করবেন এমন কথা আছে বলেও জানান তিনি।

উপজেলা আওয়ামী লীগ সমন্বয়ক আবু সালেহ মো. লিটন সেরনিয়াবাত জানান, শাহাদাত কাজী দলের সাইবোর্ড লাগিয়ে বিরোধীয় জায়গা দখল করে দলের সুনাম খুন্ন করেছে। তার এ কাজের দায় দল নেবে না, এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। জায়গার বিরোধ থাকলে তা আদালতই সিদ্ধান্ত দেবেন।

(টিবি/এসপি/আগস্ট ২০, ২০১৮)