২৫ বস্তা চাউল উদ্ধার, দুই দোকান সিলগালা
কাপাসিয়ায় বিজিএফ এর চাউল বিতরণে অনিয়ম, গ্রেফতার ১
কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে গরীবদের জন্য ঈদ উপলক্ষে বরাদ্দকৃত বিজিএফ এর চাউল বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম, মাপে কম এবং কালো বাজারে বিক্রয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বারিষাব ও রায়েদ ইউনিয়নের দুই জায়গা থেকে ২৫ বস্তা চাউল ইউপি মেম্বার ও চকিদার কালো বাজারে বিক্রি করে দেয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাকছুদুল ইসলাম গত রোববার রাতে গিয়াসপুর বাজারে অভিযান চালিয়ে রাশিদ ও আনোয়ারের মুদি দোকান থেকে এসব চাউল উদ্ধার করেছে। দোকানী রাশিদ (৭৫) কে থানা পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দু’টি দোকানই সিলগালা করে দিয়েছেন। পরে আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে রায়েদ ইউনিয়নের শাহজাহান মেম্বারের বাড়ি থেকে ৬ বস্তা চাউল উদ্ধার করেছেন। টের পেয়ে শাহজাহান মেম্বার বাড়ি থেকে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায়।
জানাযায়, উপজেলার ৪ নং বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মমতাজ উদ্দিন ও শাহজাহান চকিদার গত রোববার বিকেলে চাউল গুলো পার্শ্ববর্তী ওই দোকানে বিক্রয় করেন। এর আগে দিনের বেলা জনপ্রতি ২০ কেজি চাউলের পরিবর্তে ১০ কেজি করে বিতরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ছিল।
আটককৃত মুদি দোকানদার রাশিদ জানান, বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদের মমতাজ মেম্বার ও চকিদার শাহজাহান তার কাছে ৯ বস্তা চাউল বিক্রি করে। ৩০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তা চাউলের জন্য তাকে ১৩’শ টাকা করে দেয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাকছুদুল ইসলাম জানান, বারিষাব ইউনিয়নে বিজিএফ এর ৪৮.৯ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জনপ্রতি ২০ কেজি করে বিতরণ করার কথা থাকলেও পরিমানে কম বিতরণ করে মমতাজ মেম্বার ও শাহজাহান চকিদার তা অবৈধ ভাবে বিক্রি করে দেয়। খবর পেয়ে গত রোববার রাতে অভিযান চালিয়ে ১৯ বস্তা চাউল উদ্ধার করা হয়েছে। চাউল ক্রেতা মুদি দোকানী রাশিদ কে আটক করা হয়েছে এবং দু’টি দোকান সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া রায়েদ ইউনিয়নের শাহজাহান মেম্বারের বাড়ি থেকে ৬ বস্তা চাউল উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় শাহজাহান মেম্বার বাড়িতে ছিল না। এব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে।
বারিষাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউজ্জামান বাবলু জানান, তার ইউনিয়নের ২ হাজার ৪ শত ৪৫ জন লোকের জন্য ৪৮.৯ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বারগণ তাদের নিজ দায়িত্বে বিজিএফ এর চাউল বিতরণ করেছেন। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত তিনি তার অফিসে উপস্থিত থেকে চাউল বিতরণ কাজ তদারকি করেছেন বলে তিনি জানান। তবে কিছু চাউল বিতরণের বাকি ছিল, তা সোমবার বিতরণের কথা ছিল। পরে কি হয়েছে তিনি তা জানেন না। জড়িতদের আইনের আওতায় এনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
এ ব্যাপারে প্রকল্প কর্মকর্তা (পিআইও) মোঃ বাকি বিল্লাহ্ জানান, উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নে চাউল বিতরণের কার্যক্রম তদারকির জন্য আলাদা টেক অফিসার রয়েছে। বারিষাব ইউনিয়নে চাউল বিতরণের সময় সংশ্লিষ্ট টেক অফিসার একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী আতিকুর রহমান উপস্থিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি সেখানে ছিলেন না বলে জানান।
রায়েদ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শাহজাহান জানান, তার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে নির্ধারিত ব্যক্তিদের মাঝে জনপ্রতি ২০ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হয়েছে। এলাকার কারো কোন অভিযোগ নেই। তার নিজের ধান ভাঙ্গানো চাউল ঘরের বারান্দায় দেখে কেউ হয়তো শত্রুতাবশত অপপ্রচার দিয়েছেন। যে চাউল জব্দ করা হয়েছে, তা বিজিএফ এর চাউল নয় বলে তিনি দাবী করেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুবকর সিদ্দিক জানান, বারিষাব ইউনিয়নের চাউল কালো বাজারে বিক্রয়ের ঘটনায় টেক অফিসার আতিকুর রহমান বাদী হয়ে মমতাজ মেম্বার, শাহজাহান চকিদার, মুদি দোকানদার রাশিদ ও আনোয়ারকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত ইউনিয়ন পরিষদের বির্তকিত নির্বাচনে উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের সবকটিতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান এবং অধিকাংশ মেম্বার প্রার্থীরা বিজয়ী হয়। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে গড়ে ২ হাজার জন গরীব দুঃস্থদের মাঝে জনপ্রতি ২০ কেজি করে বিজিএফ এর চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি গত শনিবার দিনব্যাপী বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হয়ে গরীব দুঃস্থদের মাঝে চাউল বিতরণ কাজের উদ্বোধণ করেন।
এমপি উদ্বোধণ করে চলে যাবার পর পরই শুরু হয় গরীবের চাউল কালো বাজারে বিক্রি ও কম দেয়ার হরিলুট। জনপ্রতি ২০ কেজি করে দেয়ার কথা থাকলেও গরীব মানুষদের পরিমানে কম দিয়ে অতিরিক্ত চাউল রাতের আধারে কালো বাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক প্রচার ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়ায় গত দুই দিনে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাকছুদুল ইসলাম অভিযান চালিয়ে দুই জায়গা থেকে ২৫ বস্তা চাউল উদ্ধার এবং একজনকে আটক করেছেন।
অভিযানের খবর পেয়ে বিভিন্ন স্থানে কালো বাজারে বিক্রি করা বিজিএফ এর চাউল দ্রুত নিরাপ স্থানে সরিয়ে ফেলেছেন বলে একাধিক সূত্র জানায়।
এদিকে উপজেলার ৮নং তরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান সিকদার জানান, তার ইউনিয়নের ১৯৫০ জনের জন্য ৩৯ মেট্রিক টন চাউল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় এমপি সিমিন হোসেন রিমির উপস্থিতিতে তার এলাকার গরীব দুঃস্থদের মাঝে ২০ কেজি করে চাউল বিতরণ করা হয়।
বরাদ্দকৃত চাউলে ২ টি ওয়ার্ডের লোকজনের চাউল কম পড়ে। ফলে চেয়ারম্যান তার নিজস্ব তহবিল থেকে অতিরিক্ত আরো ৫ মেট্রিক টন চাউল স্থানীয় বাজার থেকে ক্রয় করে বিতরণ করেছেন। এতে তার ২ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে বলে তিনি জানান।
(এসকেডি/এসপি/আগস্ট ২০, ২০১৮)