ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : কিশোর সুমনের সাহকিতায় চলনবিলের নৌকাডুবিতে ১৭ জনের প্রাণ রক্ষা পেয়েছে। চাটমোহরের প্রত্যন্ত এলাকা হান্ডিয়াল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ১৩ বছরের এই ছাত্র সুমন হোসেন। প্রাণবন্ত ও টগবগে এই কিশোর সুমনের সাহসিকতা ও সহায়তার কারণেই শুক্রবারে চলনবিলের নৌকাডুবিতে অনেকেই এখনও জীবিত রয়েছেন।

চাটমোহর পাইকপাড়ায় চলনবিলে এসময় নৌকা চালাচ্ছিল সুমন। সে দেখতে পায়, কিছুটা দূরে একটি বড় ছৈ নৌকার উপরে কয়েকজন লোক মোবাইলে ছবি তুলছে। হঠাৎ করেই তার চোখের সামনের নৌকাটি একদিকে ক্যাত হয়ে ডুবে যেতে থাকে। এই ঘটনা দেখে সে তখন ভয় পেয়ে সরে পড়েনি। এগিয়ে গেছে নিজের ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে। সুমন একাই ১০ জনকে তার ডিঙ্গি নৌকায় তুলে ডাঙায় নিয়ে আসে। অপর ৭ জন তার নৌকা ধরে সাঁতরে এসে জীবন বাঁচায়।
পাইকপাড়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারে সুমনের জন্ম। তার বাবার নাম আবদুস সামাদ। সুমনরা ৪ ভাই। সংসারের টানাপোড়নের মধ্যেও সুমন স্থানীয় স্কুলে লেখাপড়া করছে। তার পরোপকারের এলাকায় কথা বলাবলি হয়। দারিদ্রতার বেড়ি পরা সুমনের এই মানসিকতার জন্য কখনও কখনও বাবা-মায়ের কাছে বকাঝকাও শুনতে হয়। তবে এবার কিছু করে দেখিয়েছে সুমন। এতে সুমনের বাবা-মা ছাড়াও গ্রামবাসীর বুক ভরে উঠেছে গর্বে ।

ঘটনা জানতে পেরে তার এই সাহসিতার পুরস্কার দিয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসন। সুমনের সাহসিকতার স্বীকৃতি হিসেবে পাবনার জেলা প্রশাসক (ডিসি) জসিম উদ্দিন তাকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কার দিয়েছেন। এ টাকা তার পড়াশোনায় সহায়তা করবে বলে মনে করেন ডিসি। সুমন এখন এলাকার গর্ব, বাবা-মায়ের অহংকার।

সাহসিতকার পুরস্কার পেলেও সুমনের মনে চাপা কষ্ট রয়েছে। ৫ জনকে সে বাঁচাতে পারেনি। চোখের সামনে তারা পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে। সুমন জানায়, ওই ৫ জনকে ডাঙ্গায় তুলে আনতে না পারার কথা সে ভুলতে পারছে না। ৫ হাজার টাকা পুরস্কার পাওয়ার পর সে বলল, আমি খুশি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমি পড়াশোনা করতে চাই।

চলনবিলের সাংবাদিক ও সমাজসেবক জাকির হোসেন বলেন, সুমনের জন্য এখন এলাকার সকলেই গর্বিত। তার মতো কিশোরের সাহসিকতায় ১৭ জন মানুষ নতুন জীবন পেয়েছে। সে দরিদ্র পরিবারের সন্তান। অভাবের সংসারে পড়াশুনা চালিয়ে যেতে পারলে সে জীবনে ভালো কিছু করে দেখাবে।

জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, বয়স কম হলেও মানুষের বিপদে কিভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এগিয়ে আসতে হয়, সুনম তা করে দেখিয়ে দিয়েছে। সুমনের সাহসিকতায় মুগ্ধ হয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে ৫ হাজার টাকা শিক্ষা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

(এসকেকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮)