আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিলে ফুটছে নয়নাভিরাম লাল শাপলা। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত বিলাঞ্চলের জলাশয়ে ও নিচু জমিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মো লাল শাপলা।  এই শাপলা মানুষের খাদ্য তালিকায় আবহমানকাল থেকে যুক্ত রয়েছে। কয়েক বছর আগেও বর্ষা এবং শরতের সকালে দিগন্ত জোড়া খাল-বিলে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকত লাল শাপলা।

সকালের দিকে জলাশয়ে চোখ পড়লে রং-বেরংয়ের শাপলার বাহারী রূপ দেখে চোখ জুড়িয়ে যেত। তবে অধিক ফলনের লক্ষ্যে জমিতে অধিক মাত্রায় কীটনাশক প্রয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, খাল-বিল ও জলাশয় ভরাটের কারণে আগৈলঝাড়া উপজেলার বিলাঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে লাল শাপলা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, শাপলা দু’রংয়ের হয়ে থাকে। লাল ও সাদা। এরমধ্যে সাদা ফুল বিশিষ্ট শাপলা সবজি হিসেবে ও লাল রঙ্গের শাপলা ঔষধী গুনে সমৃদ্ধ। শাপলা খুব পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি। সাধারণ শাক-শবজির চেয়ে এর পুষ্টিগুন অনেকে বেশী। শাপলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম। শাপলায় ক্যালসিয়ামের পরিমাণ আলুর চেয়ে সাতগুন বেশি। তিনি আরো জানান, লাল শাপলা চুলকানী ও রক্ত আমাশয়ের জন্য বেশ উপকারী।

প্রতি ১’শ গ্রাম শাপলায় রয়েছে খনিজ পদার্থ ১.৩ গ্রাম, আঁশ ১.১ গ্রাম, খাদ্যপ্রাণ ১৪২ কিলোগ্রাম, ক্যালোরি-প্রোটিন ৩.১ গ্রাম, শর্করা ৩১.৭ গ্রাম, ক্যালশিয়াম ৭৬ মিলিগ্রাম। আবার শাপলার ফল দিয়ে চমৎকার সু-স্বাদু খৈ ভাজা যায়। এই ফলটি গ্রামগঞ্জে ঢ্যাপের খৈ নামে পরিচিত। মাটির নিচের মূল অংশকে (রাউজোম) আঞ্চলিক ভাষায় শালুক বলে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে বিল-ঝিল-হাওড়-বাঁওড়-পুকুরের পানি যখন কমে যায় তখন গ্রাম গঞ্জের লোকজন জমি থেকে শালুক তোলে। শারূক খেতেও বেশ সু-স্বাদু। গ্রাম-গঞ্জে একসময় অভাবী সংসারে শালুক সিদ্ধ করে দিনের খাবার হিসেবেই গ্রহন করা হত। শালুক আমাশয়ের জন্য খুবই উপকারী সবজী। সহজলভ্য হওয়ায় গ্রামের মানুষ প্রতিদিনই শাপলা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ আসছে।

আগৈলঝাড়া উপজেলার দক্ষিন বারপাইকা গ্রামের প্রবীন বাবু লাল বৈদ্য জানান, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে উপজেলার বারপাইকা, আমবৌলা, কদমবাড়ি, পয়সারহাট, আস্কর, নাঘিরপাড়সহ বিভিন্ন জলাশয়ে জলাশয়ে শাপলা ফুল ফুঁটে থাকতো। কিন্তু বর্তমানে আগের মত আর লাল শাপলা দেখা যায় না। তবে আগৈলঝাড়া উপজেলার প্রত্যন্ত বিলাঞ্চল বিশেষ করে সীমান্তবর্তী সাতলা এলাকায় এখনো ফুটছে নয়নাভিরাম লাল শাপলা। বিলের পর বিল এই শাপলা দেখতে নৌকায় চরে বিলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন প্রকৃতি প্রেমীরা। অনেকে আবার শাপলা বিক্রি করে জীবিকাও নির্বাহ করে আসছেন।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮)