কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ার মিরপুরে কৃষকদের কাছে ধানে আক্রান্ত পোকামাকড় চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করার এখন জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো আলোক ফাঁদ। উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে কৃষি বান্ধব এ পদ্ধতিকে স্বাগত জানিয়ে ব্যবহার করছেন মাঝারি-ক্ষুদ্র থেকে প্রান্তিক কৃষকরা।

কৃষকরা নিজেই জমিতে পোকাগুলোর উপস্থিতি দেখতে পারছে। কখন কোন পোকার আক্রমন বেশি হতে পারে বা পোকার উপদ্রব দেখতে পারছে। সে অনুযায়ী কৃষি অফিসের দেওয়া ব্যবস্থা পত্রের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এতে কৃষকরা ধান খেতে পোকার আক্রমণের আগেই কোন ওষুধ প্রয়োগ করতে সক্ষম হচ্ছে। ফলে খুব সহজেই পোকা দমন করছে কৃষকরা। আর কৃষকদের এ পদ্ধতি ব্যবহারে এবং সার্বিক নিদের্শনা দিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস এবং কৃষি কর্মকর্তারা।

চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ২১ হাজার ৭’শ ৫ হেক্টর রোপা আমন জমিতে ফসলের পোকা শনাক্ত এবং আলোক ফাঁদ পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ব্যপক বিস্তারের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস নিয়েছে বিশেষ
কর্মসূচি।

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা বিভক্ত ৪০টি কৃষি ব্লকে একযোগে আলোক ফাঁদ স্থাপন করা হয়। ক্ষতিকর পোকা দেখে ব্যবস্থাপনা পত্র প্রদান করে কৃষি
কর্মকর্তাগণ। এসময় প্রায় ৫ শতাধিক কৃষক এ পদ্ধতির ব্যবহার এবং সুফল সম্পর্কে জানতে পারে। ফসলের ক্ষতিকর ও পোকা মাকড় সম্পর্কে জানতে পেরেছে।

উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম জানান, আমরা মনে করতাম ফসলে পোকা থাকলেই তা ক্ষতি করে। তাদের মেরে ফেলতে হবে। তবে আজকে এই আলোক ফাঁদের মাধ্যমে জানতে পারলাম জমিতে উপকারী পোকাও থাকে। কখন পোকা দমন করতে হবে। আমার জমিতে কোন পোকা
বেশি (উপকারী না অপকারী) তা আমি নিজেই পরীক্ষা করতে পারবো। একই এলাকার কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারবো কোন প্রকার উপদ্রব বেশি। এতে সে অনুযায়ী আমরা ওষুধ দিতে পারবো।

তিনি আরো জানান, এর খরচও কম। আর বাড়ীতেই তৈরী করা যায়। তিনটা খুটি একসাথে বেধে হ্যারিকেনের মতো করে সাবান গুড়া মিশ্রিত পানির পাত্রের উপর আলোর উৎস হিসাবে বৈদ্যুতিক বাল্ব স্থাপন করে ধান ক্ষেতের চার পাশে আইল হতে একটু দূরে স্থাপন করে পোকা আলোতে আকর্ষিত হয়ে সাবান গুলা পানিতে আটকে যায়। যার ফলে পোকার উপপস্থিতি জানা যায় এভাবেই আলোক ফাঁদের মাধ্যমে পোকা জরিপ করা হয় বলে জানায় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেন।

মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমেশ চন্দ্র ঘোষ জানান, আমরা সোমবার উপজেলার ৪০ টি ব্লকে একযোগে এ আলোক ফাঁদ স্থাপন করি। এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় কৃষকদের নিয়ে আমরা সরেজমিনে তা পরিদর্শন করি। এসময় ধানের জমিতে উপকারী ও ক্ষতিকর পোকা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে ক্ষতিকর পোকার ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

তিনি আরো জানান, আলোক ফাঁদে আকর্ষীত হয়ে যে সকল পোকা এসেছে তার মধ্যে ধানের শত্রু পোকা। এছাড়া সবুজ পাতা ফড়িং, সাদা পাতা ফড়িং উপস্থিতি পাওয়া গেছে যেটি নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রয়েছে। এটি একটি সহজলভ্য পদ্ধতি। কৃষকরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে খুব সহজেই ধানের খেতে পোকামাকড়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারে। এছাড়া মিরপুরে আলোক ফাঁদ ব্যবহারে কৃষকরা বেশ
আগ্রহ দেখিয়েছে। ইতি মধ্যেই বেশ কিছু ব্লকে কৃষকরা এ আলোক ফাঁদ ব্যবহার করছে।

(কেকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৮)