হাকিম মাহি


ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনের বিপরীত পাশে এ কলেজটি অবস্থিত। ব্যস্ততম রাস্তায় এভাবে প্রতিদিন অভিভাবকরা দুই শতাধিক গাড়ি নিয়ে রাস্তা বন্ধ করে রাখেন।

শুধু এ কলেজটি নয়, ঢাকার প্রায় সবগুলো স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী বা তাদের অভিভাবকদের গাড়ি রাখার চরিত্র নীতিগতভাবে একই।

এই যদি হয় শিক্ষিত ও সচেতন নামধারী মানুষের কাজ, তাহলে এই দেশ, এই নগরী পৃথিবীর নিকৃষ্টতম বলে বিবেচিত তো হবেই।

এ ছাত্রদের অভিভাবক কারা জানেন! দেশের বড় বড় সচিব, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর ও সংসদ সদস্যরা। গাড়ি আপনার, আপনি বড়লোক, তাই কোটি টাকার এসি গাড়ি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তা বন্ধ করে রাখছেন।

কেন? সাধারণ মানুষ, অসুস্থ মানুষ যদি প্রশ্ন করে, রাস্তা কি আপনার বাবার, এটা বন্ধ করে রাখছেন? ক্ষমতাশালী আপনি, আপনাকে ঠেকায় কে! একবার ভেবে দেখুন, যদি সাধারণ মানুষ পারতো, রাস্তায় ফেলে আপনাকে চড়াইয়া দাঁত ফেলে দিতো।

এত মানুষকে জ্যামে রেখে, কষ্ট দিয়ে আপনার বে-আইনিভাবে রাখা গাড়িতে যদি আপনার সন্তান চড়ে, তাহলে কি সে মানুষ হবে? এতো মানুষের অভিশাপ নিয়ে আপনার সন্তান কি ভালো থাকবে?

মনে রাখবেন, এ সন্তানরাই একদিন পড়ালেখা করে দেশের বড় দুর্নীতিবাজ হবে। গরীব মারার কসাই হবে। আর প্রতিবছর আমার আপনার দেশ বিশ্বে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হবে। প্রাণের ঢাকা বিশ্বের মধ্যে প্রথম বসবাসের অযোগ্য বলে স্বীকৃতি পাবে। আপনি যদি মানুষ হন, বিবেকবান হন, তাহলে ভাববেন, এটা বড় লজ্জার, ঘৃণার।

পাবলিক বাসে চড়ুন, তাহলে রাস্তার জ্যাম যেমন কমবে, তেমনি আপনার সন্তান জনসচেতন হবে। গরীব বান্ধব হবে। সে দেখবে গরীব মানুষ কীভাবে জীবনযাপন করে! বড় হয়ে মানুষের সেবা করবে।

জেনে রাখবেন, আপনার এ ছোট্ট সন্তান কাদামাটির মতো। যেভাবে যে শিক্ষা দিবেন, সেভাবেই গড়ে উঠবে।

এ সমস্যা সমাধানে মূলত সদিচ্ছার অভাব রয়েছে অভিভাবকদের, প্রশাসনের এবং প্রতিষ্ঠানের। অভিভাবকরা চাইলে গাড়ি বাসায় রেখে গণ পরিবহন ব্যবহার করতে পারেন। প্রশাসন চাইলে ট্রাফিক আইনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। আর প্রতিষ্ঠান চাইলে গাড়ি পার্কিং এর জন্য ব্যবস্থা করতে পারেন বা সম্ভব না হলে গাড়ি আনা নিষিদ্ধও করতে পারেন।

আসুন, নিজে সচেতন হই, অন্যকে সচেতন করি। তাহলে আমাদের এই সোনার বাংলা আসল সোনায় পরিণত হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

(ওএস/অ/সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৮)