গোলাম আনোয়ার সম্রাট


আমরা কি চিন্তা করি নাকি দুশ্চিন্তা করি ? নাকি দুটোই করি ? আমরা চিন্তা ও দুশ্চিন্তা দুটোই করি। অনেক সময় আমরা চিন্তা করতে বাধ্য হই, আবার দুশ্চিন্তা করতেও বাধ্য হই।

মানব জনম যতদিন আছে ততদিন আমরা চিন্তা ও দুশ্চিন্তা করতে বাধ্য। বলা চলে, চিন্তা ও দুশ্চিন্তা হলো আমাদের ইমোশন বা আবেগের একটা অংশ। ইমোশন বা আবেগ হলো সাইকোলজি বা মনের একটা পার্ট। মানুষের জীবনের অন্যতম অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো সাইকোলজি বা মন। আমাদের জীবন নিয়ে আমাদের চিন্তা ও দুশ্চিন্তা করতে হয়। জীবন যতদিন চিন্তা ও দুশ্চিন্তা ততদিন।

চিন্তা আমরা দিনের প্রতিটা মুহূর্তেই করে থাকি। আমরা কোন কাজ করার পূর্বে আমাদের মনে যে বোধটা জন্মানোর চেষ্টা করি সেটাই কাজটি নিয়ে চিন্তা করা। যেমন ধরুন, আপনি অফিসে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হচ্ছেন। বাসার নিচে এসে জানতে পারলেন রাস্তায় জ্যাম। আপনি গাড়ি অথবা রিক্সা বা হেঁটে অফিস যেতে পারবেন। এখন আপনি কিভাবে যাবেন সেই মনের ভাবনাগুলো যখন আপনার মাথায় ডিকোড হয় সেটা হলো চিন্তা। এখান থেকে আপনি চুজ করে নিলেন আপনি হেঁটে যাবেন। এই চুজ করার জন্য মন থেকে যেসব ভাবনা মাথায় ডিকোড করলেন সেটা হলো চিন্তা।

বলা চলে চিন্তা হলো, 'ইটস লাইক এ প্ল্যান বিফোর টাচ দ্যা টাস্ক'।

বিশেষ কিছু ঘটনাক্রমে আমাদের দুশ্চিন্তা হয়ে থাকে। অপ্রত্যাশিত কোন সংবাদ পাওয়ার পর মুহূর্তে দুশ্চিন্তা জন্ম নিতে পারে। আবার অপ্রত্যাশিত কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাময় পূর্ব মুহূর্তে দুশ্চিন্তা জন্ম নিতে পারে। যেমন, আপনি আপনার পরিবার নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। আগামী দুই দিনের মধ্যে আপনাকে বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। আপনি যদি বাসা ভাড়া পরিশোধ করতে না পারেন তবে বাড়ির মালিক আপনাকে বাসা থেকে বের করে দিবে। কিন্তু আপনার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। ভাড়া পরিশোধ করার মত টাকা আপনার হাতে নেই। এই অবস্থায় আপনি আপনার পরিবার নিয়ে কি করবেন! এরকম বিপদের মুহূর্তে আপনার মন থেকে যেসব ভাবনা মাথায় ডিকোড হচ্ছে তা হলো দুশ্চিন্তা।

চিন্তা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে ফারাক। চিন্তা ও দুশ্চিন্তা মানুষের জীবনে আলাদা আলাদা প্রভাব ফেলে। আবার অনেক সময় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সহায়ক হতে পারে চিন্তা। কিন্তু চিন্তার সহায়ক দুশ্চিন্তা হতে পারে না। মানুষ কোন বিপদে পরার পূর্ব বা পর মুহূর্তে দুশ্চিন্তা জন্ম নেয়। সেই দুশ্চিন্তা থেকে চিন্তা দ্বারা মুক্তি পাওয়া যায়। কেউ যখন কোন বিপদে পড়ে তখন তার উচিত চিন্তা করা। সে যে সমস্যা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য চিন্তা করতে হবে। চিন্তা করেই উপযুক্ত সমাধান বের হবে। চিন্তা না করলে সমাধান বের করা সম্ভব হবে না। আর সমাধান বের করতে পারলে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

আমরা অনেক সময় দেখি, কেউ একজন বিপদে পড়লে অন্যজন তাকে চিন্তা করতে নিষেধ করে। চিন্তা করতে নিষেধ করা যাবে না। বরং বলা উচিৎ, যে বিপদে আছে তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে উপযুক্ত সমাধান বের করা। আর চিন্তা করে যদি সমাধান বের করা যায় তবে হতাশা ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি মিলবে।

আবারও বলতে হয়। চিন্তা ও দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে ফারাক। তবে চিন্তা হতে পারে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির সহায়ক। চিন্তা দ্বারা বিপদ, হতাশা, দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। চিন্তাহীন মানুষ যেন মৃত মানুষ।

লেখক : শিক্ষার্থী, জার্নালিজম, কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।