গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার অধিকাংশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান একেবারেই নাজুক, ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যহারে কম ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। শিক্ষকদের উপস্থিতি দেরীতে হলেও তাড়াতাড়ি গমন এবং অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুপুর দু'টার মধ্যে ছুটি দেয়ার ফলে শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবরে পড়ে বেহাল দশা দেখা দেয়ায় হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব থাকায় এ উপজেলায় শিক্ষার এ বেহাল দশা বলে সচেতন এলাকাবাসী, অভিভাবক ও পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। 

তবে হাতেগোনা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিসহ শিক্ষার মান বেশ সন্তোষজনক ও প্রশংসার দাবীদার।

একাধিক সচেতন এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ৪ সেপ্টেম্বর মঙ্লবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গেলে এসব নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারীতার সত্যাতা পাওয়া যায়।
দুপুর ২টার দিকে উপজেলার ৪ নং বরিশাল ইউনিয়নের সাবদিন উত্তর পাড়া নব-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ মিয়াকে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। পরবর্তিতে প্রধান শিক্ষক'কে আমলাগাছি একটি চা'য়ের দোকানে ২ টা ৩০ মিনিটে তাকে পাওয়া যায়। স্কুল ছেড়ে আপনি আমলাগাছিতে কেনো? জানতে চাওয়া হলে তিনি উপজেলা পলাশবাড়ীতে যাবেন বলে জানান।

ক্লাস ফাঁকি দিয়ে চায়ের দোকানে অহেতুক সময় ক্ষেপন ও পলাশবাড়ী অভিমূখে যাওয়ার প্রাক্কালে সাংবাদিক আসায় তিনি রুট পরিবর্তন করে এবং বিদ্যালয়ের অন্য সহকারি শিক্ষক মোবাইল ফোনে বিদ্যালয়ে সাংবাদিক উপস্থিতি অবগত করলে প্রধান শিক্ষক তড়ি-ঘড়ি করে মোটরবাইক যোগে বিদ্যালয় অভিমূখে ছুটতে থাকেন। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম এবং শিক্ষার মান খারাপ ও শিক্ষদের দেরীতে আগমন ও তাড়াতাড়ি গমন করায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার মান ভেস্তে যেতে বসেছে।

এছাড়া আমলাগাছি ২ নং নব- সরকারি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক শফিউল আলমকে পোনে ৩ টার সময় বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। এ সময় বিদ্যালয়ে সাংবাদিকগন উপস্থিত হলে সহকারী শিক্ষক শফিকুল ইসলাম প্রধান শিক্ষককে মুঠোফোনে বিদ্যালয়ে আনার ব্যাপারে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। এ বিদ্যালয়ে ৩'য় শ্রেণিতে ১১ জন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ জন, ৪'র্থ শ্রেণি তে ১১ জনের মধ্যে ৯ জন ও ৫'ম শ্রেণিতে ১০ জনের মধ্যে মাত্র ৬ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিত পাওয়া যায় । এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান একেবারে নিম্ন পর্যায়ে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেরীতে স্কুলে আগমন ও তাড়াতাড়ি গমন করেন বলে অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায় ।

পার্শ্ববর্তী ঘোড়াবান্ধা পশ্চিম পাড়া নব- সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাড়ে ৩ টার সময় উক্ত বিদ্যালয় পরিদর্শনে যাওয়ার পথিমধ্যে প্রধান শিক্ষক শামিম আরা শাম্মীকে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে দেখা যায়। এ বিদ্যালয়ের অবস্থাও ঐ দু'টি বিদ্যালয়ের মতই।

অপরদিক, মালিয়ানদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলাদা চিত্র দেখতে পাওয়া যায়। এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে ভালো এবং শিক্ষকদের মনোযোগের সাথে পাঠদান দিতে দেখা যায় এবং শিক্ষার গুণগতমানও সন্তোষজনক।পোনে ৪ টার সময় ৫ ম শ্রেণিতে একজন শিক্ষিকাকে পাঠদান দিতে দেখা যায়৷

শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে, যেসব শিক্ষকের বাড়ি সংলগ্ন বিদ্যালয় রয়েছে ঐ সব শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করলে শিক্ষার গুনগতমাণ বাড়বে বলে সচেতনমহল মনে করেন। এ ব্যাপারে ঐ মহলটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারিসহ জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

(এসআইআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮)