স্টাফ রিপোর্টার : জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার বিচারে কারাগারে আদালত স্থাপন নিয়ে বিএনপি আইনজীবীরা ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেন, হাইকোর্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনানুগভাবে পরিস্থিতি বিবেচনায় যেকোনো জায়গায় বিশেষ আদালত বসতে পারে।

বুধবার সকালে পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বসে আদালত। গত ১ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় শুনানির পর ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অসুস্থ বলে তিনি আর আদালতে যাননি এবং এ কারণে শুনানি শুরু করা যায়নি।

আর দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পর পুরান ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ কারাগারেই নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয় মঙ্গলবার। আর এই সিদ্ধান্তকে সংবিধানবিরোধী দাবি করেছে বিএনপি।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংবিধানের ৩৫(৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিচার প্রকাশ্যে হতে হবে। এখানে ক্যামেরা ট্রায়াল করার সুযোগ নেই।

বুধবার সুপ্রিম কোর্টে নিজের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল। বলেন, ‘তাতে কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি। আদালত স্থাপনের ব্যাপারে সরকার যে গেজেট প্রকাশ করেছে তা আইন মোতাবেক হয়েছে।’

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কথা উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলখানার পাশের ভবনকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তখন সেটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল কিন্তু লাভ হয়নি। কাজেই আমার মনে হয়, এটা সঠিকভাবে হয়েছে এবং এতে কোনো আইন লঙ্ঘন হয়নি।’

খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছে কি না জানতে চাইলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘অবশ্যই ভুল ব্যাখ্যা দিচ্ছেন। জেলের ভেতরে বিচার হলেও সেখানে তার আইনজীবীরা যাবেন, রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা যাবেন। যারা মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তারাও যাবেন। সরকার তো এখানে বলেননি যে এটা ক্যামেরা ট্রায়াল হবে।’

খালেদা জিয়ার বিচারের দিন আদালতে আইনজীবীদের পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মীরা যেতে পেরেছেন অবাধে। বিষয়টির উল্লেখ করে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা কোনো গোপন বিচার হয়নি।

‘হাইকোর্টের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আইনানুগভাবে পরিস্থিতি বিবেচনায় যে কোনো জায়গায় বিশেষ আদালত বসতে পারে।’

রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি কক্ষকে আদালত ঘোষণা করে গতকাল মঙ্গলবার গেজেট প্রকাশ করে আইন মন্ত্রণালয়।

গেজেটে বলা হয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালীন এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে, তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের কক্ষটিকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়েছে।

গেজেট অনুসারে কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষে আজ বুধবার প্রথম দিনের মতো আদালত বসে। খালেদা জিয়া হুইলচেয়ারে করে আদালতে হাজির হন। তবে তার কোনো আইনজীবী সেখানে যাননি।

আধা ঘণ্টার কম সময় আদালতের কার্যক্রম চলার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা না থাকায় শুনানি মুলতবি করে আগামী ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর নতুন তারিখ ঠিক করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আখতারুজ্জামান।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার কার্যক্রম এত দিন চলছিল রাজধানীর বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদরাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালতে। খালেদা জিয়া ‘অসুস্থ’জানিয়ে একাধিকবার তাকে আদালতে হাজির করেনি কারা কর্তৃপক্ষ।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড পাওয়া খালেদা জিয়া বর্তমানে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী।

যেহেতে খালেদা জিয়াকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে না তাই কারাগারে আদালত স্থাপনের জন্য আইন মন্ত্রনালয়ে আবেদন করা হয় বলে মঙ্গলবার জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৮)