সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে চলছে নানামুখি আলোচনা সমালোচনা। চলছে নেতাকর্মীদের মাঝে চুল ছেড়া বিশ্লেষণ। তবে কার ভাগ্যে শিকে ছিড়ে তা কেউই এখনও বলতে পারছেন না। সাম্ভাব্য সব প্রার্থীরাই দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের চূড়ান্তভাবে আশ্বস্থ্য করছেন তিনিই পাবেন মনোনয়ন। যদি ভাগ্যের তেমন কোন ফের না ঘটে। 

নেত্রকোণা- ৩ কেন্দুয়া আটপাড়া নির্বাচনী এলাকায় অধিকাংশ তৃণমূল নেতাকর্মীদের মুখে মুখে এখন দাবী ওঠেছে, এ আসনের নতুন মুখের প্রার্থী না হলে আগামী নির্বাচনে নৌকার হবে ভরাডুবি। আবার কেউ কেউ ভিন্ন মতও প্রকাশ করছেন।

অধিকাংশ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বলছেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বর্তমান সরকারের আমলেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু কেন্দুয়া উপজেলার ১৩ ইউনিয়ন পরিষদে নৌকা মার্কার প্রার্থী হলেও ১০টি ইউনিয়নেই নৌকার প্রার্থী হেরে যান।

এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান পৌরসভার মেয়র ও নেত্রকোনা জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মো: আসাদুল হক ভূঞা খুব অল্প সংখ্যক ভোটের ব্যবধানে বি.এন.পির মনোনীত প্রার্থী বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বি.এন.পির সাধারন সম্পাদক মো: দেলোয়ার হোসেন ভূঞা দুলালের সঙ্গে হেরে যান। তৃণমূল নেতাকর্মী ও সমর্থকরা দাবি করেন, আসাদুল হক ভূঞা একজন জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী হলেও দলীয় নেতাকর্মীদের নানা প্রকার কূট কৌশল এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের সমন্বয়হীনতার কারণেই হেরে যেতে হয়েছে। বিগত দিনের এসব নির্বাচনের বিষয়কে সামনে তুলে ধরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা জোরালোভাবেই দাবী তুলছেন, আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে চাই গ্রহণযোগ্য নতুন মুখ, যিনি হবেন সকলের গ্রহণযোগ্য প্রার্থী।

বলাইশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, নতুন মুখের প্রার্থী না হলে নৌকার নির্বাচন নিয়ে আমাদেরকে সংকটে পড়তে হবে। তিনি বলেন, সব নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দাবী আগামী নির্বাচনে চাই নতুন মুখ। ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামীলীগের বর্তমান সদস্য ডা. মো: নজরুল ইসলাম, সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ নেতা মো: ফজলুর রহমান, রিগান আহমেদ মামুন, বলাইশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আজিজুল হক মেম্বার, বলাইশিমুল ইউনিয়ন তিন নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুল হক, ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের প্রাক্তন সভাপতি আবু জিন্নাহ, এবং চারবারের নির্বাচিত ইউপি সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা হায়দার আহমেদ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক ছাত্রনেতা আতিকুর রহমান তালুকদার চুন্নু, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি আলী আকবর, আইন বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল হাই তারা মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী আবুল বাদশা পুতুল মিয়া, আওয়ামীলীগ নেতা আফাজ উদ্দিন, গোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের জমিদাতা সদস্য আওয়ামীলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ও আওয়ামীলীগ নেতা মাহবুব ইয়ার মন্ডল বলেন, আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চাই গ্রহণযোগ্য নতুন মুখ।

তারা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, নতুন মুখের প্রার্থী না হলে নৌকার হবে ভরাডুবি। যেমনটি হয়েছে বলাইশিমুল ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, এই ইউনিয়নের কচন্দারা গ্রামে এম.পি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর জন্ম স্থান কিন্তু এই ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেই আওয়ামীলীগের প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: ফজলুর রহমান বি.এন.পির প্রার্থী আলী আকবর তালুকদার মল্লিকের সঙ্গে হেরে যান। তিনি বলেন, নৌকা নিয়ে আমরা আর হারতে চাইনা। চাই আমরা বিজয়ী হতে। এজন্যেই প্রার্থী চাই নতুন মুখের।

নতুন গ্রহণযোগ্য প্রার্থীর পক্ষে মতামত ব্যাক্ত করছেন, মোজাফরপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: দিদারুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক মাহমুদ চৌধুরী, পাইকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: বদরুল ইসলাম, গন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম সঞ্জু মিয়া, সাধারন সম্পাদক এডভোকেট জহিরুল ইসলাম সুমন, মাসকা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান খান পাঠান, সাধারন সম্পাদক আব্দুল বারী ভূঞা বকুল, দলপা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান, আশুজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি মঞ্জুর আলী, নওপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সুমন, কান্দিউড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুসলিম উদ্দিন, সাধারন সম্পদাক আব্দুল আউয়াল, রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি এডভোকেট নূরুল আলম, সাধারন সম্পাদক, আবু বক্কর সিদ্দিক, গড়াডোবা ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক ফজলুল হক সেলিম, সান্দিকোনা ইউনিয়ন আওমীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক কামরুজ্জামান কাজল।

তবে এর ভিন্ন মত প্রকাশ করে বলাইশিমুল ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক ডা. কামরুজ্জামান বলছেন, আগামী নির্বাচনে চাই ভালো প্রার্থী, যে প্রার্থী জনগনের জন্য কাজ করে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, জঙ্গিবাদ, মাদক, জুয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান আমরা সেরকম প্রার্থীই চাই। নতুনের একটা উদ্দিপনা আছে, তবে নতুন প্রার্থী না হলেই যে নৌকার ভরাডুবি হবে তাতে আমি একমত না একথা বলেন পাইকুড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক আজিজুর রহমান আরজু। তিনি চান সৎ জনপ্রিয় প্রার্থী। দলপা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জনতা মহা বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ তাজিম উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে আমি আমার মতামত পরে জানাব।

এদিকে কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামলীগের সভাপতি গীতিকার মো: নূরুল ইসলাম বিভিন্ন সভা সমাবেশে দাবী তুলে আসছেন, আমরা চাই নতুন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। যাকে নিয়ে দলকে ও দলের নেতাকর্মীদেরকে সু-সংগঠিত করা যাবে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও মোজাফরপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, আমি জনগনের পক্ষে নতুন প্রার্থীর পক্ষে। পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: কামরুল হাসান ভূঞা বলেন, তৃণমূল নেতাকর্মীদের দাবী যিনি আন্দোলন সংগ্রামে পরীক্ষিত সৈনিক, আধুনিক ও বিজ্ঞান মনষ্ক, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের নতুন মুখ চাই আমরা। পৌর আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা শাহজাহান তালুকদার বলেন, আমি তৃণমূল নেতাকর্মীদের পক্ষে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে চাই রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্য নতুন মুখ।

অপর দিকে পৌর আওয়ামলীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক ছাত্র নেতা মাজহারুল ইসলাম জুয়েল বলেন, প্রার্থীর বিষয়ে আমাকে ভেবে চিন্তেই বলতে হবে। এবিষয়ে আমার মতামত পরে জানাব। গন্ডা ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম সঞ্জু মিয়া বলেন, আগামী নির্বাচন দলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং নির্বাচন। এই নির্বাচনে গ্রহণযোগ্য কোন নতুন মুখ প্রার্থী না হলে আমাদেরকে সংকটে পড়তে হবে।

আমরা তৃণমূলের হাজার হাজার নেতাকর্মীর পক্ষে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার নিকট দাবী করে বলছি, তিনি যেন নির্বাচনী এলাকার তৃণমূলের নেতাকর্মী ও জনগনের মতামতের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেন গ্রহণ যোগ্য নতুন মুখ। এ ব্যাপারে নেত্রকোনা-৩ আসনের বর্তমান এম.পি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টুর সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাত ৮.৩০ মিনিটে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সাংবাদিকদের বলেন, তৃণমূলে নেতাকর্মীদের দাবীর প্রেক্ষিতে নেত্রী যদি নতুন কোন মুখের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেন সে ক্ষেত্রে আমিও তাকে স্বাগত জানাব।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৬, ২০১৮)