আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : নগরীর কোতোয়ালী মডেল থানার দুই এএসআই ৩৩ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে এখন তা অস্বীকার করছেন। সেই  সাথে ভাঙলেন গোপন চুক্তি। কথা ছিল-মাদকসহ আটক দুই যুবককে নরমাল ধারায় আদালতে সোর্পদ করা হবে। কিন্তু টাকা নেয়ার পর ভোলপাল্টে চার পিস ইয়াবাসহ আটক দুই সেবনকারীকে ১৪ পিস ইয়াবা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। বিষয়টি শুক্রবার দুপুরে মিডিয়া পাড়ায় ছড়িয়ে পরলে পুলিশ প্রসাশনের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

সূত্রমতে, নগরীর বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মুখ থেকে গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে কোতোয়ালী মডেল থানার এএসআই বিধান ও সুজন সন্দেহজনকভাবে রাব্বি ও আশিক নামের দুইজনকে আটক করে। পরে তাদের দেহ তল্লাশী করে চার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। আটক দুই যুবক স্বীকার করেছেন তারা সেবনকারী। আশপাশের একটি এলাকা থেকে তারা ইয়াবা ক্রয় করে বাড়িতে ফিরছিলো। দুই পুলিশ অফিসার তাৎক্ষণিক আটক যুবকদের সেলফোন দিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করে।

অভিযোগ রয়েছে, তারা একটি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। শর্ত ছিল, সবমিলিয়ে ৩৩ হাজার টাকা দেয়া হলে তাদেরকে সেবনকারী হিসেবে আদালতে সোপর্দ করা হবে। নতুবা মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে আটক দেখানো ছাড়া উপায় নেই। ওই দুই যুবকের পরিবারের দাবি, দুই পুলিশ অফিসার যে ভাষায় কথা বলেছেন তাতে তারা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ওই রাতেই এএসআই বিধানের হাতে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেন।

এসময় এএসআই সুজনও পাশে ছিলেন। সকালে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, কথা অনুযায়ী কাজ হচ্ছে। পরে আদালতে নথি উত্তোলন করে দেখা যায় আটকের সময় জব্দকৃত চার পিসের পরিবর্তে ১৪ পিস ইয়াবা দিয়ে উভয়কে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আটক রাব্বির এক ঘনিষ্ঠ স্বজন জানান, আটক দুইজনকে থানা অভ্যন্তরে নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ড করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তি দেখানো হয় যে, তারা মাদক ব্যবসায়ী এবং ১৪পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে। বিষয়টি মিডিয়া কর্মীদের কাছে পৌঁছানোর পর ওই দুই পুলিশ অফিসারের সাথে যোগাযোগ করা হলে এই তথ্য বানোয়াট বলে দাবি করা হয়েছে। একপর্যায়ে অর্থ নেয়ার প্রসঙ্গ তুললে বিস্ময় প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে আটককৃতদের পারিবারিকভাবে ওই দুই পুলিশ অফিসারের সাথে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য হুমকি প্রদর্শন করা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আটককৃতরা মাদক ব্যবসায়ী নয়; সেবনকারী। চুক্তি অনুযায়ী তাদের দুইজনকে ছেড়ে দিতে চেয়েছিল ওই দুই পুলিশ অফিসার। কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম পিপিএম আপোষ না করায় ওই দুই এএসআই তাদের উদ্দেশ্য সফল করতে পারেননি। আবার অর্থ ফেরত দিতেও রাজি হয়নি। একপর্যায়ে আটককৃতদের কাছ থেকে চার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হলেও তাদের ১৪ পিস ইয়াবাসহ আটক দেখিয়ে এসআই শামীম এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদি হন।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ অভিযোগ শোনা মাত্র ক্ষিপ্ত হয়ে মাদকের সাথে কাউকে আপোষ না করার জন্য আহবান করে ঘটনার সঠিক সংবাদ প্রকাশের জন্য মিডিয়া কর্মীদের আহবান করেন।

পুলিশের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, নুরুল ইসলাম পিপিএম কোতোয়ালী মডেল থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থানার ঘুষ বাণিজ্য আগের চেয়ে অনেকটা কমে যায়। ফলে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ অফিসাররা এখন মাদক সেবনকারীদের আটক করে চুক্তি বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন।

(টিবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৮)