রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের তুজুলপুর হাইস্কুল মাঠে সার্কাসের অনুমোদন নিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় আগামিকাল সোমবার ধেকে আবারো রক্তচোষা রমরমা জুয়ার আসর শুরু হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেও কোন লাভ হচ্ছে না।

তুজুলপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি আলী হোসেন জানান, তুজুলপুর কৃষি ক্লাবের আয়োজনে তাদের মাঠে গত ১৭ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ গোল্ড সার্কাসের নামে রাতভর ওয়ান টেন ও ক্যাসিনো জুয়া চালানো হয়।

আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে মাঠের কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তবে কয়েকদিন পর প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম তাকে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অনুরোধে সার্কাসের জন্য শর্তসাপেক্ষে মাঠ ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হয়। সার্কাসের আড়ালে রক্তচোষা জুয়া চললেও পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। কারণ হিসেবে পুলিশকে ম্যানেজ করে ও জেলা প্রশাসকের এলআর ফাণ্ডে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ও জুয়া চালানো হচ্ছে বলে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে প্রচার দেওয়া হয়।

একপর্যায়ে ৩১ জুলাই সার্কাস শেষ হলেও ম্যানেজার ও জুয়ার বোর্ডের পরিচালক শফিকুল প্যাণ্ডেল খোলেননি। ফলে সোয়া একমাস ব্যাপি শিক্ষার্থীরা মাঠে খেলা করতে পারেনি। আবারো সার্কাসের নেপথ্যে জুয়ার বসতে যাচ্ছে এমন খবর পেয়ে তিনিসহ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য ও অভিভাবকরা মিলে গত ২৮ আগষ্ট সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেন। এরপরও আগামি সোমবার থেকে আবারো ইয়ারব হোসেনের নেতৃত্বে তুজুলপুর হাইস্কুল মাঠে শুরু হতে যাচ্ছে সার্কাসের নামে জুয়ার আসর।

স্থানীয়রা জানান,সার্কাস ও জুয়াসহ সমগ্র কর্ম পরিকল্পনা দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন সার্কাস আয়োজক কমিটির সভাপতি ইয়ারব হোসেন, সাধারণ সম্পাদক গোলাম রহমান, কোষাধ্যক্ষ সুদে ফারুক, ইয়ারব হোসেনের ভাগ্নে ট্যাপা মনি, রানা, চাঁদাবাজ জাহাঙ্গীর, কবিরুলসহ কয়েকজন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পার না হওয়া ইয়ারব হোসেন কৃষি ক্লাবের নামে প্রধানমন্ত্রির কাছ থেকে পুরষ্কার গ্রহণ করতে যাচ্ছেন সাতক্ষীরার একটি বহুল প্রচলিত দৈনিকে এমন অসত্য খবর ছাপিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর ঝাউডাঙার কুখ্যাত চোরাচালানি আজাদের নুহা গাড়ি নিয়ে তাকে সামনে বসিয়ে দু’ সাংবাদিকসহ ঢাকায় যেয়ে সুন্দনরবন হোটেলে ওঠেন।

১৬ সেপ্টেম্বর তিনি বনও পরিবেশ মন্ত্রির হাত থেকে ক্রেস্ট পান। তিন দিনের হোটেল খরচের জন্য তিনি ঝাউডাঙা এলাকার লাইসেন্সধারী মদ বিক্রেতা রাজ্যেশ্বর ঘোষ ও রণজিৎ দাসের কাছ থেকে চাদা নেন ৩০ হাজার টাকা। এ ছাড়াও পুরষ্কার আনতে যাওয়ার কথা বলে কয়েকজন ব্যবসায়ির কাছ থেকে লুটে নিয়েছেন কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকা। সেই ইয়ারব প্রধানমন্ত্রির কাছের লোক বলে দাবি করে তাকে কেউ কিছু করতে পারবে না বলে সোমবার থেকে সার্কাসের নামে জুয়া চালাতে যাচ্ছেন।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ গোল্ড সার্কাসের ম্যানেজার ও জুয়ার বোর্ড পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, আয়োজক কমিটি যেভাবে তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তারা সেইভাবে কাজ করে যাবেন।

ইয়ারব হোসেন জানান, আগের অনুমতির সময় বৃষ্টি হয়েছিল। তাই সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ৫দিন সার্কাস চালানো হবে। সেক্ষেত্রে নেপথ্যে একটু আধটু--------। তবে পুরষ্কার আনার নামে কারো কাছ থেকে চাদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব না হলেও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান, বিষয়টি তার জানা নেই।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮)