স্টাফ রিপোর্টার : মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষায় আবারও মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হবে। এ বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী জেল কোডের আওতায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

রবিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর মন্ত্রী এ তথ্য জানান।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে তাদের স্থায়ী কমিটির সাত সদস্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছিলেন। তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন, তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে কিছু রিকোয়েস্ট লিখিত আকারে করেছেন।’

তিনি বলেন, ‘তারা জানিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ এবং তার অসুস্থতার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এর আগে যেরকম রিকোয়েস্ট করেছিলেন অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এবার লিখিত দিয়েছেন। আমরা লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে সচিব মহোদয় এবং আইজি প্রিজনকে এখনই দায়িত্ব দিয়েছি।’

‘যেসব বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছিল, একইভাবে তাকে যারা চিকিৎসা করতেন এবং আমাদের সরকারি বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা মিলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করবেন। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুপারিশ অনুযায়ী আমাদের নীতিমালার আওতায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করব, যদি প্রয়োজন হয়।’

বিএনপি চেয়ারপারসন আর্থাইটিসে ভুগছেন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘তাকে সেবার করার জন্য একজনকে আমরা কারাগারে অ্যালাউ করেছি। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী যা যা প্রয়োজন আমরা কিন্তু সবই করে যাচ্ছি। কারাগারে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট একদিন পর একদিন থেরাপি দিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় প্রতি সপ্তাহে আমাদের ডাক্তাররা তাকে পরীক্ষা করছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু তাই নয় একজন ডাক্তার একজন ফার্মাসিস্ট প্রতিদিনই তাকে চেক করছেন। আমাদের আইজি প্রিজন এটা জানিয়েছেন, তাদেরও জানিয়ে দিয়েছেন। জেলকোড অনুযায়ী সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা আমরা তাকে দিচ্ছি। যাতে তার কোনো রকম অসুবিধা না হয়।’

‘তারা (বিএনপি নেতারা) যে কথাটি বলছেন, তারা মনে করছেন বেগম জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হচ্ছে। সেজন্য তাকে আবারও ইউনাইটেড হাসপাতালের কথা বলছেন, এবার সঙ্গে অ্যাপোলো হাসপাতালের কথাও বলেছেন।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানিয়ে দিয়েছি আমরা আবার মেডিকেল বোর্ড তৈরি করব। বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেব।’

কবে নাগাদ বোর্ড গঠিত হবে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সচিব ও আইজি প্রিজনকে বলে দিয়েছি, তারা দুইজন বসে ব্যবস্থা নেবেন, খুব শিগগিরই করব।’

সরকারি হাসপাতালের বাইরের নেয়ার সুযোগ আছে কিনা- জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘নীতিমালা অনুযায়ী তাকে সরকারি হাসাপতালে নেয়া হবে। এটাই আমাদের জেল কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা। দেশের বড় বড় হাসপাতালগুলো কিন্তু সরকারি হাসপাতাল।’

‘সরকারের সর্বোচ্চ চিকিৎসা কেন্দ্র যেগুলো সেগুলোতেই আমরা নিয়ে যাব। তারপরও যদি প্রয়োজন হয়, চিকিৎসকরা কিছু বলে, আমরা কী করতে পারি সেটা নিয়ে মিটিং করব। ডাক্তাররা বলুক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা আমাদের বড় বড় হাসপাতালে এ ধরনের ফ্যাসিলিটিস নেই। তাহলে সেটার প্রশ্ন আসে।’

বিএনপির পক্ষ থেকে বেগম জিয়ার যতটুকু অসুস্থতার কথা বলা হচ্ছে, আপনারা ততটুকু অসুস্থ বলে মনে করছেন কিনা- জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি কিন্তু আগে থেকেই আর্থাইটিসসহ অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা তো হচ্ছে। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই, কারা কর্তৃপক্ষ তার স্বাস্থ্যের প্রতি বিশেষ নজর রেখেছেন। এরপর তারা যে কথা বলছেন সেই রকম পরিস্থিতি হয়েছে কিনা সেটা ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখবেন।’

কারা চিকিৎসকরা এই ধরনের অসুস্থতার কথা বলেছে কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে তো এই ধরনের রিপোর্ট নেই। এখন বোর্ড পরীক্ষা নিরীক্ষা করে যেটা বলবেন সেটাই হবে।’

একজন মানুষ কোন স্থানে চিকিৎসা নিতে কমফোর্ট ফিল করতে পারে, সেই সুযোগ আছে কিনা- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জেলখানার কোড অনুযায়ী এই ধরনের বিবেচনার কোনো স্কোপ নেই। এখন তারা যেটা বলেছেন, রোগীটা কতখানি সিরিয়াস সেটা আমরা পরীক্ষা করে বসে সিদ্ধান্ত নেব।’

অন্য কোনো বিষয় নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কথা হয়েছে কিনা- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘অন্য কোনো বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে আজকে কথা হয়নি।’

এর আগে বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে দুপুর ২টা ৫৫ মিনিটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দফতরে প্রবেশ করেন বিএনপির প্রতিনিধি দল। ৩টা ৫০ মিনিটে শেষ হয় বৈঠক।

প্রতিনিধি দলে ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান ও নজরুল ইসলাম খান।

বৈঠক শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান এখন কারারুদ্ধ আছেন। তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটছে। সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা তার কাছে এসেছিলাম। ইতিপূর্বেও আমাদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিলেন। আমরা তাকে অনুরোধ করেছি, তাকে একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয় এবং সেটা আমরা ইউনাইটেড হাসপাতালে যেটা তিনি পছন্দ করেন, সেখানে চিকিৎসা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮)