আন্তর্জাতিক ডেস্ক : এই শতাব্দীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ জলবায়ু পরিবর্তন। বাংলাদেশসহ বিশ্বের কমবেশি সব দেশেই এর ঝুঁকিতে রয়েছে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কবল থেকে বিশ্বকে রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ চলছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।

শনিবার বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ৮০টি দেশের ৮ শতাধিকেরও বেশি জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে বলে খবর দিচ্ছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। এতে অংশ নিয়ে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিতের দাবি জানান লাখ লাখ মানুষ।

১২ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোয় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট-২০১৮। তার দিনদিন আগে বিশ্বব্যাপী জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হলো।

জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলতে বিশ্বব্যাপী এই বিক্ষোভের ডাক দেয় আন্তর্জাতিক পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা থ্রি-ফিফটি ডট ওআরজি।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার দাবিতে ফ্রান্সের প্যারিসে শনিবার সমাবেশ করেন হাজার হাজার মানুষ। বিক্ষোভকারীরা ভূমিধস, বন্যা, বৈশ্বিক উষ্ণতা থেকে পৃথিবীকে রক্ষায় ব্যাপকহারে বনায়নের পাশাপাশি সমুদ্র দূষণ বন্ধে প্লাস্টিক পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান।

এছাড়া গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমণ বন্ধ করা, জীববৈচিত্র রক্ষা করা, ভূমি রক্ষায় কৃষিজমিতে শিল্পায়ন অবশ্যই বন্ধ করার দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা।

কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোতায় একই দাবিতে সমাবেশে অংশ নেন কয়েক হাজার পরিবেশকর্মী। ‘রাইজ ফর ক্লাইমেট’ শীর্ষক বৈশ্বিক আন্দোলনে যোগ দিয়ে পরিবশেবিদরা দেশটির ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানান।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে বিশাল জাহাজে করে জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন সতর্কতা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন বহু মানুষ। তারা জলবায়ু রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। এসময় দেশটিতে সফররত হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টও সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।

জলবায়ু রক্ষায় জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সানফ্রান্সিসকোর রাস্তায় সমাবেশ করেন অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিতের দাবি জানান তারা।

সেখানে বিক্ষোভকারীরা বলেন, প্যারিস, ব্রাসেলস থেকে উগান্ডার রাজধানী, সবখানে মানুষ জলবায়ু রক্ষার দাবিতে জেগে উঠেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তীব্র খরায় ক্যালিফোর্নিয়া এখনো দাবানলে জ্বলছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় বন্যা হচ্ছে।

২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনে ২০২১ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রার গড় বৃদ্ধির হার ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামিয়ে আনতে ১৯৬টি দেশ ঐকমত্যে পৌঁছায়। যা প্যারিস জলবায়ু চুক্তি নামে পরিচিত।

কিন্তু ২০১৭ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সঙ্কটে পড়ে। থমকে যায় এর লক্ষ্য বাস্তবায়ন।

তবে ট্রাম্প সরে গেলেও জলবায়ু রক্ষায় জাতিসংঘ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, গুগলসহ কয়েকটি সংস্থার উদ্যোগে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে 'গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যাকশন সামিট-২০১৮। ১২ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের গভর্নরের সহযোগিতায় সান ফ্রান্সিসকোয় প্রথমবারের মতো পাঁচদিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৮)