কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বিয়ে পাগল জজমিয়ার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে অসহায় এক কিশোরীর পরিবার বিভিন্ন মহলে ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেনা। ১৪ বছর বয়সী বন্যা, তার পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসী কেউ জানে না বন্যার বিয়ে হয়েছে। অথচ ভুয়া নোটারি পাবলিকের কাগজ তৈরী করে জজমিয়া বন্যাকে নিজের ৫ম স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে। জজমিয়ার খপ্পর থেকে মেয়েকে রক্ষা করতে সৌদি আরব থেকে দেশে চলে আসে বন্যার মা। 

বন্যার বাবা-মার সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রাম থেকে প্রায় ২০ বছর আগে কাজের সন্ধানে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় চলে আসে। দিন মজুর রতন মিয়া কাপাসিয়া বাস স্ট্যান্ড এলাকায় ব্রিজের নিচে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে সপরিবারে বসবাস করে আসছে। তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখার পর দারিদ্র্যের কারেণে বন্যাকে প্রতিবেশি কফিল উদ্দিনের রিক্সার গ্যারেজে কাজে লাগিয়ে দেন। সংসারের অভাব অনটন লাঘব করতে বন্যার মা সৌদি আরবে চলে যায়।

এক সময় বন্যার পরিবারে মোবাইল না থাকায় প্রতিবেশি জজমিয়ার মোবাইলের মাধমে বন্যার পরিবারের লোকজন কথা বলত। সেই থেকে বন্যার প্রতি জজমিয়ার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। জজমিয়া মাঝে মধ্যেই বন্যাকে বিয়ের প্রস্তাব দিত। এতে বন্যা সাড়া না দিয়ে তাকে গালিগালাজ করত। জজমিয়া গত ০৯ আগস্ট এডভোকেট টেকি প্রধান নামীয় সীল স্বাক্ষর সংবলিত গাজীপুর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সম্পাদিত একটি বিয়ের দলীল এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে বন্যাকে নিজের স্ত্রী বলে প্রচার দিতে থাকে। সেখানে বন্যার বয়স ২৪ বছর বলে উল্লেখ থাকলেও বাস্তবে তার বয়স মাত্র ১৪ বছর। এমনকি ওই দলিলের স্বাক্ষরের সাথে বন্যার হাতের লেখার কোনো মিল নেই। আর সেখানে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ইমো’ থেকে নেয়া।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড কুলুপাড়া এলাকার আঃ মজিদের ছেলে জজমিয়া (৫২) এ পর্যন্ত কতটি বিয়ে করেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারোর জানা নেই। তবে বর্তমানেও তার অন্তত ৪ জন স্ত্রী রয়েছে। কেউ থাকে বিদেশে, কেউ তৈরী পোশাক কারখানায়, কেউবা নির্মাণ শ্রমিক, আবার কেউ অন্য কোনো পেশায় জড়িত। প্রত্যেককেই সে আলাদা স্থানে রাখে। সে নিজের ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে এবং মেয়ের ঘরে নাতনীও রয়েছে। তারপরেও সে নিজের নাতনীর বয়সী বন্যাকে নিজের স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে এবং বন্যাকে তার ঘরে উঠিয়ে দেয়ার জন্যে বন্যার বাবা-মাকে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অসহায় বন্যার বাবা-মা তার পায়ে ধরে আর্তনাদ করেও রেহাই পাচ্ছেনা।

তারা এহেন জঘন্য প্রতারণার হাত থেকে বাঁচতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রশাসনের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এলাকাবাসী তার এমন জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে। এ ব্যাপারে বিয়ে পাগল জজ মিয়ার সাথে ফোনে বার বার যোগাযোগের চেস্টা করে ও পাওয়া যায়নি।

(এসকেডি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮)