রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নবগঙ্গা নদীতে পাট জাগ দেওয়ার ফলে নদীর পানি পচে দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। স্বচ্ছ, টলটলে নবগঙ্গা নদীর পানি পচে নিকষ  কালো বর্ণ ধারন করেছে। ফলে, নদী তীরবর্তী এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র অভাব দেখা দিয়েছে। পানি পচে যাওয়ায় দেশীয় প্রজাতির মাছ মরে ভেসে উঠছে। শুধু তাই নয়, নদীর পানি পচে যাওয়ায় ‘চোখ ওঠা’ এবং ‘চুলকানি’ সহ চর্ম জাতীয় রোগব্যাধি দেখা দিয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সময় লোহাগড়ার পাট চাষিরা খাল-বিল, ডোবা নালায় পাট জাগ দিতো। সে সময় চাষীদের পাট জাগ দেওয়ার জন্য আর যাই হোক, নদীতে আসতে হতো না। কিন্তু সাম্প্রতিক বছর গুলোতে সময় মতো বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিল, ডোবা-নালায় পানি থাকে না। ফলে, পাট চাষীরা ব্যাধ্য হয়েই নবগঙ্গা নদীতে পাট জাগ দিয়ে আসছেন। নদীতে পাট জাগ দেওয়ার কারনে পানি দূষিত হয়ে তা ব্যাবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর লোহাগড়ায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১২৩৫০ হেক্টর জমিতে আর চাষ হয়েছে ১১২৬০ হেক্টর জমিতে। চাষের পর বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এ অঞ্চলে এ বছর পাটের আবাদ ভালো হয় নাই।

এ অঞ্চলের পাট চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পাট চাষীরা জমির কাটা পাট নিয়ে মহা বিপাকে পড়েছেন। অনেক চাষী পানির অভাবে জমি থেকে পাট কাটছেন না। ভারী বৃষ্টিপাত না হওয়ার দরুন খাল-বিল, ডোবা-নালায় পানি নেই বললেই চলে। অধিকাংশ পাট চাষীরা তাই বাধ্য হয়েই নবগঙ্গা নদীতে পাট জাগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। নবগঙ্গা নদীর ২৫ কিলো মিটার অংশ জুড়ে পাট জাগ দেওয়া হয়েছে। নলদী ত্রি মোহনা থেকে লুটিয়া এলাকা পর্যন্ত নদীর পানি দূষিত হয়ে পড়েছে। নদীতে পাট জাগ দেওয়ার ফলে এ বছরও নদীর পানি পচে দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে। নদীর পানি দূষিত হওয়ার কারনে নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ নদীর পানি ব্যবহার করছেন না। অপর দিকে, নদীর পানি পচে দূষিত হওয়ার কারনে দেশীয় প্রজাতির বিভিন্ন মাছ আধমরা অবস্থায় ভেসে উঠছে। এ দিকে নদীতে পাট জাগ দেওয়ার ফলে নদী তীরবর্তী লোকজন ‘চোখ ওঠা’ এবং ‘চুলকানি পাঁচড়ায়’ আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রতিদিন স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সব রোগীরা চিকিৎসার জন্য আসছেন।

নবগঙ্গা নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা শেখ ছদরউদ্দিন শামীম বলেন, কৃষকের অসচেনতা এবং কৃষি বিভাগের উদাসীনতায় নবগঙ্গা আজ দুষণের কবলে পড়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। দুষণরোধে এলাকাবাসীদের সচেতন হতে হবে।

নবগঙ্গা নদীতে পাট জাগ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সমরেন বিশ্বাস বলেন, পাট যেহেতু অর্থকারী ফসল, সেহেতু পাট নষ্ট করা যাবে না। রিবন রের্টিং পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতার অভাবে কৃষকরা বাধ্য হয়ে সনাতনী পদ্ধতিতে পাট জাগ দিয়ে আসছে। নদী দুষণ বন্ধে আপাতত কৃষি বিভাগের কোনো নিদের্শনা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার(ভূমি) এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, নদীতে পাটজাগ বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(আরএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮)