প্রবীর বিকাশ সরকার : [ভূমিকা : আমার ৫৫ বছরের জীবনে বাবার সঙ্গে কেটেছে মাত্র ২৪-২৫টি বছর! জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যেভাবে বাবাকে দেখেছি, চিনেছি, জেনেছি এবং বুঝেছি তার মূল্যায়নই হচ্ছে এই আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস বা স্মৃতিকথা ‘অতলান্ত পিতৃস্মৃতি’---এমন করে খোলামেলা খুঁটিনাটি কোনো স্মৃতিকথা আর কোনো বাঙালি লিখেছেন তার জন্মদাতা পিতৃদেবকে নিয়ে আমার অন্তত জানা নেই।]

একইসঙ্গে আহাম্মদ আলী দারোগার বাসায়ও গেলাম। দিলশাদ তার বড় আপা ও বড়ভাই শামছুভাইয়ের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে রাতে বাসায় ফিরে এসেছি। শামছুভাইকে দেখে আরও আগে কলোনীতে যখন ছিলাম তখনকার একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। তিনি ছেলেবেলা থেকেই মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত, ছ’মাস ভালো থাকেন তো ছ’মাস বদ্ধ উন্মাদ। আমি বরাবরই শুকনো ছিলাম বলে একবার আমাকে তাঁর ওষুধ---দুটো ক্যাপসুল খাইয়ে দিয়েছিলেন তাতে করে নাকি আমি মোটা হব! ট্যাবলেট খাওয়ার পর আমার সেকি মাথাব্যথা, বমি, শ্বাসকষ্ট! হাতপা ঘেমে ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল!

যখন মেঝেতে পড়ে অজ্ঞানপ্রায় তখন খালাম্বা বুঝলেন যে একটা কিছু হয়েছে। ‘কী হয়েছে বাবা?’ জিজ্ঞেস করতে আমি ক্যাপসুলের প্যাকেট দেখিয়ে দিলাম। ‘সর্বনাশ!’ বলে তিনি চোখ কপালে তুলে ফেললেন। দিলশাদকে বললেন, ‘তাড়াড়াড়ি রিক্সা ডেকে আন্, পটুর মাকে খবর দে!’ তারপর কী হয়েছে মনে নেই রিক্সায় মার কোলে অর্ধচেতন অবস্থায় রামঘাটলার পারিবারিক ডাক্তার সতীশচন্দ্র দাসের কাছে নিয়ে গেল আমাকে। তিনি অক্সিজেন মাস্ক মুখে লাগিয়ে দিলেন, তারপর ইঞ্জেকশন দিলেন। ধীরে ধীরে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক হতে লাগলো আমিও গাঢ় ঘুমে তলিয়ে গেলাম। আমাকে বাসায় নিয়ে আসার পরপরই দিলশাদ, তার বড় দুআপা এবং খালাম্মা এসে আমার পাশে বসে আদর করলেন, অনেকক্ষণ ছিলেন। বাবা ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাবে ভেবে মা আর খবর দেয়নি, সম্ভবত রাস্তায় কেউ দেখে বাবাকে পরে জানিয়ে থাকবে। ছোট্ট শহর। খবর পেয়ে বিকেলে বাবা ছুটে এলো বাসায়।

মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, ‘শামছুর কাছ থেকে সাবধানে থেকো এরপর। ওতো ওই রকমই, তোমাকে সাবধান হতে হবে।’ লক্ষ করলাম বাবা তাকে ‘পাগল’ বলেনি, যদিওবা সবাই শামছুভাইকে ‘পাগল’ বলে জানে এবং অনেকে প্রকাশ্যে ডাকেও। বাবা কোনোদিন তা বলতো না। বাবার আদর খেয়ে আমি অশ্রুসজল হলাম। সন্ধ্যের দিকে লক্ষ্মীমাসি, কৃষ্ণের মা, দিদিমণি দেখতে এলেন আমাকে। বন্ধুরাও এলো। আমার মনে হলো এই যাত্রাও আমি সকলের আশীর্বাদের কারণে বেঁচে গেলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় কানের পাশ দিয়ে রকেট বোমার ধাতব টুকরো শোঁ শোঁ করে ছুটে গিয়ে জেলখানার দেয়ালে বিদ্ধ হয়েছিল। একবার গ্রামে নদীর পাড়ে মোটা দীর্ঘ কালো এক বিষধর সাপ ডান পা জড়িয়ে ধরেছিল, ঝাটকা মেরে ছাড়িয়েছিলাম। সেকি ভয়ানক কালসাপ! সে যাত্রাও বেঁচে গিয়েছিলাম। যাইহোক, ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিলাম। এবং সকলের আশীর্বাদে সেকেন্ড ডিভিশনে উত্তীর্ণ হলাম। এর মধ্যে ১৫ আগস্ট ঘটে গেল বাংলাদেশে অভাবনীয়, অপ্রত্যাশিত এক ঘটনা। যা ছিল স্বপ্নেরও অতীত! এক কথায় বলা যায় স্তম্ভিত হয়ে গেল বিশ্ববাসী! বাকশক্তিহীন হয়ে গেলাম আমরা বন্ধুরা!

দেশের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে সবার চোখেমুখেই এক আতঙ্ক: কী হবে এর পর? দেশটি কি আমেরিকা নিয়ে নেবে? নাকি আবার পাকিস্তান হয়ে যাবে? আওয়ামী লীগের নেতা ও কর্মী অধিকাংশই গা ঢাকা দিল। তুমুল ধরপাকড় চললো সারা দেশে। সামরিক শাসন শুরু হলো। ধারাবাহিকভাবে জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় এলেন। সংবিধান থেকে শুরু করে প্রশাসন, রাজনীতি সর্বত্র ব্যাপক পরিবর্তন ঘটলো। ধীরে ধীরে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসতে লাগলো। কিন্তু দুর্নীতি আদৌ কমলো না। রাতারাতি বহু মানুষ যারা ধনী হওয়ার চিন্তা করেনি কোনোদিন তারা ধনী হতে লাগলো চোখের সামনে। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন এলো না। যারা ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগের লোকজন তাদেরকে ফিরে আসতে উৎসাহিত করা হলো সরকারিভাবে। টাঙ্গাইলের বাঘাবাঙালি কাদের সিদ্দিকী তাঁদের মধ্যে অন্যতম প্রধান। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে সামরিক স্বৈরতন্ত্র প্রকাশ্য রূপ পরিগ্রহ করলো। সবচেয়ে বড় দুঃখের ঘটনা ঘটলো মহান স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি রাষ্ট্র পরিচালনায় চলে এলো। কেন মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হলো, এত রক্তক্ষয়, সংগ্রাম, লড়াই হলো সবই মিথ্যে হয়ে গেল!

সামাজিক, প্রশাসনিক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রীতিনীতি, নৈতিকতা বলতে আর কিছুই থাকলো না। ভিতরে ভিতরে হিন্দুবিদ্বেষ, সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার লড়াই, গুপ্ত বিদ্রোহ, হত্যা-গুম চলতে থাকলো। ১৯৭৭ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৮১ সালের মে মাস পর্যন্ত সপ্তম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহু বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিলেন। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের নাম কোথাও ছিল না। আওয়ামী রাজনীতি ছিল দমনের মুখে ফলে বড়ই দুর্বল। কাজেই ততদিনে সামরিক ছাউনীতে জন্ম নেয়া জাগদল পরে বিএনপি ফাঁকা মাঠে অনেক শক্তিশালী হয়ে গেছে। এই সময়ের শিশু প্রজন্ম জানতে লাগলো যে, বাংলাদেশ বলতেই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, আর কেউ নয়। কিভাবে দেশ স্বাধীন হলো, মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হলো, আওয়ামী লীগ কি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লোকটি কে, কি তাঁর ইতিহাস, জিয়াউর রহমানইবা কোথা থেকে এলেন, প্রধানমন্ত্রী শাহআজিজ কে, কে এমএ সবুর, কে রাজাকার মান্নান, কে গোলাম আজম, কে নিজামী ইত্যাদি কোনো কিছুই জানে না নতুন প্রজন্ম! না জেনেই তারা বড় হয়েছে।

স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস বলতে নতুন প্রজন্ম কিছুই শিখতে পারেনি। এটা জাতির জন্য দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছু নয়। এই ঘটনা চলতে লাগলো আরেক জেনারেল এরশাদের ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি উন্মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত। ১৯৭৫ থেকে ১৯৯১ এই দীর্ঘ সময়টা যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহৃত হয়েছে অবৈধ সামরিক স্বৈরতন্ত্রের দ্বারা। বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে মূলত এখান থেকেই। এই রাজনৈতিক মহাপরিবর্তনের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে, প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে বাবার মনমানসিকতায়। স্বল্পবাক্ মানুষটি যেন কথাই হারিয়ে ফেললো! বাইরে হাশিখুশি থাকলেও ঘরে ফিরেই বাবা কেমন বিষণ্ন নীরব হয়ে যেতো। মাঝেমাঝে প্রশ্ন করলেও রাজনীতি বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে চাইতো না। বারান্দায় না হয় উঠোনে চেয়ার পেতে বসে থাকতো। কিছু যে ভাবতো তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমার শুধু এটাই মনে হলো: চিরকালের সজীব-সবুজ বাবাকে যেন হারিয়ে ফেললাম। একটি বড় পরিবর্তন যখন আসে সেইসঙ্গে অনেক নতুন নতুন দিকেরও উন্মোচন ঘটে, সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। শত দুঃখবেদনার মধ্যেও আনন্দ-উৎসবের কিছু কারণ ঘটে। আমার জীবনেও তাই হলো। কলেজে ভর্তি হলাম সবাই আমরা, একমাত্র শঙ্কর বাদে, সে তার বাবার খুচরা মালামাল বিক্রির ব্যবসায় ঢুকে গেল বড় ছেলে হিসেবে। আমি, মানিক, বিষ্ণু, দুলাল, হেলাল, কিসলু সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে আর স্বপন, মঞ্জুর মোর্শেদ, মঞ্জু, কাউসার বেসরকারি কুমিল্লা কলেজে। মেয়েরা সরকারি মহিলা কলেজে। নতুন এক জীবন নতুন এক উদ্দীপনা নতুন এক বেপরোয়া লাইফ স্টাইল। নিয়মিত কলেজে যাই। ক্লাস করি। আড্ডা দিই কলেজের ক্যান্টিনে, কলেজরোডের বইয়ের দোকান প্যানোরমায় বা কালুদা-দাদার চায়ের স্টলে, সুইটহোমে। কলেজ যেহেতু অনেক বড় এবং প্রচুর ছাত্র তাই প্রায় প্রতিদিনই নতুন নতুন বন্ধুবান্ধব জুটতে লাগলো। রাজনীতি তো বটেই, সাহিত্য, গান, টিভিনাটক, বিশ্বসাহিত্য নিয়েও তর্কাতর্কি চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এখানে সেখানে। অবাধ এক জীবন।

বাবা মাঝেমাঝে জিজ্ঞেস করে, ‘কেমন লাগছে কলেজ জীবন?’ বলি, ‘খুব ভালো।’ বাবা পাল্টা বলে, ‘শুনতে পাই রাজনীতি নিয়ে খুব আড্ডা চলে তোমাদের ক্যান্টিনে? ঠিক নাকি? ওই সাবজেক্টটা বাদ দিয়ে অন্যকিছু ভাবো না কেন? পৃথিবীতে কত সাবজেক্ট, কত বৈচিত্র্য! এসব অনুসন্ধানের, আস্বাদ গ্রহণের এই তো সোনালি সময়। ভবিষ্যতে কী হতে চাও এখনই তোমাকে ঠিক করতে হবে। রাজনীতি করার সময় নেই। ঘরে বিস্তর বই আছে, টাউনহল লাইব্রেরিতে আছে সেগুলোও পড়ার চেষ্টা করো পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি। এভরি ইয়াং ম্যান হ্যাজ রাইট টু রিড পর্ণোগ্রাফি টু ডাসক্যাপিটাল উইথইন এ লিমিটেশন। দ্যাটস নট ব্যাড, বাট ট্রু, রিমেম্বার মাই ডিয়ার চাইল্ড!’ বাবার মুখে এই কথা শুনে আমার মুখে কথা আর সরে না! স্তম্ভিত হয়ে গেলাম বাবার মন্তব্য শুনে! বৃটিশ আমলের এক সাধারণ ম্যাট্রিক পাশকরা মানুষ কী বলে! সহসা মনে হলো, বাবা যেন আমার স্বাধীনতার তালাটি খুলে দিল। বই পড়ার অভ্যেস ছিল মোটামুটি। শুক্লার ছোটভাই সজল যে শৈশব থেকেই দূরারোগ্য এক ব্যাধিতে ভুগছিল, একটা পর্যায় পর্যন্ত তার দেহের প্রবৃদ্ধি আর হয়নি তবে চিকিৎসা চলছিল, আমি জাপানে চলে আসার পর মারা যায়। তার ছিল অসম্ভব বই পড়ার নেশা। কত বিচিত্র বিষয়ের বই যে সে পড়তো দেখে বিস্মিত হয়েছি! অনেক কিছু জানতো ছেলেটি।

সারাদিনই পড়ে থাকতো টাউন হল লাইব্রেরিতে। তাকে নিয়ে গিয়ে একদিন লাইব্রেরির সদস্য হলাম। ধার করে পড়তে লাগলাম নানা ধরনের বই। সজলের কাছ থেকেও নিতাম। ওদিকে তাপসদার ছিল বিশাল এক বইয়ের ভান্ডার! তখন বইপড়া ছিল মানসিক আনন্দ লাভের একটি বড় মাধ্যম। কে কত ভালো এবং বিখ্যাত বই পড়েছে এই নিয়ে দারুণ তর্ক হতো, আলোচনাও হতো। এরকম একটি সময় ছিল তখন। উদারমনস্ক তাপসদার কাছ থেকে আমেরিকান, ইন্ডিয়ান পর্ণোগ্রাফির বইও নিয়েছি, লুকিয়ে লুকিয়ে পড়েছি। তাঁর কাছ থেকে বাংলাদেশে একসময় প্রকাশিত হতো ‘নরনারী’ নামে একটি যৌনবিষয়ক ম্যাগজিন সেটাও নিয়ে পড়েছি। তাছাড়া সজলের কাছ থেকে নিয়েছি অদ্রীশ বর্ধনের রহস্যেপন্যাস, তাঁর বইতেও যৌন সুড়সুড়িমূলক ভাষা ছিল। তখন দেখলাম বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিলেই স্বাভাবিক, অন্যভাবে নিলেই নানা রকম বিড়ম্বনার সৃষ্টি। আর এসব পড়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে জানানোরও কোনো প্রয়োজন নেই।

কামনা-বাসনা তথা যৌনতা যে সকল প্রাণীর জন্যই একটি অপরিহার্য বিষয় এটা সেই বয়সে বাবার তত্ত্বাবধানেই অনুধাবন করার শিক্ষা পেয়েছিলাম। সবদিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা বাঙালি সমাজে এই রকম বাবাকে আধুনিক না বলে কী বলবো? পরবর্তীকালে যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সঙ্গদোষেই হোক, কৌতূহল মেটানোর বশেই হোক আর কবি-সাহিত্যিক বন্ধুদের আড্ডায় মর্যাদারক্ষার তাগিদেই হোক বিভিন্ন নেশা ও মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেছি বাবা জেনেও কখনো কিছু সরাসরি বলেনি। তবে মাঝেমাঝে সাবধান করে দিয়েছে আকারে ইঙ্গিতে যে, প্রয়োজন আর লোক দেখানো এক জিনিস নয়, এ দুয়ের পার্থক্য বুঝে যদি চলতে পারো ভালো। না হলে নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনবে। বাবা-মা চিরকাল তোমাকে সামাল দেবার জন্য এই পৃথিবীতে আসেনি। তাদেরও জীবন আছে, তারাও ব্যস্ত। তাদেরও বাঁচতে হবে। ...চলবে

আলোকচিত্র : উপরে, ভিক্টোরিয়া কলেজের ইন্টারমিডিয়েট সেকশন। মাঝখানে, ধর্মসাগরে মানুনুর রশীদ, স্বপন ও আমি। নিচে, ধর্মসাগরে পাড়ে এসে পাওয়া নতুন নতুন বন্ধু বিষ্ণু সাহা এখন ব্যবসায়ী।

লেখক : জাপানপ্রবাসী

(এএস/জুলাই ১৫, ২০১৪)