গাইবান্ধা প্রতিনিধি : গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান-এ উন্নতি, তবে অনেক বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যহারে কম ও শিক্ষকদের অনুপস্থিতি এবং ক্লাস ফাঁকির বিষয়টি লক্ষ্যনীয়। শিক্ষকদের উপস্থিতি দেরীতে হলেও তাড়াতাড়ি গমন এবং অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তাড়াতাড়ি ছুটি দেয়ার ফলে সেসব বিদ্যালয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

সচেতন এলাকাবাসী,অভিভাবক ও পর্যবেক্ষক মহল শিক্ষার মান উন্নতিকরনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারি কামনা করেছেন।

তবে হাতেগোনা কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের যথাসময়ে উপস্থিতি ও মনোযোগের সাথে পাঠদান, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিসহ শিক্ষার মান বেশ সন্তোষজনক ও প্রশংসার দাবীদার।

একাধিক সচেতন এলাকাবাসী ও অভিভাবকদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ৯ সেপ্টেম্বর মঙ্লবার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে নানা ভালো-মন্দ বিষয় পরিলক্ষিত হয়। দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলার ৪ নং বরিশাল ইউনিয়নের সর্বাঙ্গ ভাদুরিয়া নব-সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র বেশ চোখে পড়ার মতো।

প্রধান শিক্ষক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম সবুজ এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ২৮/০৮/২০১৮ খৃিঃ যোগদান করেন। প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর ১০/১২ দিনের ব্যবধানে তার চেষ্টায় ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাএীদের উপস্থিত প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করেন । এ বিদ্যালয়ে ৬২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬১ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত করতে সক্ষম হন। এছাড়া পড়া-লেখার মানও আগের চেয়ে বেশ সন্তোষজনক। সামান্য ক' দিনের ব্যবধানে বিদ্যালয়ের পরিবর্তনের এ চিএ দেখে অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষককে অভিনন্দন ও সাধুবাদ জানান।

অপরদিকে, বরিশাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ 'শ ৬৭ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১'শ ৪৭ জন শিক্ষার্থীর উপস্হিত দেখা যায়। তার মধ্যে শিশু শ্রেণিতে ১২ জনের মধ্যে ১১ জন, ১ম শ্রেণিতে ২৩ জনের মধ্যে ২০ জন, ২য় শ্রেণিতে ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন, ৩য় শ্রেণিতে ৩৪ জনের মধ্যে ৩০ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ৪৫ জনের মধ্যে ৪০ জন এবং ৫ম শ্রেণিতে ৩৫ জনের মধ্যে ৩০ জন শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে বিদ্যালয়টি ছিলো টইটুম্বুর। শিক্ষকদের বেশ মনোযোগের সাথে পাঠদান দিতে দেখা যায়। এ বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান সন্তোষজনক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ মনোরম, সুন্দর ও চোখে পড়ার মতো।

পাশ্ববর্তী ৭ নং পবনাপুর ইউনিয়নের পবনাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে দেখা যায়, বিকেল ৪ টায় শিক্ষকগন ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের চারু ও কারু বিষয়ের উপর আলোচনা করছেন। এ বিদ্যালয় দু'টি সি,এফ,এস চাইল্ড ফ্রেন্ডস স্কুল বা শিশু বান্ধব বিদ্যালয় সুবিধাভুক্ত। তাছাড়া সিএফএস এর বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থের কাজগুলো সন্তোষজনক ও দৃশ্যমান।

অপরদিকে, পাশ্ববর্তি ৮ নং মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্ধা পশ্চিম পাড়া নব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। এ বিদ্যালয়ে লেখা-পড়ার মান নিম্ন পর্যায়ে এবং শিক্ষকদের পাঠদানে অনিহা ও ক্লাস ফাঁকি'র বিষয় দৃশ্যমান হয়। বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেণিতে ১৭ জনের মধ্যে ৬ জন, ৪র্থ শ্রেণিতে ২১ জনের মধ্যে ১৩ জন ও ৫ম শ্রেণিতে ১৬ জনের মধ্যে ১১ জন শিক্ষার্থীকে উপস্থিত দেখা যায়। এটি শিশু বান্ধব বিদ্যালয় হলেও এখানে সিএফএস এর অর্থ পকেটস্থ করা হয়েছে বলে মনে হয় এবং দৃশ্যমান উল্লেখযোগ্য কিছু চোখে পড়েনি।

এছাড়া এ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক মিনারা ফারাজী'কে ৩য় শ্রেণিতে পাঠদান দিতে শ্রেণি কক্ষেই ঘুমোতে দেখা যায়। তাছাড়া অপর সহকারি শিক্ষক শামসুল আলম টিফিনের সময় বাসায় গেলেও আর বিদ্যালয়ে আসেননি। তাকে একটি চায়ের দোকানে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডা দিতে দেখা যায়। প্রধান শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌস আইভি জানান, উক্ত শিক্ষক শামসুল আলম আর বিদ্যালয়ে ফেরেননি যা দুঃখজনক।

এ বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান একেবারে নিম্ন পর্যায়ে এবং বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দেরীতে স্কুলে আগমন ও তাড়াতাড়ি গমন করেন বলে অভিভাবক ও সচেতন এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়।

শিক্ষার মান ফিরিয়ে আনতে, যেসব শিক্ষকের বাড়ি সংলগ্ন বিদ্যালয় রয়েছে ঐ সব শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করলে শিক্ষার গুনগতমাণ বাড়বে বলে সচেতনমহল মনে করেন। এ ব্যাপারে ঐ মহলটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কড়া নজরদারিসহ জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

(এসআইআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮)