রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগরে মৃত ব্যক্তির মিলাদে অংশ না নেওয়ার কারণে একটি পরিবারকে এক বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামের মাতব্বরা সমাজচ্যুত (একঘরে) করে রেখেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই ওই পরিবারকে গ্রামের সবকিছু থেকে বিরত রাখার জন্য গ্রামের কতিপয় মাতবররা প্রতিনিয়তই জারি করছেন নতুন নতুন নিয়ম-কানুন। এতে করে অসহায় জীবন-যাপন করছিল ওই একঘরে পরিবার। 

সেই পরিবার থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করলে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বিষয়টি সমাধান করে দিলেও আবার মঙ্গলবার ১১সেপ্টেম্বর সকাল থেকে ইউএনও’র নির্দেশকে অমান্য করে সেই পরিবাকে সমাজচ্যুত (একঘরে) করে রেখেছে গ্রামের কর্তিপয় মাতব্বরা। যেন দেখার কেউ নেই।

রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের যাত্রাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের মো: মুনছুর আলী প্রামানিকের পরিবারকে সমাজচ্যুত (একঘরে) করে রাখা হয়েছে। গ্রামের কর্তিপয় মাতব্বরা তাদের পরিবারকে আবার পরিকল্পনা করে একঘরে করে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন মুনছুর আলী প্রামানিকের ছেলে মো: জহুরুল ইসলাম।

অভিযোগ জানা গেছে, প্রায় ১বছর আগে যাত্রাপুর গ্রামে মৃত-মহির উদ্দিন মন্ডলের মিলাদ বা ফয়তায় ব্যক্তিগত কারণে অংশ গ্রহন করতে পারেনি ওই গ্রামের মুনছুর আলী প্রামানিকের পরিবার। মিলাদে অংশগ্রহণ না করার কারণে গ্রামের কর্তিপয় মাতব্বর আব্দুস সামাদ মন্ডলসহ ওই গ্রামের আরো কিছু মাতব্বরদের নিয়ে গ্রামে শালিশ বৈঠকের মাধ্যমে পূর্বপরিকল্পনা অনুসারে মুনছুর আলীর পরিবারকে একঘরে (সমাজচ্যুত) করে রেখে ছিলেন তারা। পরবর্তিতে গ্রামের মাতবররা ওই পরিবারটিকে গ্রামের কোন কাজে বা কোন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেয় না। এমনকি মুনছুর আলীর শ্যালকের মেয়ের বিয়েতেও এই পরিবারকে দাওয়াত না দিতে এবং ওই বিয়েতে অংশগ্রহণ না করার জন্য নির্দেশ প্রদান করে মাতব্বরা। দিন যতই যাচ্ছিলো ওই পরিবারের প্রতি একঘরে করে রাখার অত্যাচারের মাত্রা ততই বৃদ্ধি করছিলো গ্রামের কর্তিপয় মাতব্বরা।

অবশেষে মুনছুর আলী প্রামানিকের ছেলে মো: জহুরুল ইসলাম রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দেন। আবার মঙ্গলবার ১১সেপ্টেম্বর দিনে যাত্রাপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ের মিলাদ মাহফিল ছিলো। মুনছুর আলীর পবিরারকে দুইদিন আগে দাওয়াত দেন আব্দুর রহমান। আবার মিলাদের দিন মঙ্গলবার সকালে মাতব্বরদের চাপে দাওয়াতটি ফেরত নিয়েছেন তিনি। সেই যাত্রাপুর গ্রামের কর্তিপয় মাতব্বর এনামুল হক, মজিবর রহমান, আব্দুস সামাদ, আকব্বর, শহিনসহ সবাই মিলে পরিকল্পনা করে আবার মঙ্গলবার ১১সেপ্টেম্বর থেকে সেই পরিবারকে একঘরে (সমাজচ্যুত) করে রেখেছে।

মুনছুর আলীর ছেলে মো: জহুরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, এমন কি অপরাধে গ্রামের মাতব্বর নাজমুল হক, মজিবর রহমান, আব্দুস সামাদ, আকব্বর, শহিনসহ সবাই মিলে পরিকল্পনা করে আমাদের পরিবারকে আবার একঘরে (সমাজচ্যুত) করে রেখেছে। আসলে কি কারণে আমাদের পরিবারের উপর এত অত্যাচার করা হচ্ছে তার সঠিক কারণ আমার জানা নেই। এর আগে আমাদের পরিবারকে একঘরে রাখা হয়েছিল। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করলে ইউএনও সাহেব বিষয়টি সমাধান করে দেন। তবে ইউএনও’র নির্দেশ অমান্য করে আবার আমাদের পরিবারকে মঙ্গলবার ১১সেপ্টেম্বর সকাল থেকে একঘরে করে রেখেছে মাতব্বরা। আমরা ভেবেছিলাম তারা হয়তোবা আমাদের পরিবারের প্রতি সদয় হবেন কিন্তু দিন যাচ্ছে আমাদের পরিবারের প্রতি মাতবরদের অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধিই পাচ্ছে। এমনকি তারা আমার মামাতো বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে পর্যন্ত আমাদের পরিবারকে অংশগ্রহণ করতে দেয়নি। আমরা এই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে চাই। আমরা এই গ্রামের অত্যাচারিত মাতব্বরদের দৃষ্টান্তর মূলক শাস্তি চাই।

যাত্রাপুর গ্রামের মাতব্বর আব্দুস সামাদ মন্ডল বলেন, অভিযোগটি সম্পন্ন মিথ্যে ও ভুয়া।

রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখচ্ছি।#

(এসকেপি/এসপি/সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮)