স্টাফ রিপোর্টার : নাজিমুদ্দিন রোডের পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভেতর বিশেষ আদালতের শুনানিকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকা জুড়ে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে এখানে।

শুনানিকে কেন্দ্র করে পুরাতন কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে পুলিশ ও কারারক্ষীরা। বন্ধ রাখা হয়েছে কারাগারসংলগ্ন ৪ টি সড়ক। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ফায়ার সার্ভিসের একটি পানিভর্তি গাড়ি। শুধু এই আদালত নয়; খালেদার বিচার হওয়া আলিয়া মাদরাসার বিশেষ আদালতেও নেয়া হয়েছে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

সরেজমিনে কারাগার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এদিন শুনানিকে কেন্দ্র করে কারাগারের চারপাশ দিয়ে যানচলাচল বন্ধ রেখেছে পুলিশ। পায়ে হেঁটে লোকজন চলাচল করতে পারছে, তবে যারা এই সড়কের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রত্যেকের দেহ এবং ব্যাগ তল্লাশি করা হচ্ছে। কারারক্ষীরা কারাগারের মূল ফটকের বাইরে সশস্ত্র অবস্থান নিয়েছেন।

এছাড়াও পুরান ঢাকা প্রবেশের মুখ চানখারপুল ও বকশীবাজার এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ও কাঁটাতারের ব্যারিকেড রাখা হয়েছে।

পুলিশের চকবাজার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কারাগারকেন্দ্রিক প্রতিদিনই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকে। তবে বিশেষ আদালতের কারণে সকাল থেকে এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আদালত চলাকালীন এই বাড়তি নিরাপত্তা বলবৎ থাকবে।’

উল্লেখ্য, সম্প্রতি নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের ৭ নম্বর কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করেছে সরকার। এর আগে আইন ও বিচার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হয়।

গেজেটে বলা হয়, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের টাকা আত্মসাৎ-সংক্রান্ত কার্যক্রম ঢাকা মহানগরের বকশীবাজার এলাকার সরকারি আলিয়া মাদরাসা ও সাবেক ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন মাঠে নির্মিত অস্থায়ী আদালত ভবনে পরিচালিত হচ্ছে। এসব মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালীন এলাকাটি জনাকীর্ণ থাকে তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের কক্ষটিকে অস্থায়ী আদালত ঘোষণা করা হয়েছে।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসনকে ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়ার পর থেকে তিনি অন্য কোনো মামলায় আর হাজিরা দেননি অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে। এই পরিস্থিতিতে আদালতকেই কারাগারে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে মঙ্গলবার গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় যে আদালত দণ্ড দিয়েছেন, সেখানে আরও একটি মামলা শেষ পর্যায়ে আছে।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি আসামি জিয়াউল হক মুন্নার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়। পুরান ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পরবর্তী যুক্তি উপস্থাপনের দিন নির্ধারণ করেন।

এই মামলায় এখন কেবল খালেদা জিয়ার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন বাকি। কিন্তু সাত মাসেও তার এই যুক্তি উপস্থাপন হয়নি। ফলে এই মামলার শুনানি কবে শেষ হবে, সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

এর মধ্যে কারাগারে খালেদা জিয়া অসুস্থ বলে খবর ছড়ায় এবং তার চিকিৎসায় মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সরকার। বিএনপি নেত্রীকে একবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হয়। এরপর আরেক দফা তাকে সেখানে নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু তিনি ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও যাবেন না বলে জানান।

বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরও চারটি মামলা চলছে এবং তার অনুপস্থিতির জন্য সবগুলো মামলারই কার্যক্রম আটকে আছে।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৮)