স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর মহাখালীতে যুবলীগ নেতা কাজী রাশেদ হত্যার দুই মাস পেরিয়ে গেলেও অধরা মূলপরিকল্পনাকারী সুন্দরী হোসেল ও তার সহযোগীরা। একমাত্র গ্রেফতার সোহেলের ভাতিজা যুবলীগ নেতা জাকিরের জবানবন্দি ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে জড়িত হিসেবে যাদের নাম জেনেছে তাদের কারো অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নয় পুলিশ। ফলে উল্টো হুমকিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে রাশেদের পরিবার।

কাজী রাশেদের পরিবারের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই মাস হতে চললেও হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা বনানী থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ইউসুফ সরদার সোহেল ওরফে সুন্দরী সোহেলসহ অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হওয়ায় বিচার নিয়ে শঙ্কিত তারা। এ ছাড়া খুনিদের হুমকি-ধামকিতো আছেই। সুন্দরী সোহেল দেশের বাইরে পালিয়েছে বলেও ধারণা তাদের।

তবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুন্দরী সোহেল দেশে নাকি দেশের বাইরে পালিয়েছে তা নিশ্চিত নয়। বিমানবন্দর দিয়ে পালানোর সুযোগ নেই। দেশেই আত্মগোপন করে থাকতে পারে। তার অবস্থান নিশ্চিত নয় পুলিশ।

কাজী রাশেদের স্ত্রী মৌসুমী বলেন, এক সপ্তাহ আগে ব্যক্তিগত কাজে তিতুমীর কলেজের সামনে যাই। সেখানে অপরিচিত একজন এসে হুমকি দেন। বলেন, বেশি দৌড়াদৌড়ি কইরো না। নইলে পা ভেঙে দেব। পরিবারের ক্ষতি করব। বিষয়টি থানায় জানানো হলেও প্রতিকার মেলেনি।

অপরিচিত লোক পাঠিয়ে মামা মেহেদি, সেজো দেবর রাজিবকেও সরাসরি হুমকি দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মৌসুমী বলেন, বাইরের নাম্বার থেকে ফোন আসে। রিসিভ করে কথা বলে না। আমরা হতাশ। খুন করে আর প্রতিবারই ছাড় পায় সুন্দরী সোহেল। ওসিও নাকি ওদের ভয় পায়। খুন করলেও পার পেয়ে যায়। এবারও যদি ছাড় পায় তাহলে আমাদের থাকাই তো কঠিন হয়ে যাবে।

রাশেদের মামা মেহেদি জানান, রাজু নামে একটা ছেলে হুমকি দিয়েছে। চল্লিশার অনুষ্ঠানের দিনে হঠাৎ করে হাজির হয়ে বলে, বেশি বাড়াবাড়ি না করতে। এ ছাড়া প্রতিবেশীদের নাম্বারে দিনরাত কল করে খোঁজ খবর নেয়, আমরা কে কখন কোথায় যাচ্ছি, আসছি। বিষয়গুলো আমরা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

খুনিদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে রাশেদের ভাই রাজীব জানান, সুন্দরী সোহেল সদলবলে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে শুনতেছি। মামলা নিয়ে বাড়াবাড়ি না করতে ভিওআইপি নাম্বার থেকে হুমকিও দেয়া হচ্ছে। তাদের হুমকি-ধামকিতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, কাজী রাশেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত জাকির হোসেন ছাড়া এখন পর্যন্ত আর কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। জাকির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যাদের নাম উল্লেখ করেছেন তাদের গ্রেফতারে জোর চেষ্টা চলছে। আমরা সবাইকে ট্রেস করার চেষ্টা করছি। সুযোগ পেলেই গ্রেফতার করা হবে। কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত নন বলেও জানান তিনি।

গত ১৫ জুলাই ভোরে সুন্দরী সোহেলের অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘রেইনবো টোয়েন্টিফোর নিউজ ডটকম’ অফিসের পেছনের গলি থেকে রাশেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

উদ্ধার করা সিসি ক্যামেরায় উঠে আসে, রাশেদকে হত্যার পর তার মরদেহ পলিথিন জড়িয়ে সুন্দরী সোহেলের ‘দেহরক্ষী’হাসু ও জহিরুল, দিপন ওরফে দিপু এবং মহাখালী দক্ষিণপাড়ার ডিশ ব্যবসায়ী ফিরোজ ধরাধরি করে রেইনবো কার্যালয় থেকে বের করে নিয়ে যায়।

১৯ জুলাই সোহেলের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে চারটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও ১২২ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে বনানী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় আরও একটি মামলা হয় সোহেলদের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর খিলক্ষেতের বরুয়া রাজাপুর এলাকায় রাশেদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত জহিরুলের বাসা সিলগালা করে দেয় পুলিশ।

রাশেদ হত্যা মামলায় গ্রেফতার বনানী থানা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জাকির হোসেন সরদার ওরফে ‘ভাতিজা জাকির’(সোহেলের চাচা)। জাকির আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, রাশেদ খুনে সুন্দরী সোহেল সরাসরি জড়িত।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৮)