কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কুয়াকাটা সৈকত। সৈকতে ঘেষা মনোরম সৌন্দর্যমণ্ডিত নারিকেল ও ঝাউবাগানের অন্তত পাঁচ শতাধিক গাছ সাগরের জলোচ্ছাসে ভেসে গেছে। সৈকতের জিরো পয়েন্টের বিশ ফুটসহ মূল সৈকতের অন্তত দুইশ ফুট এলাকা সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

গত দু’দিনে পূর্নিমার জোর প্রভাবে সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের তাণ্ডবে কুয়াকাটা সৈকতের সর্বত্রই এখন ধ্বংসের চিহ্ন। সাগরের ভাঙ্গনের ভয়াবহতায় দু’দিনেই বিলীন হয়ে গেছে ভাটার সময় সৈকতের প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ শেষ ওয়াকিং জোন। হুমকির মুখে পড়েছে সৈকত ঘেষা সিডরে বিধ্বস্ত খাজুরা ও মাঝিবাড়ি পয়েন্টের রক্ষা বাঁধ। এ বাঁধ ভাঙ্গার আতংকে কুয়াকাটায় হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন চরম উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে কুয়াকাটা সৈকত ঘুরে দেখা যায়, সাগরে জলোচ্ছাসে শতশত ভেঙ্গে যাওয়া গাছ সৈকতের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে। প্রচন্ড জোয়ারের তাণ্ডব ক্রমশ আঘাত হানছে কুয়াকাটার মূল বাঁধ। ইতিমধ্যে সৈকত ঘেষা শুটকি পল্লী সাগরের ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে গেছে। এ কারণে শতশত শুটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা তাদের শুটকির চাতাল অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছে। সৈকতের জিরো পয়েন্ট ঘেষা ব্যবসায়ীরা ভাঙ্গন আতংকে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিয়েছে। এছাড়া সৈকতের অন্তত দুই শতাধিক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী তাদের স্থাপনা সরিয়ে নিয়েছে। বর্তমানে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে মসজিদ, মন্দিরসহ শতাধিক ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গত রোববার ও সোমবারের জলোচ্ছাসে গোটা সৈকত লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান।
কুয়াকাটার খুটা জেলে শাহালম মিয়া জানান, গত দু’দিনে সৈকতে উঠিয়ে রাখা অন্তত ৩০টি খুটা জেলেদের নৌকা ট্রলার সাগরে ভেসে গেছে। এগুলো ভাটার সময় গঙ্গামতি ও ফাতড়ার বনাঞ্চল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী সাঈদ জানায়, কুয়াকাটা মূল বীচ প্রটেকশনের ব্যবস্থা না করলে আগামী বছর হয়তো কুয়াকাটার মুল বাঁধই বিলীন হয়ে যাবে। একাধিক হোটেল ব্যবসায়ী জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করে এখানে স্থাপনা করলেও বর্তমানে সৈকতের যে অবস্থা তাতে যেকোন সময় বাঁধ ভেঙ্গে গোটা এলাকা সাগরের পানির স্রোতে বিলীন হয়ে যেতে পারে। কুয়াকাটাকে মাষ্টার প্লানের আওতায় নেয়া হলেও কবে শুরু হবে এই কাজ তা নিয়ে তারাও উদ্বিগ্ন।
হোটেল ব্যবসায়ী মোস্তফা জানান, যেভাবে সাগরে সবকিছু ভেঙ্গে যাচ্ছে তাতে ব্যবসা-বাণিজ্য গুছিয়ে যেতে আর বেশি সময় লাগবে না।
কলাপাড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কুয়াকাটা বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। তবে বর্ষা মেীসুমে বীচ রক্ষা কার্যক্রম শুরু করা অসম্ভব।
(এমকেআর/এএস/জুলাই ১৬, ২০১৪)