স্টাফ রিপোর্টার : লন্ডন ভিত্তিক শিপিংবিষয়ক বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো সংবাদমাধ্যম 'লয়েডস লিস্টের' এ বছরের জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি কন্টেইনার পোর্টের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর আগের বছরের তুলনায় একধাপ এগিয়ে ৭০তম অবস্থানে উঠে আসবে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।

রবিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম অব বাংলাদেশ (আইবিএফবি) আয়োজিত ‘লজেস্টিক চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড অপারচুনিটি অব বিজনেস’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান।

নৌ-পরিবহনমন্ত্রী বলেন, লয়েডস লিস্টে ২০১২ সালে বিশ্বের মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল ৯৮তম। ২০১৭ সালের তালিকায় এ অবস্থান উঠে এসেছে ৭১ নম্বরে। এ বছরের সার্টিফিকেট আমরা এখনও পাইনি। তবে যেটুকু জেনেছি এ বছর আমরা আরও একধাপ এগিয়ে ৭০তম অবস্থানে আছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের শতকরা ৯২ ভাগই হয় চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। গত ১০ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এই বন্দরে কোনো অটোমেশন ব্যবস্থা ছিল না। আমরা আসার পর সমুদ্রে জাহাজের গতিবিধি, নিরাপত্তা দেখার জন্য সিটিএমএস চালু করেছি। ইতোমধ্যে প্রায় দুই শতাধিক ইকুইপমেন্ট এনেছি। কয়েকদিন আগে তিনটি ক্রেন এসেছে। এই মাসের মধ্যে আরও তিনটি আসবে। আশা করি এই বছরের মধ্যে ১০টি ক্রেন আমরা সংগ্রহ করতে পারবো।

চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো শ্রমিক অসন্তোষ নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, যে কোনো প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানের অ্যাকটিভিটি তেমন একটা হওয়ার কথা নয়। গত ৯ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কোনো শ্রমিক অসন্তোষ হয়নি। আমরা শ্রমিকদের গ্রহণযোগ্য মজুরি, বোনাস এবং চিকিৎসা সেবার মান বাড়িয়েছি। তারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছে।

মংলা বন্দরের বিষয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন এ বন্দর ছিল লোকসানে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এই বন্দরটি সাড়ে ১১ কোটি টাকার মতো লোকসান করেছিল। সেই মংলা বন্দর থেকে ২০১৭ সালে আমরা লাভ করেছি ৭৫ কোটি টাকা।

মংলা বন্দরের জন্য ক্রেন কেনা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মংলা বন্দরের বয়স হলো ৬৮ বছর। অথচ বন্দরটিতে কোনো ক্রেন নেই। আমরা ক্রেন কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মংলা বন্দরে কাস্টম অফিস নেই, সেখানে কাস্টম অফিসের কাজ চলছে। শিগগিরই মংলা বন্দরে কাস্টম অফিস চলে আসবে।

স্থলবন্দর উন্নয়নে সরকার ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০০১ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় দু’টি স্থলবন্দর চালু ছিল। শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আরও ১০টি স্থলবন্দর চালু করেছেন। এখন আমাদের স্থলবন্দর ১২টি। নতুন করে আরও ১১টি স্থলবন্দর করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে আমরা তামাবিল স্থলবন্দর উদ্বোধন করেছি। এই বন্তর থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। আমরা লাভ করেছি ৩ কোটি টাকা। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি তখন স্থলবন্দর থেকে লাভের পরিমাণ ছিল ২৬ কোটি টাকা। আর গত বছরের হিসাবে আমাদের লাভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি টাকা।

প্রশাসনের দক্ষতা বাড়াতে হবে মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, একজন রাজনীতিবিদের যে পরিকল্পনা এবং তার প্রকল্পের গুণগত বাস্তবায়নের দিকে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। এর জন্য সব চেয়ে প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রয়োজন। প্রশাসনিক দক্ষতা যদি না বাড়ে, তাহলে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করলেও হবে না, যদি আমাদের প্রসাশনের দক্ষতা বৃদ্ধি না পায়।

আইবিএফবি সভাপতি হুমায়ন রশিদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থান করেন ফরেস্ট ই কুকসন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ, সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮)