শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাটের চিতলমারীতে মধুমতি নদীর তীব্র আকার ধারণ করছে। নদীতে তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিদিন ভাঙনে চিতলমারী উপজেলার শৈলদাহ বাজারের অসংখ্য দোকানপাট, বসত বাড়ী, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হচ্ছে। তীব্র নদী ভাঙ্গনে কবলে পড়েছে ঢাকা-পিরোজপুর মহাসড়ক। ভাঙ্গনে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা-পিরোজপুর মহাসড়ক। ইতোমধ্যে এ সড়কের অধিকাংশ ভেঙ্গে নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। যে কোন মূহুর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে ঢাকা-পিরোজপুর মহাসড়কের সকল প্রকার যান চলাচল ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।

গত শনিবার রাত থেকে নতুন করে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে পরাণপুর গ্রামে। আতংকিত এ গ্রামের মানুষজন ঘরবাড়ি ভেঙ্গে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দূর-দূরান্তে। এ ঘটনায় তারা চরম হতাশায় ভুগছেন এলাকাবাসি। অবিলম্বে নদী ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা না করলে অচিরেই এ এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রবিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. লুৎফর রহমান ও তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেন মধুমতি নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, মধুমতি নদীর ভাঙ্গন রোধে জরুরী ভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, প্রতিবছর বর্যা মৌসুমে চিতলমারী উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের শৈলদাহ বাজার ও বড়বাড়িয়া ইউনিয়নের পরাণপুর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীর ভাঙ্গন শুরু হয়। গত এক সপ্তাহের ভাঙ্গনে শৈলদাহ বাজার, খেয়াঘাটসহ তার আশপাশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শতাধিক বসতবাড়ী ও পরানপুর গ্রামের গাছপালা, ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। অব্যাহত এ ভাঙ্গনে ঢাকা-পিরোজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কটিতে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও ঘর-বাড়ি নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। পৈত্রিক বসত-বাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্থরা বাঁচার তাগিদে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আবার অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে রাস্তার পাশের খাস জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিলেও এখনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।

চিতলমারীর শৈলদাহ বাজারের দোকান মালিক সরদার রোকা মিয়া হতাশা ব্যক্ত করে জানান, কিছু বুঝে উঠর আগেই গত শনিবার সকালে ১০মিনিটের মধ্যে আমার দোকান ঘরটি মালামালসহ নদীগর্ভে চলে যায়। এতে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি দোকানের জায়গা হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

এছাড়া বাজারের সেনেটারী দোকান মালিক সাহাদাৎ খান জানান, এই অব্যাহত ভাঙ্গনে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটিও নদী গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। তার প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

এছাড়া স্থনীয় লিন্টু শেখের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গনে পড়ে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয় বলে তিনি জানান।

বাজারের গ্রামীন চিকিৎসক আ. সোবাহান জানান ২০১৭ সালে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি নদীতে চলে গেছে। পরবর্তীতে তিনি পার্শবর্তী স্থানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললেও সেটি নিয়ে এখন তিনি আতঙ্কে ভুগছেন।

ক্ষতিগ্রস্থ শৈলদাহ বজারের রবিউল শিকদার জানান, শুধু আশ্বাসের বাণী শুনে আসছি কিন্তু নিদী ভাঙ্গন নিয়ে এখনো কার্যকার কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি

। স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা মো. আল অমিন শেখ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, এভাবে নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলে এ বাজারকে কোন ভাবে আর রক্ষাকরা সম্ভব হবে না। এখানকার খেয়াঘাটটি এখন চরম হুমকির মুখে। এই ঘাট থেকে প্রতিদিন গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, কোটালীপাড়া ও পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার শত শত লোক পারাপার হয়। বর্তমানে ভাঙ্গনের কবলে পড়ে খেয়া পারাপারের সময় নানা রকমের দুর্ঘটনা ঘটছে।

বড়বাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মাসুদ সরদার জানান, মধুমতি নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি স্থানীয় এমপি শেখ হেলাল উদ্দীনকে জানানো হয়েছে।

এমপি অচিরেই ভাঙ্গন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য রবিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দক্ষিন পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী মো. লুৎফর রহমান ও তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মো. আবুল হোসেনকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছেন।

(এসএকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৮)