স্টাফ রিপোর্টার : স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিধান নিয়ে জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণায় নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেছেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিটটির বিষয়ে শুনানি করতে গেলে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষ হওয়ার পর আসতে বলেন।

রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দ গত ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই সম্পূরক আবেদন দাখিল করেন। আজ তিনি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তফসিল ঘোষণার দিন-তারিখ ঠিক করা হয়নি এবং তফসিল ঘোষণার আগেই রিট করা ঠিক কি না এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনুছ আলী জানান, তফসিল ঘোষণার দিন তারিখ ঠিক না করা হলেও বা তফসিল ঘোষণা না করলেও নিয়ম অনুযায়ী তফসিল নিষেধাজ্ঞা চেয়ে রিট করা যায়।

তিনি আরও জানান, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্রে এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর দাখিল করার বিধান কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে জারি রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসন্ন ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করা হয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী আরও জানান, আজ মঙ্গলবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টি উপস্থাপন করার পর আদালত বলেছেন, অবকাশের পর সুপ্রিম কোর্টের নিয়মিত বেঞ্চের কার্যক্রম শুরু হলে আবেদনটি শুনানি করার পরামর্শ দিয়েছেন।

জানা যায়, ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রে দাখিল করার বিধানের গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে বলা হয়, ১. স্বতন্ত্র প্রার্থী যে নির্বাচনী এলাকা হইতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিতে ইচ্ছুক, কেবল সেই এলাকার ভোটারদের সমর্থন ফরম (ক)-তে উক্ত প্রার্থীর প্রার্থিতার অনুকূলে সংগ্রহ করতে হবে।

(২) স্বতন্ত্র প্রার্থী বা তদকর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি কর্তৃক তফসিলের ফরম-ক-তে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার এক শতাংশ ভোটারের তথ্য লিপিবদ্ধপূর্বক ভোটারগণের স্বাক্ষর কিংবা টিপসহি সংগ্রহ করিতে হইবে।

এই বিধান চ্যালেঞ্জ করে ২০০৪ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। রিটকারী আইনজীবী ইউনুছ আলী তখন জানিয়েছিলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে যারা সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন তাদের নিজ এলাকার মোট ভোটারের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর লাগবে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময়। প্রার্থীর নিজ আসনে যদি পাঁচ লাখ ভোটার থাকে, তাহলে ভোটারদের মধ্যে থেকে পাঁচ হাজার ভোটারের নাম সই নিয়ে মনোনয়নপত্র নির্বাচন অফিসে দাখিল করতে হবে। কিন্তু যারা দলীয়ভাবে নির্বাচন করবে তাদের ক্ষেত্রে এই শর্ত প্রযোজ্য হবে না। এই আইনটি একটি বৈষম্যমূলক এবং সাংঘর্ষিক আইন। সংবিধানের ৭, ২০, ২৬, ২৭, ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ কারণে আইনটি চ্যালেঞ্জ করে রিট করি। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৪ সালের ৫ মে হাইকোর্টেও একটি বেঞ্চ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর মনোনয়নপত্রে দাখিল করার বিধান কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে। ২০১৪ সালের ৯ জুনের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি), আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ জানান, এখনো তারা ওই রুলের জবাব দেননি এবং সেই রুলের চূড়ান্ত নিষ্পত্তিও হয়নি। আমি একাধিকবার রুল শুনানির জন্য আবেদন করলেও নির্বাচন কমিশনের আইনজীবীর বার বার সময় আবেদনের কারণে রুল শুনানি হয়নি। বর্তমানে ওই রুলটি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির জন্য রয়েছে। কোর্ট খুললে রুলটি চূড়ান্ত শুনানির জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানাবো। এ কারণে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার উপর নিষেধাজ্ঞা চেয়েছি।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮)