সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আদালতের স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এক সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ির চলাচলের রাস্তার প্রাচীর ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে সাতক্ষীরার সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিনসহ তিনজনকে তিন মাস করে দেওয়ানী কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে আশাশুনি জ্যেষ্ঠ সহকারি জজ সাবরিনা চৌধুরী এ রায় দেন।

অপর সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন,আশাশুনির সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুষমা সুলতানা ও আশাশুনি সদর ইউনিয়ন তহশীলদার কামাল হোসেন।

আশাশুনি সদর ইউনিয়নের সদর গ্রামের মৃত মানিক হালদারের স্ত্রী ননী বালা হালদারের দায়েরকৃত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত বছরের ৩ জুলাই সরকারি পুকুরে যাওয়ার সুবিধার্থে আশাশুনি সদর তহশিলদার কামাল হোসেন ননী বালা হালদারের দীর্ঘ দিনের চলাচলের ব্যক্তিগত রাস্তা সংলগ্ন প্রাচীর ভেঙে দেওয়ার জন্য হুমকি দেন।

এ ঘটনায় ননী বালা হালদার বাদি হয়ে গত বছরের ৫ জুলাই সাতক্ষীরার আশাশুনি জ্যেষ্ট সহকারি জজ আদালতে মামলা ( দেঃ ৬০/১৭) দায়ের করে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা করেন। মামলায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, আশাশুনি উপজেলা সহকারি ভূমি কমিশনার ও আশাশুনি সদর ইউনিয়ন তহশীলদারকে বিবাদী করা হয়। বিবাদী পক্ষে কৌশুলী অ্যাড. গাজী লুৎফর রহমান আদালতে হাজিরা দেন। ওই বছরের ২৬ জুলাই বিচারক ওই জমিতে না যাওয়ার জন্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারির নির্দেশ দেন। ২ আগষ্ট নিষেধাজ্ঞার নোটিশ জারি করা হয়। ৪ আগষ্ট জেলা প্রশাসক ও অতিরিক্ত জেলা

প্রশাসকের সহায়তায় তহশীলদার কামাল হোসেন একজন রাজমিস্ত্রী ও দু’জন শ্রমিককে নিয়ে রাস্তার প্রাচীর ভেঙে দেন।

মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, আদালতের নিষেজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রাচীর ভাঙার ঘটনায় বাদি ননী বালা হালদার গত বছরের ৬ নভেম্বর একই আদালতে ১৩/১৭নং ভায়োলেশন মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদর ইউনিয়ন তহশীলদারকে বিবাদী করা হয়। বাদির অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় বিচারক মঙ্গলবার বিবাদী তিনজনের বিরুদ্ধে তিন মাস করে দেওয়ানী কারাদণ্ডাদেশ দিয়ে আগামি এক মাসের মধ্যে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। ব্যর্থতায় দণ্ডাদেশ কার্যকরের জন্য তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যুর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সিভিল প্রসিডিউরের ৩৯ আদেশ ২(৩) রুল এর বিধানমতে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে তিন মাসের দেওয়ানি কারাদন্ড দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই ২০১৬ থেকে ২০১৮ সালের ৬ মার্চ পর্যন্ত সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন আবুল কাসেম মো. মহিউদ্দিন। বর্তমানে তিনি বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব।

অপরদিকে আশাশুনির সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুষমা সুলতানা বর্তমানে নরসিংদীর এডিসি হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। এ ছাড়া আশাশুনি সদর ইউনিয়নের তহশীলদার কামাল হোসেন বর্তমানেও একই কর্মস্থলে রয়েছেন। বাদি পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা জজ কোর্টের জ্যেষ্ট আইনজীবী অ্যাড. আলাউদ্দিন আহম্মদ।

জলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবু সুফিয়ান জেলা প্রশাসকসহ তিন প্রশাসনিক কর্মকর্তার কারাদণ্ডের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮)