আল মাহবোব আলম, মদন (নেত্রকোনা) : নেত্রকোণার মদন উচিতপুর ট্রলার ঘাটে ইজারাদার  সাবেক মেম্বার সিরাজের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। 

মঙ্গলবার ঘাটে সরজমিনে গেলে রেইট চার্ট ঝুলানো না থাকায় ইচ্ছা মাফিক টোল আদায় করায় পরিবহণ ও যাত্রীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে ভোক্তভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়। অধিক মুনাফা লাভের আশায় অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে তিনি টোল আদায় করছেন।

ভাসমান ব্যবসায়ী, ট্রলার মালিক সমিতির সদস্য ও যাত্রীরা প্রতিবাদ করলে উল্টো নানা ভয়ভীতি ও প্রভাব দেখাচ্ছেন ইজারাদার সিরাজুল ইসলাম ও তার লোকজন। এ নিয়ে ইজারাদার ও ট্রলার মালিক সমিতির সদস্যদের দ্বন্ধ প্রকট আকারে ধারণ করছে। তারপরেও থামছে না স্থানীয় প্রভাবশালী ইজারাদারের দৌরাত্ম। এমন আচরনে ক্ষোদ্ধ ক্ষতিগ্রস্ত ট্রলার মালিক, ব্যবসায়ী ও যাত্রীরা।

সাধারণত গরু, ছাগল,হাসঁ-মুরগী,পাটশলা,কলাসহ যে কোন মালামাল নিয়ে এ পথে গেলে তাকে বাধ্যতামূলক টোল দিতে হয়। ট্রলার ঘাটে মালামালের টোল কেন দিবে এর প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের লোকজনের হাতে লাঞ্চিত হতে হয়। ঐতিহ্যবাহী এ ঘাটের সুনাম বিনষ্ট, ক্রেতা ও পর্যটক বিমুখ করতে পায়তারা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, মদন উপজেলার মিনি কক্স বাজার হিসেবে খ্যাত উচিতপুর ট্রলার ঘাট যেখানে প্রতিদিন শতাধিক ট্রলার উপজেলার বিভিন্ন জায়াগা থেকে যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া করে। প্রতিটি ট্রলারের নিকট থেকে প্রতিদিন ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকার টোল আদায় করছে ইজারাদার। অপর দিকে রাস্তা দখল করে ভাসমান অস্থায়ী দোকান বরাদ্দ দিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।

এ ছাড়া বাস,রিক্সা ,সিএনজির নিকট থেকেও রশিদ বিহীন টোল আদায়ের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইজারাদারকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করে মালামালের কোন টাকা না নিতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রতিকার নেই।

মাঘান গ্রামের যাত্রী অন্তর মিয়া জানান, আমি দেওয়ান বাজার থেকে ১০ আটি পাটশলা ক্রয় করে এ ঘাটে পৌঁছতেই আমার নিকটে ৩০ টাকা টোল চায়। পরে আমি ২০ টাকা দিয়ে কোন রকম মান রক্ষা করি। প্রতিদিন আমার মতো অনেক যাত্রী মালামাল নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ সুুনজর দেবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

ভাসমান মনোহারী ব্যবসায়ী সোহেল রানা,ফেরদৌস মিয়া জানান,আমরা ৪ মাসের জন্য ৮ হাজার টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে রাস্তায় দোকান বসানোর জায়গা বরাদ্ধ নিয়েছি। টাকা না দিলে ইজারাদার দোকান বসাতে দেয়না।

ট্রলার মালিক গোবিন্দশ্রী গ্রামের আবুল মিয়া ও কদমশ্রী গ্রামের খালেক মিয়া জানান, আমাদের প্রতিদিন ১২ টি ও ১৪ টি ট্রলার বাবদ প্রতিদিন মোট ৭ হাজার টাকা দিতে হয় ইজারাদারকে। যদি ২টি ট্রলারও আসে তা হলেও ৭ হাজার টাকা দিতে হয়। তবে তারা রেইট চার্ট ঝুলানোর দাবী জানান।

ইজারাদার সিরাজ মেম্বার জানান, ১২ লাখ টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছি। টাকা নেব নাতো কি নেব। যদি গোবিন্দশ্রী ও মাঘান থেকে ২টি ট্রলারও ঘাটে আসে মোট ৭ হাজার টাকা দিতে হবে। প্রতিদিন গোবিন্দশ্রী থেকে উচিতপুর পর্যন্ত ২৬টি, কদমশ্রী থেকে ১৪টি ট্রলার আসা যাওয়া করার কথা। মালামালের টোল আদায়ের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আমরা টোল আদায় করি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ওয়ালীউল হাসান বলেন, সভার সিন্ধান্তের আলোকে এ ঘাটে মালামাল আনা নেওয়ার সময় ইজারাদার কোন যাত্রীর নিকট থেকে টোল আদায় করতে পারবে না। যদি আদায় করে তা হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(এএমএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৮)