স্টাফ রিপোর্টার : ভৌতিক মামলা দিয়ে সরকার নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলছে -এমন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘অত্যাচার, নির্যাতন নির্মমতা, পাশবিকতা, অমানবিকতা পরিহার করে সোজা পথে আসুন। সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি পথ বের করুন।’

তিনি বলেন, ‘অন্যথায় জাতি আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। এ দেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। সংবিধানকে লঙ্ঘন করা, মানুষের অধিকার হরণ করার অপরাধে আপনাদেরকে অব্যশই একদিন না একদিন কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’

শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, ‘আজকে শুধু উদ্বেগ নয়, আমরা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছি। আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি যে, নির্বাচনকে সামনে রেখে এ অবৈধ সরকার যে ড্রাম বাজাচ্ছে, ঢোল বাজাচ্ছে। তাদের মত করে নির্বাচন সাজিয়ে নেয়ার জন্য সব কাজ করছে। সেই সময়ে শুধু বিরোধী দল নয়, যারা বিরোধী মত ধারণ করে তাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ভৌতিক মামলা সাজাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন এ সমস্ত ব্যক্তিদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। গত পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৩৬টি মামলা হয়েছে। এতে এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্য ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জন, অজ্ঞাতনামা আসামি ২ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০ জন এবং গ্রেফতার হয়েছে ৩ হাজার ৬৯০ জন। এটাই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে দেশে একটা সুষ্ঠু অবাধ নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এভাবে আজকে মামলা দিয়ে গোটা নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণ ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পরিবর্তিত হয়। দেশে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। কিন্তু এ অবৈধ সরকার আমাদের কোনো গণতন্ত্র দিচ্ছে। জনগণের অধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করছে। কোন দেশে এইভাবে আছে, নির্বাচনের তিনমাস আগে এভাবে গণগ্রেফতার গণমামলা চলতে থাকে? সবচেয়ে স্বৈরাচারি দেশেও এভাবে মামলা রুজু করা হয় না। জনগণ যাতে নির্বাচনে না আসে তার ব্যবস্থা করা হয় না।’

খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে মামলার শুনানি চলার বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘আদালতের এ আদেশ ন্যায় বিচার পরিপন্হী। মৌলিক অধিকারের পরিপন্হী। তার (খালেদা জিয়া) উপস্থিতিতে শুনানি হওয়ার নিয়ম, তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। কারা কর্তৃপক্ষ বারবার স্বীকার করছে, মেডিকেল বোর্ড বসিয়েছে। বোর্ডের রিপোর্ট যতটুকু বাইরে এসেছে তাতেও অসুস্থতার কথা বলা হয়েছে। ক্ষোভের সাথে, পরিতাপের সাথে আমরা এ আদেশ মেনে নিতে পারছি না। তাকে সংবিধান সম্মত সুযোগ দেয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘ন্যায় বিচারের জন্য শুনানি বন্ধ করে অবিলম্বে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। অবিলম্বে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছি না। এত তাড়া কেন? সরকারের তাড়া বুঝতে পারছি, তারা দেশনেত্রীকে আটকে রাখতে চায়। কিন্তু আদালতের কাছে এটা আমরা প্রত্যাশা করি না।’

ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন পাস এবং বাম মোর্চা মিছিলে পুলিশি প্রহারের ঘটনায় সরকারের সমালোচনা করেন বিএনপি মহাসচিব। একই সঙ্গে ২২ সেপ্টেম্বর জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার কর্মসূচিতে বিএনপি যোগ দেবে কিনা -এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘আমরা দেখি এখনও সিদ্ধান্ত নেইনি, আমরা জানাব।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিঞা, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সাহিদা রফিক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবীর খান, শামসুদ্দিন দিদার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮)