রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : রাজনৈতিক বিরোধের কারণে বাবাকে মারপিট করে মুখ ও দু’পা বেঁধে পুকুরের পানিতে ফেলে দেওয়ার পর তার চার বছরের শিশু সন্তানকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পানিতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পুষ্পকাটি গ্রামের সরদারবাড়ি জামে মসজিদের পুকুর থেকে পুলিশ ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে।

নিহত শিশুর নাম ফারিহা সুলতানা। সে দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণ পুষ্পকাটি গ্রামের ফরহাদ হোসেনের ছেলে।

পুষ্পকাটি গ্রামের সাজ্জিনা খাতুন তার স্বামীর দেওয়া বক্তব্য থেকে জানান, একই গ্রামের মাছ ব্যবসায়ি মোকছেদ গাজীর কাজ করে তার স্বামী ফরহাদ হোসেন। মোকছেদ গাজী বিএনপি করায় তার স্বামীকে সেখানে কাজ না করার জন্য আওয়ামী লীগের কয়েকজন স্থানীয় নেতা কর্মী বার বার চাপ সৃষ্টি করে আসছিল। ১০ দিন আগে মোকছেদকে পুলিশ নাশকতার একটি মামলায় ধরে নিয়ে জেল হাজতে পাঠায়। এরপর থেকে তার স্বামীর উপর চাপ আরো বেড়ে যায়। হুমকিও দেওয়া হয় তার স্বামীকে।

তিনি আরো জানান, বৃহষ্পতিবার মাগরিবের নামাজের পর তার স্বামী বাড়ি ফিরে আসে। এ সময় মেয়ে ফারিহা বাবার কাছে খাবার চায়। একপর্যায়ে ফরহাদ মেয়েকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী ইবাদুলের মুদি দোকানে নিয়ে যায়। সেখান থেকে খাবার কিনে বাড়ি ফেরার পথে একই গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম, ইবাদুল ইসলাম, শহীদুল ইসলাম, রিপন হোসেন, লাল্টু ও নাজমুলসহ কয়েকজন তার স্বামীকে সরদার বাড়ি মসজিদের পুকুরের পাশে বাঁশবাগানে নিয়ে যায়। সেখানে পিছন দিক থেকে তার স্বামীর মাথায় ও হাতে আঘাত করলে তিনি পড়ে যান। এ সময় ফারিহা কান্না কাটি করলে তাকে কয়েকজন ধরে অন্যত্র চলে যায়। পরে ফরহাদের মুখের মধ্যে কাদা ও বাঁশপাতা ঢুকিয়ে দিয়ে তারই পরিহিত গেঞ্জি দিয়ে মুখ ও পরিহিত লুঙ্গি দিয়ে দু’ পা বেঁধে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় ফরহাদ পুকুর পাড়ে থাকা একটি চারা খেজুরগাছ ধরে ডাঙায় ওঠে। পরে সেথানে পড়ে থাকা তার মোবাইল ফোনে মামা আলম মোবাইল করলে তিনি অল্প কথায় তার অবস্থান নিশ্চিত করেন। এক পর্যায়ে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। রাতে মেয়ের সন্ধান করেও তাকে পাওয়া যায়নি। শুক্রবার সকাল ৬টার দিকে স্থানীয়রা পুকুর ঘাটে ফারিহার লাশ ভাসতে দেখে পুলিশে খবর দেয়।

এদিকে সরেজমিনে শুক্রবার সকালে দক্ষিণ পুষ্পকাটি গ্রামে গেলে সরদার বাড়ি মসজিদের পুকুরপাড়ের বাসিন্দা গোলাম মোস্তফা, হালিমা খাতুন, সাবুর আলী, আব্দুর রহমান কেউই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেননি। কেই শোনেননি বাচ্চার কান্না বা তার বাবা ফরহাদের চিৎকার। পুকুর পাড়ের বাঁশবাগানে যেখানে ফরহাদকে মারপিট করার পর মুখ ও পা বেঁধে পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে বলে দেখানো হয় সেখানে পায়ের ছাপ থাকলেও পুকুরের পানির স্তর থেকে পাড়ে লাগানো চারা খেজুর গাছ ধরে মুখ ও পা বাঁধা কোন ব্যক্তির ওঠা সহজ নয়। তা ছাড়া পানি থেকে উঠে মামা আলমের ফোন রিসিভ করাটাও নাটকীয় বলে মনে হয়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লগি কর্মী পুষ্পকাটি গ্রামের জিয়ারুল ইসলাম জানান, ফরহাদ একটি হত্যা মামলার আসামী। ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্র“য়ারি পরবর্তী সেকেন্দ্রা বটতলায় শেখ হাসিনার প্রতীকি খবর খোড়ে মোকছেদ। সম্প্রতি তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এ ঘটনার বদলা নিতে মোকছেদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের বিপদে ফেলতে ফরহাদ নিজের মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর বা পুকুরে ফেলে দিয়ে হত্যা করে নিজের পা ও মুখ নিজে বেধে নাটক সাজিয়েছে।

দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মান্নান আলী জানান, শিশু ফারিহার লাশ ময়না তদন্তের জন্য শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮)