শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বঙ্গোপসাগরে ঝড়ের কবলে পড়ে সুন্দরবন উপকূলে ডুবে যাওয়া ১৫টি ফিশিং ট্রলারসহ ৩৫ জেলে গত দু’দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। নিখোঁজদের স্বজনেরা ভীড় করেছে উপকূলের মৎস্য বন্দরগুলোতে।

নিখোঁজদের মধ্যে বরগুনার দুটি ট্রলারের মধ্যে এফবি দেলোয়ার মোল্লা ও এফবি হাবিব খলিফা ট্রলারের ৩৩ জেলে এছাড়া বাগেরহাটের শরণখোলার এফবি মারিয়া- ১ নামের ট্রলারের ১৭ জেলের মধ্যে ১৫ জেলেকে ভারতীয় জেলেরা উদ্ধার করলেও ২ জেলে এখনো নিখোঁজ রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে উত্তাল বঙ্গোপসাগরে ঝড়ো বাতাসে টানে ভারতীয় জলসীমার রায়দিঘী এলাকায় চলে যায়। বৃহস্পতিবার রাতে বঙ্গোপসাগরে সুন্দরবন উপকূলের ফেয়ারওয়ে বয়া, মান্দরবাড়িয়া, নারিকেলবাড়িয়া, দুবলাসহ একাধিক জায়গায় পৃথক ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। নিখোঁজ ট্রলার ও জেলেদের উদ্ধারে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনীর সদস্যরা। মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের গোয়েন্দা কর্মকর্তা লেপটেনেন্ট. জাহিদ আল হাসান এতথ্য নিশ্চিত করেছে।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে ঝড়সহ বিশাল-বিশাল ঢেউ কারনে সাগর অসান্ত হয়ে ওঠায় সব মাছ ধরা ট্রলার সুন্দরবনসহ উপকূলে ফিরে এসেছে। শত শত ফিশিং ট্রলরা বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে।

বর্তমানে উপক’লীয় জেলা বাগেরহাটের শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, মোংলা, রামপাল, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, পাড়েরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকার সহস্রাধিক ট্রলার সুন্দরবনের ভেদাখালী, কচিখালী, হিরণপয়েন্ট, দুবলারচর, আলোরকোল, নারকেলবাড়িয়া এলাকায় নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছে। বাগেরহটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ এতথ্য নিম্চিত করেছে।

মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের অপারেশন অফিসার লে. জাহিদ আল হাসান ও বঙ্গোপসাগর থেকে ফিরে আসা জেলেসহ মৎস্যজীতি সমিতির নেতারা জানান, বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে গভীর সাগরে অন্তত ১৫টি ফিসিং ট্রলার ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ওই সকল ট্রলারে থাকা শতাধিক জেলেকে আশপাশের ট্রলারগুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হলেও এখন পর্যন্ত নিখোঁজ রয়েছেন আরো ৩৫ জেলে। তবে, শতাধিক জেলেকে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা গেলেও একটি ছাড়া অন্য কোন ট্রলার উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে, নিখোঁজ ওই সকল ট্রলার ও জেলেদের উদ্ধারে গভরি সমুদ্রে নৌবাহিনী ও উপকূলে কোস্টগার্ডের কচিখালী ও দুবলা ষ্টেশনের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। কচিখালী ষ্টেশনের অভিযানে বৃস্পতিবার রাতে সুন্দরবন উপকূরের কচিখালীর বাদামতলা এলাকা থেকে ইঞ্জিন বিকল হয়ে ভাসতে থাকা এফবি নূও আলম নামের ১টি ট্রলার ও ৮ জেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জেলেরা সুস্থ্য রয়েছেন। তাদের বাড়ী পটুয়াখালী এলাকায়।

জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির শরণখোলা উপজেলা সভাপতি মো. আবুল হোসেন জানান, বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের রাজৈর গ্রামের শহিদুল ফরাজী এফবি মারিয়া - ১ ট্রলারটি বৃহস্পতিবার রাতে ঝড়ের কবলে পড়ে ভারতীয় উপকূলের কাছাকাছি রায়দিঘী এলাকায় ডুবে যায়। এসময় কাছাকাছি অবস্থানরত ভারতীয় একটি ট্রলার ১৫ জেলেকে উদ্ধার করে। ভারতীয় ওই ট্রলার থেকে রবীন বাবু নামের এক ব্যক্তি শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে মোবাইল ফোনে বাংলাদেশী ১৫ জেলেকে উদ্ধারের খরবটি নিশ্চিত করেছে। এখনো ওই ট্রলারটিসহ ২ জেলের কোন সন্ধান মেলেনি। ভারতে উদ্ধার হওয়া ১৫ জেলের বাড়ী বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।

ডুবে যাওয়া এফবি মারিয়া - ১ ট্রলারের জেলেরা হলেন, ট্রলার মালিক শহিদুল ফরাজী (৩৭), আনোয়ার ফরাজী (৪৫), কামরুল ফরাজী (৩৫), কবির হাওলাদার (২৫), আশরাফুল (২২), আলম মিস্ত্রি (৪২), কবির ঘরামী (৩৫), এনামুল (২৩), ইয়াছিন (৪০), শদিুল হাওলাদার (৪০), রাব্বি তালুকদার (১৯), ডাবলু হাওলাদার (২৩), মোদাচ্ছের (৩৫), ইউসুফ (৪০), বাবুল হাওলাদার (৩৮), আলমগীর (৩২) ও রিয়ার (২০)।

বাগেরহাটের শরণখোলার মৎস্য ব্যবসায়ী এম সাইফুল ইসলাম খোকন, কবির আড়ৎদার ও জামাল হাওলাদার জানান, বৃহস্পতিবার সাগর থেকে ফেরার পথে মৎস্য ব্যবসায়ী তহিদুল তালুকদারের এফবি আজমীর শরীফ-১, বিলাশ রায় কালুর এফবি সাগর - ১, মালেক মোল্ল্রার এফবি শাওন এবং ইউনুচ শিকদারের ১টি ট্রলারসহ ৪টি ট্রলরের কোনো সন্ধান পাওয়ো যাচ্ছেনা।

সুন্দরবনের দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল আহমেদ মোবাইল ফোনে জানান, বঙ্গোপসাগরে সুন্দরবন উপকূলের ফেয়ারওয়ে বয়া, মান্দরবাড়িয়া, নারিকেলবাড়িয়া, দুবলাসহ একাধিক জায়গায় পৃথক ট্রলার ডুবির ঘটনা ঘটে। এরমধ্যে বরগুনার এফবি দেলোয়ার মোল্লা এফবি হাবিব, এফবি খলিফা, ছগির পালোয়ানের এফবি আরমান, আহম্মদ মিস্ত্রীর এফবি তাজেনুর, দুলালের এফবি মায়ের দোয়া ও খলিলের এফবি মীমসহ ১৫টি ট্রলার ডুবেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখনও ৩৫ জেলে নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ ট্রলার ও জেলেদের উদ্ধারে শুক্রবার সকাল থেকে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী বঙ্গোপসাগরে উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। তবে সাগর থেকে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী গত দুই দিনেও কোন জেলেকে উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়নি। যে সব জেলে উদ্ধার হয়েছে তাদেরকে আশপাশের অন্য ট্রলার ও জেলেরাই উদ্ধার করেছেন বলেও জানান তিনি।

বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, দুর্যোগে সাগর ছেলে সহ¯্রাধিক ট্রলার সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়ে রয়েছে। আশ্রিত এসব ট্রলার ও জেলেদের নিরাপত্তার জন্য সংশ্লিষ্ট স্টেশন ও ক্যাম্পের দায়িত্বরত বনরক্ষীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

(এসএকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮)