উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ ডেস্ক : জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত আজ এক সমাবেশে বক্তারা বলেছেন, সরকারি চাকুরিতে কোটা সম্পর্কিত সচিব কমিটির সাম্প্রতিক সুপারিশ অবিলম্বে বাতিল করে সকল গ্রেডে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে প্রিলিমিনারী থেকে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।  

তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের মর্যাদা সমুন্নত রাখার ব্যাপারে আন্তরিক ও সচেতন থাকলেও প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একশ্রেণীর স্বাধীনতাবিরোধী কর্মকর্তা প্রতিটি পদক্ষেপে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করার ব্যাপারে সচেষ্ট রয়েছে। সাম্প্রতিক সচিব কমিটির সুপারিশ এরই একটি নতুন সংস্করণ।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, সচিব কমিটির সুপারিশের পর দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা মিষ্টি বিতরণ করেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সাধারণ ছাত্র নামধারী কিছু দিকভ্রান্ত যুবককের দাবি মেনে নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী এই সুপারিশের ফলে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের দীর্ঘদিনের আকাঙ্খার প্রতিফলন হয়েছে।

প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধীরা অনেকদিন থেকে এটাই চেয়েছিল যে, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা যাতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে না পারে। তারা যাতে সারাজীবন পিয়ন, দারোয়ান ও সুইপারের মতো নিম্ন পদে চাকুরি করে।

বক্তারা বলেন, জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত করেছে, সেই বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর নাগরিক হয়ে থাকতে পারে না।
তারা বলেন, সচিব কমিটির এই সিদ্ধান্ত সরকারের উন্নয়ন, অগ্রগতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশাসন গড়ে তোলার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এটা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এ ধরনের কোন সিদ্ধান্ত যাতে আগামী মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয় না এ ব্যাপারে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ করেন।

সংগঠনের সভাপতি মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে এবং কোষাধ্যক্ষ ও দপ্তর সম্পাদক আহমাদ রাসেলের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন শহীদ সংসদ সদস্য নুরুল হক হাওলাদারের কন্যা ও সংগঠনের প্রেসিডিয়াম সদস্য জোবায়দা হক অজন্তা, সহ-সভাপতি ওমর ফারুক সাগর, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আনিসুর রহমান মোল্লা, আজহারুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, জোবায়েদ আলম ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি কেএম আবদুল্লাহ সোহাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অনলাইন কমান্ডের সভাপতি নাজমুল হক, সাধারণ সম্পাদক লামিয়া খানম, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান প্রজন্ম পরিষদের সদস্য সচিব কামরুজ্জামান শিমুল এবং বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়ের সভাপতি মাহফুজ শাকিল ও সাধারণ সম্পাদক খালেদুজ্জামান ফরছিম।

বক্তারা বলেন, ৭৫ সালে জাতির পিতা হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র হয়েছে। পরবর্তীতে ২০০১ সালের পর মুক্তিযোদ্ধা কোটা আবারো ষড়যন্ত্রের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়। এভাবে মুক্তিযুদ্ধের পর ২৯ বছর কোটায় কোন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের চাকুরি হয়নি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এবং পরবর্তী ২৯ বছর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে নিস্পেষিত হয়েছে। কোটা সংস্কার বা বাতিল করার আগে এই ২৯ বছরের হিসাব দিতে হবে। এ ছাড়া এই ৩০% কোটা তাদের আত্মমর্যাদা ও সম্মানের সাথে জড়িত। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে হলেও এই কোটা বহাল রাখা জরুরি।

মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা একটি অসাম্প্রদায়িক জঙ্গিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন স্বাধীনতা বিরোধীমুক্ত করতেও সরকারের প্রতি আহবান জানান।

সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা সচিব কমিটির সুপারিশ বাতিলসহ ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন, দাবিগুলো হলো-

১) জাতির পিতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তিকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

২) বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন করতে হবে।

৩) ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রেখে তা বাস্তবায়নে কমিশন গঠন করে প্রিলিমিনারী থেকে কোটা শতভাগ বাস্তবায়ন করতে হবে।

৪) মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চলমান সকল নিয়োগ কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ সকল মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কোটার শূন্য পদ সংরক্ষণ করে বিশেষ নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে হবে।

৫) ১৯৭২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩০% মুক্তিযোদ্ধা কোটায় শূন্য পদগুলোতে চলতি বছরেই নিয়োগ দিতে হবে।

৬) বীর মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন প্রবাসী সরকারের প্রথম সেনাবাহিনী, তাই তাদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে পেনশন, বোনাস, রেশনসহ সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৭) রাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে স্বাধীনতাবিরোধীদের সম্পদ বাজেয়াপ্তসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের উত্তরসূরীদের সকল চাকুরিতে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে এবং স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করতে হবে।

৮) ঢাবি ভিসির বাসভবনে হামলাসহ দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী স্বঘোষিত রাজাকারদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে এবং ৯)মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ অন্য সকলের জন্য চাকুরিতে প্রবেশের বয়সসীমা তুলে দিতে হবে।

সমাবেশ থেকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর রোববার প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় এবং জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি পালনের জন্যে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানের সভাপতি সাজ্জাদ হোসেন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের প্রতি আহবান জানান।

(পিআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮)