রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া নবগঙ্গা নদীর উত্তর পাড়ে চোরখালী এবং দক্ষিণ পাড়ে কচুবাড়িয়া গ্রাম। ওই স্থানের নবগঙ্গা নদীতে রয়েছে লোহার কাঠামো এবং কাঠের পাটাতনের তৈরি একটি সেতু। 

পৌর এলাকার এ সেতুটির কাঠের পাটাতন প্রায় ৭ মাস পূর্বে ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চললেও সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ মেরামতের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। সেতুটি সংস্কার না করায় পৌর এলাকাসহ উপজেলার অন্তত নয়টি গ্রামের মানুষজন চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।

লোহাগড়া পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, কাঠ ও লোহার তৈরী এ সেতুটি ৯০ দশকে লোহাগড়া বাজার এলাকায় ছিল। পরে সেখানে ব্রীজ নির্মাণ করা হলে সেতুটিকে সরিয়ে এই এলাকায় স্থাপন করা হয়। সেতুটি প্রায় ৩০০ ফুটের মতো লম্বা।

শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটির দক্ষিণপাশ দিয়ে পাটাতনের প্রায় অর্ধেকাংশের অধিকাংশ কাঠই ভেঙে গেছে। যা আছে তার অধিকাংশই দুর্বল। পাটাতনের কাঠ ভেঙ্গে জায়গায় জায়গায় অনেক ফাঁকা হয়ে গেছে। নিচের লোহার খুুঁটি ও ফ্রেমের অবস্থাও নড়বড়ে। মরিচা ধরে এর স্থায়িত্ব নেই বললেই চলে। সেতুতে ওঠার দুই পাশের মাটি অনেক নিচেয় নেমে গেছে। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন শত শত লোকজন পার হচ্ছেন।

ওই সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে কথা হয় স্থানীয় চোরখালী গ্রামের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা কওসার শেখ, ব্যবসায়ী সাহিদুর রহমান, কানাই দাস ও কাজল পাল, চাকুরিজীবী মো. সেলিম এবং কৃষক গোলাম সরোয়ারের সঙ্গে। তারা জানান, এ সেতুর কাছাকাছি দুইপাড়ে জয়পুর, চোরখালী, গোফাডাঙ্গা, ধোপাদহ, বাহিরপাড়া, নারানদিয়া, পুরুলিয়া, কচুবাড়িয়া ও রামপুরা গ্রাম।

সেতুর দক্ষিণপাড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী এড়েন্দা বাজার। এসব গ্রামের ব্যবসায়ী, কৃষিজীবী ও সাধারণ ক্রেতাদের জন্য যেমন সেতুটি খুবই প্রয়োজনীয়, তেমনি শিক্ষার্থীদের এ সেতু পার হয়ে যেতে হয় কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, লক্ষ্মীপাশা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, লক্ষ্মীপাশা আদর্শ বিদ্যালয় ও নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজসহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। লোহাগড়া ও নড়াইল সদরে যেতে সেতুটি খুবই দরকার। এ সেতু দিয়ে সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, টেম্পু, অটোরিকশা, নছিমনসহ এ ধরনের যানবাহন চলাচল করত। পাটাতন ভেঙ্গে যাওয়ায় এসব পরিবহন চলতে পারছে না।

কাশিপুর গ্রামের কলেজ পড়ুয়া হোসেন শিকদার ও চোরখালী গ্রামের রবিউল মোল্লা গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে সেতু পার হতে গিয়ে সাইকেলসহ নদীতে পড়েছেন। হোসেন শিকদারের মাথা কেটে গেছে। এ ধরনের ছোটখাটো দুর্ঘটনা প্রায়ই ঘটছে।

সেতু অতিকষ্টে পার হচ্ছিলেন চোরখালী গ্রামের বৃদ্ধা তারা বিবি (৬৫) ও ধোপাদহ গ্রামের নূরজাহান বেগম (৫০)। তারা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘মানুষ না মরলি ভাঙাচোরা সারবিনে নে। এ এটটা মরণফাঁদ।’

ওই এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলর বুলবুল আহম্মদ ভুলু বলেন, সেতুটি দীর্ঘ দিন ধরে সংস্কার বা মেরামত না করায় জন ভোগান্তি চরমে পৌঁচেছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে সেতুটি সংস্কার করা হবে।

লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম বলেন, সেতুটির বেহাল দশায় ওই এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে আছেন। এটির ৪৫ ফুট অংশ ভাঙাচোরা। মেরামতের জন্য পৌরসভা থেকে পরিকল্পনা ও হিসাব তৈরির কাজ চলছে।

(আরএম/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮)