মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের খৈয়ারভাঙ্গা হাফিজিয়া এতিমখানায় বৃহস্পতিবার রাতে এশার নামাজ না পড়ে পাশের বাজারে একটি চায়ের দোকানে টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখার অভিযোগে এতিমাখানার ৮ম শ্রেণীর  দুই ছাত্র  অলিদ ও নাজমুলকে বেত দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে অধ্যক্ষ। শনিবার দুপুরে এমন অভিযোগ করেছে আহতের পরিবার।

পারিবারিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে এতিমখানা থেকে বের হয়ে পাশের বাজারে একটি চায়ের দোকানে টিভিতে বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান ম্যাচের ক্রিকেট খেলা দেখতে গিয়েছিল একই এলাকার মৃত লিটন হাওলাদারের ছেলে মো. নাজমুল হাওলাদার ও শিরখাড়া ইউনিয়নের কুচিয়ামারা গ্রামের মাওলানা মাইন উদ্দিনের ছেলে মো. অলিদ।

১০ মিনিট খেলা দেখে বোডিং রুমে আসলেই এতিমখানার অধ্যক্ষ মাওলানা মো. ওবাইদুল্লাহ বিন বাশার ছাত্র দুইজনকে ডেকে নিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেত দিয়ে আঘাত করে। এতে ঐ দুই ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে।

শুক্রবার সকালে অলিদ ও নাজমুল তার পরিবারকে বিষয়টি জানায়। পরিবারের লোকজন এতিমখানার ম্যানেজিং কমিটিসহ স্থানীয়দের বিষয়টি জানায় এবং এর সুষ্ঠু বিচার দাবি করে। ঘটনা জানাজানি হলে এতিমখানা ছেড়ে গাঁ ঢাকা দিয়েছে অধ্যক্ষ।

আহত ছাত্র অলিদ জানায়, আমি ১০ মিনিট খেলা দেখে রুমে যাওয়ার পরে হুজুর ডেকে নিয়েই বড় একটা বেত দিয়ে পিটিয়েছে। আমি ক্ষমা চাইলে আরো বেশী পিটাতে থাকে। আমাকে বেত দিয়ে ২০-৩০টি আঘাত করেছে। আমার দুই হাতে, পায়ে, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করার অনেক স্থান ফুলে গেছে। শরীরের অনেক ব্যাথা হয়েছে।

অলিদের বাবা মাওলানা মাইন উদ্দিন জানান, একজন শিক্ষক শাসন করতে পারে। আমিও একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। আমার মাদ্রাসা অনেক দূরে হওয়ায় এখানে রেখে পড়াশুনা করতে দিয়েছে। তাই বলে এভাবে আঘাত করবে, এটা কোন ভাবেই ঠিক না। আমার এর বিচার চাই।

খৈয়ারভাঙ্গা হাফেজিয়া এতিমখানার প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মুজাহিরুল হক জানান, আমাদের কাছে অলিদের পরিবার অধ্যক্ষের বিচার চেয়েছে। আমরা ম্যানেজিং কমিটির সকলকে নিয়ে শুক্রবার রাতে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অধ্যক্ষ এতিমখানার সকল হিসাব বুঝিয়ে তিন দিনের মধ্যে এখান থেকে তাকে বিদায় দেয়া হবে। আর এই সিদ্ধান্ত না মানলে তাকে আইনের হাতে তুলে দেয়া হবে।

খৈয়ারভাঙ্গা হাফেজিয়া এতিমখানার অধ্যক্ষ মাওলানা ওবাইদুল্লাহ বিন বাশার ফোনে বলেন, ঐ দুই ছাত্রকে এক আরবি শিক্ষক এশার নামাজ পড়তে নিয়ে গেলে, তারা পিছন থেকে পালিয়ে একটি দোকানে গিয়ে টিভি দেখে। তাই তারা আসার পর, তাদের শাসন করেছি। তবে শাসনটা একটু বেশী হয়ে গেছে। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, এ রকম ঘটনা হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তাছাড়া ভুক্তভোগীর পরিবার আমাদের কাছে অভিযোগ করলে, মামলা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

(এএসএ/এসপি/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৮)