স্টাফ রিপোর্টার : মংলা ও বুড়িমারী বন্দরে সেবা দিতে বছরে প্রায় ৩১ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন হয় -এমন তথ্য দিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, এ দুই বন্দরে সেবা দিতে সবক্ষেত্রে শতভাগ দুর্নীতি হয়।

রবিবার টিআইবির কার্যালয়ে মংলা বন্দর ও কাস্টম হাউজ এবং বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন : আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায় শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়।

মংলা ও বুড়িমারী বন্দরের সেবার ক্ষেত্রে শতভাগ দুর্নীতি হওয়া সংক্রান্ত সুস্পষ্ট তথ্য টিআইবির কাছে আছে জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ, শ্রমিক নেতাদের একাংশ, দালালদের একটি অংশের প্রভাব এবং যাদের ওপর দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ বা সুশাসন প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব তাদের একাংশের যোগসাজশে এসব দুর্নীতি হয়।

তিনি বলেন, যোগসাজশের মাধ্যমে বন্দরে যে দুর্নীতি হয় তা কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। কর্তৃপক্ষ যদি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চাই, তাহলে তা সম্ভব। শুধু যেটা দরকার তা হলো সদিচ্ছার। যারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দেয়া যে দুর্নীতি করলে শাস্তি পেতে হয়।

টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মংলা কাস্টম হাউজ থেকে ৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা এবং বন্দর থেকে ২২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর বুড়িমারী কাস্টম হাউজ থেকে ৪৫ কোটি এবং বন্দর থেকে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমপক্ষে ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূত লেনদেন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর মধ্যে শুল্ক স্টেশনে আমদানির ক্ষেত্রে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা ও রফতানির ক্ষেত্রে ৩৪ লাখ টাকা। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানির ক্ষেত্রে ৪৩ লাখ টাকা ও রফতানির ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূত আদায় করেছে। বাকি ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা মোটর শ্রমিকরা নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়েছে।

অন্যদিকে মংলা কাস্টম হাউজ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিয়মবহির্ভূত গাড়ি থেকে ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, কন্টেইনার থেকে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং বাল্ক থেকে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা নিয়েছে। আর মংলা বন্দরের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে গাড়ি থেকে ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, কন্টেইনার থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং বাল্ক থেকে ৫৮ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বন্দরের এই দুর্নীতি আইনের চোখে প্রমাণিত না, যে কারণে আমরা এটাকে অভিযোগ বলছি। যারা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতির শিকার হয়ে, নিজেরাও দুর্নীতির অংশীদার হয়ে যাচ্ছে তাদের তথ্য এবং অন্যান্য অংশীজন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আমাদের ম্যাথলজি অনুযায়ী প্রমাণিত বিধায় আমরা এটাকে (দুর্নীতি) বলছি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যারা বলেন জোর করে টাকা নিচ্ছি না…, তারা যারা দুর্নীতি করেন তারা তো বিভিন্নভাবে সেটা ব্যাখ্যা করেন। এটা অনেকে স্পিড মানি বলে থাকেন, আমাদের সরকারের একাংশ থেকেও আমরা সেটা শুনে থাকি। তবে আমরা সেটাকে দুর্নীতিই বলি।

‘বকশিস হিসাবে যে অতিরিক্ত টাকা দেয়া হয় সেটা খুশি হয়ে দিচ্ছি এটা কেউ স্বীকার করবে না। তারা কিন্তু জিম্মি হয়ে দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন এবং জিম্মি হয়ে দুর্নীতির অংশীদারও হয়ে যাচ্ছেন। আমাদের জাতীয় খানা জরিপে ৮৯ শতাংশ মানুষ যারা দুর্নীতির শিকার হয়েছেন, ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন তারা বলেছেন- ঘুষ না দিলে আমরা সেবা পাবো না, কাজেই ঘুষ দিতে বাধ্য হয়’ যোগ করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৮)