রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : কালিগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা ও মানবাধিকার কর্মী মোসলেম আলী হত্যা মামলার আসামী হাফিজুর রহমান শিমুলকে গ্রেফতার ও তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিবর্তণের দাবিতে সংবাদ সস্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সস্মেলন করেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাচাই গ্রামের মৃত মোসলেম আলীর স্ত্রী আফরোজা পারভিন।

আফরোজা সুলতানা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে বলেন, তার স্বামী মোসলেম আলী বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার কালিগঞ্জ শাখার সভাপতি হিসেবে মৃত্যুর পুর্বমুহুর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে গেছেন।

২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর যুদ্ধাপরাধী রাজাকার জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাসির রায় কার্যকরের পর কালিগঞ্জসহ দেজজুড়ে জামায়াত শিবির ও বিএনপি’র নেতা কর্মীরা দেশজুড়ে নাশকতার লক্ষ্যে হত্যা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে ওই বছরের ১৭ ডিসেম্বর কালিগঞ্জের মুকুন্দ মধুসুধনপুর চৌমুহুনীতে মুকুন্দমধুসুধনপুর গ্রামের লুৎফর রহমান গাইনের ছেলে বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক চারটি নাশকতা মামলার আসামী হাফিজুর রহমান শিমুলের নেতৃত্বে তার স্বামীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

শোকে মুহ্যমান থাকা অবস্থায় তড়িঘড়ি করে ঘটনার রাতেই তিনি বাদি হয়ে হাফিজুর রহমান শিমুলসহ ২৪ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের নামে থানায় মামলা করেন। পরবর্তীতে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে তার পালক পুত্র জাকির হোসেন এজাহার নামীয় ২৪জন সহ ৪৩ জনের নামে আদালতে সম্পুরক মামলা দায়ের করে।

বিচারক থানায় দায়েরকৃত মামলাটি পুলিশ প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত কার্যক্রম স্থগিত করেন। ২০১৪ সালের ২২ মে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক নকীব অয়জুল হক তদন্ত শেষে হাফিজুর রহমান শিমুলের নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালতে নারাজির আবেদন খারিজ হলে তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন করেন।

চলতি বছরের ১৩ ফেব্র“য়ারি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক এম এ হামিদ তা মঞ্জুর করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নিম্ন আদালতে পাঠিয়ে দেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি কালিগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক রাজীব হোসেন তদন্ত শুরু করেন। শুরুতেই তিনি আসামী সাংবাদিক হাফিজুর রহমান শিমুলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একইসঙ্গে অবস্থান করায় পুলিশ সুপার মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেন।

তিনি যথাযথ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি দেবহাটা থানার নতুন ভবন উদ্বোধন করতে এলে বিষয়টি তাকে অবহিত করলে তিনি খুলনা রেঞ্জের ডিআইজিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপরও তদন্তকারি কর্মকর্তা ২১ নং এজাহারভুক্ত হাফিজুর রহমান শিমুলের সঙ্গে সখ্যাতা বজায় রাখার বিষয়ে প্রতিবাদ করলে তিনি হাফিজুরকে নিরীহ দাবি করে তার বিরুদ্ধে কিছুই করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন।

আফরোজা আরো বলেন,মামলার যথাযথ তদন্ত হচ্ছে না এমন অভিযোগ করতে গত ১৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় তার পালক পুত্র জাকির হোসেন বন্ধু আইয়ুব আলীকে নিয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের অভ্যর্থনা কক্ষে যায়। বিকেল পৌনে তিনটার দিনে ডিওয়াই ওয়ান আযম খান ঘটনা শোনার পর তদন্ত কর্মকর্তা রাজীব হোসেনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে জাকিরকে সেখানে যেতে বলেন।

এরপরও জাকির পুলিশ সুপারের সঙ্গে দেখা করার জন্য অভ্যর্থনা কক্ষে বসে থাকলে ডিওয়াইওয়ান আযম খান তাকে গালিগালাজ করে পুলিশ সুপারের কার্যালয় এলাকা থেকে হেকে বের করে দেন। এমতাস্থায় তিনি তার স্বামী হত্যা মামলার যথাযথ তদন্ত হবে বলে বলে মনে করছেন না। এজন্য তদন্তকারি কর্মকর্তার পরিবর্তণ জরুরী। হাফিজুর রহমান শিমুলকে গ্রেফতার করে তাকে রিমাণ্ডে নিলে এ হত্যার নেপথ্য মদতদাতা ও অর্থযোগানদাতাদের নাম বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হাফিজুর রহমান শিমুলকে গ্রেফতার ও মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পরিবর্তনের বিষয়টি সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
সংবাদ সস্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন মৃত মোসলেম আলীর পালক পুত্র জাকির হোসেন মোল্লা।

জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রাজীব হোসেন জানান, তদন্ত করে বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্মকর্তার সঙ্গে পরামর্শ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮)