প্রসেনজিৎ দাস, আগরতলা  : শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য বিজেপি সরকারের প্রথম উপহার। কর্মচারীদের উৎসব অগ্রিম ও অনুদান বাড়ানাে হলাে। 

রাজ্য অর্থ দফতর সােমবার এই মর্মে নির্দেশিকা প্রকাশ করলাে। স্বভাবতই খুশির আবহ শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে। শিক্ষক কর্মচারীদের যারা এতদিন ধরে উৎসব অনুদান পেতেন তাদের আবহ তা ৩০০ টাকা বাড়ানাে হলাে। এতদিন ধরে রাজ্যের শিক্ষক কর্মচারীরা উৎসব অনুদান পেতেন ৭০০ টাকা। তা বৃদ্ধি করে ১০০০ টাকা করা হয়েছে। একইভাবে উৎসব অগ্রিম সর্বস্তরে ১০০০ টাকা করে বৃদ্ধি করা হয়েছে। দুর্গাপূজার প্রাককালে এই অর্থ বৃদ্ধির খবরে খুশির আবহ সর্বস্তরের শিক্ষক কর্মচারীদের মধ্যে।

উল্লেখ্য, এতদিন ধরে গ্রুপ এ স্তরের কর্মচারীরা উৎসব অগ্রিম পেতেন ৫ হাজার টাকা তা বৃদ্ধি করে ৬ হাজার টাকা করা হয়েছে। একইরকম ভাবে গ্রুপ বি কর্মচারীদের উৎসব অগ্রিম ছিলাে ৪ হাজার
৫০০ টাকা। তা বৃদ্ধি করে ৫ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি সহ যে সমস্ত কর্মচারীরা এতদিন ধরে উৎসব।

অগ্রিম ৪ হাজার টাকা পেতেন তাদের তা বৃদ্ধি করে ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। অর্থ দফতরের থেকে প্রকাশিত নির্দেশিকা নম্বর এফ.১০(৫১)এফআইএন (জি)/৬৩ (এল) তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর। এছাড়া Tজ যেসমস্ত কর্মচারীরা এতদিন ধরে ৭০০ টাকা করে উৎসব হাওয়া অনুদান পেতেন তা বৃদ্ধি করে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে। মূলত গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মচারীরা এই উৎসব অনুদান পেয়ে থাকেন।

একইরকম ভাবে যারা পেনশন পান তারাও নঘলা আকাশ এই অতিরিক্ত অর্থ পাবেন। গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি কর্মচারী ছাড়াও হােমগার্ড, এসপিও, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি সর্বনিম্ন সহায়করাও এই উৎসব অনুদান পাবেন। একইরকম ভাবে ডিআরডব্লিও পার্ট টাইম কর্মচারীরাও ১০০০ টাকা করে উৎসব অনুদান পাবেন বলে অর্থ দফতরের পক্ষ থেকে জানানাে হয়েছে।

উল্লেখ্য, বামফ্রন্ট শাসনে দীর্ঘদিন ধরে উৎসব অনুদানের পরিমাণ ছিলাে ৫০০ টাকা। বিগত পাঁচ বছর আগে তা বৃদ্ধি করে সাতশাে টাকা করা হয়। কিন্তু এরপর আর কোন অর্থ বৃদ্ধি ।করা হয়নি। যার ফলে ক্ষুব্ধ ছিলাে দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক কর্মচারীরা। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাে তারা সর্বস্তরের কর্মচারীদের চাহিদা মেটাবে। যদিও এখনাে সপ্তম বেতন কমিশন কার্যকর না হওয়ায় চাপা ক্ষোভ রয়েছে সর্বস্তরের কর্মচারীদের মধ্যে। এই প্রেক্ষাপটে উৎসব অগ্রিম ও অনুদান বৃদ্ধি অবশ্যই মলমের কাজ করবে। রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা।

দুর্গাপূজার প্রাককালে কর্মচারীদের জন্য এই উপহার অবশ্যই স্বস্তিদায়ক। যদিও অনেকে আশা করেছিলেন উৎসব অনুদানের পরিমাণ অনেকটাই বৃদ্ধি করা হবে। কারণ, ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অর্থমন্ত্রী কয়েকটি সভায় আলােচনা করতে গিয়ে বলেছিলেন, বামফ্রন্ট যা দিয়েছিলাে তার থেকে অনেকটাই বেশি অর্থ বৃদ্ধি করা হবে। যেহেতু উৎসব অগ্রিম কর্মচারীরা এককালীন পেলেও পরবর্তী সময়ে তা তাদের বেতন থেকে কাটা হয়। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ মাসের মধ্যে এই টাকা কাটতে হয়। উৎসব অনুদান কর্মচারীদের কাছে অবশ্যই বড় খুশির খবর।

কারণ, এই টাকা ফিরিয়ে দিতে হয় না। যদিও পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশ কয়েকটি রাজ্যেই কর্মচারীরা বােনাস পেয়ে থাকেন। যার পরিমাণ অনেকটাই বেশি। কিন্তু ত্রিপুরাতে বামফ্রন্ট সরকার থাকাকালীন বারংবার বেশ কয়েকটি কর্মচারী সংগঠনের পক্ষ থেকে বােনাস দেওয়ার দাবি উঠলেও তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিলাে। বিজেপি সরকার ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেশিদিন হয়নি। স্বভাবতই বােনাস দেওয়ার মতাে সিদ্ধান্ত এখনাে তারা গ্রহণ করার সময় পায়নি। কিন্তু উৎসব অনুদানের পরিমাণ আরাে বৃদ্ধি করা হলে খুশি অনেকটাই বাড়তাে। যেহেতু এই টাকাটি কর্মচারী অংশের সর্বনিন্ম দুটি স্তরে কার্যকর হয়ে থাকে। গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি কর্মচারীরাই উৎসব অনুদান পেয়ে থাকে। তাই আশাকরা গিয়েছিলাে বিজেপি সরকার উৎসব অনুদান দেড় থেকে দুহাজার টাকা করবে।

যদিও বামফ্রন্ট সরকারের তুলনায় প্রায় ৫০ শতাংশ অর্থ বৃদ্ধিতে খুশি সাধারণ কর্মচারীরা। যদিও এ নিয়ে অর্থমন্ত্রী সােমবার কোন ধরনের সাংবাদিক সম্মেলন করেননি। তথ্য সংস্কৃতি দফতরের পক্ষ থেকে যে প্রেস রিলিজ প্রকাশিত করা হয়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়নি এই বৃদ্ধিতে রাজ্য সরকারের কোষাগার থেকে অতিরিক্ত কত টাকা ব্যয় হবে। উৎসব অগ্রিম অনুদান বৃদ্ধি করা হলেও শিক্ষক কর্মচারীদের পাখির চোখ কিন্তু সপ্তম বেতন কমিশন।

কারণ, বিজেপি সরকারের অন্যতম প্রতিশ্রুতি এই সপ্তম বেতন কমিশন। ইতিমধ্যে দুদফায় কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। সর্বশেষ কমিশনের মেয়াদ বৃদ্ধি সময় অনুযায়ী পি পি ভার্মা কমিশনকে সময় দেওয়া হয়েছে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ অবধি। আশা করা যাচ্ছে এই সময়ের মধ্যে কমিশন তাদের রিপাের্ট পেশ করবে। এবং ১৯-শের শুরুতেই শিক্ষক কর্মচারীরা তা পেয়ে যাবেন।

যদিও মূল সমস্যা অর্থনীতি সংকট। ইতিমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে বিশেষ প্যাকেজের দাবি জানিয়ে এসছেন। রাজ্য সরকারের দাবি অনুযায়ী এই টাকার পরিমাণ দেড় হাজার কোটি টাকা। এখন মােদি সরকার আদৌ এই টাকা দেবে কিনা তাই এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। আর যদি না দেয় তবে রাজ্য সরকার কিভাবে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে।

(পিডি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৮)