রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার চাঞ্চল্যকর কলেজ ছাত্র গৌতম সরকার হত্যা মামলায় চারজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর ও ছয়জনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকাল ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ সাদিকুল ইসলাম তালুকদার এ রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার বহেরা গ্রামের আলী আহম্মেদ শাওন, সদর উপজেলার ভাড়–খালি গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন, নাজমুল গাজী ও মহাদেবনগর গ্রামের সাজু শেখ।

খালাসপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন ভাড়–খালি গ্রামের ওমর ফারুক, নূর আহম্মেদ মুক্ত, মহাদেবনগর গ্রামের মহসিন আলী, কবিরুল ইসলাম মিঠু, জামসেদ আলী ও ফিরোজা খাতুন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে সাতটার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোনা ইউনিয়নের মহাদেবনগর গ্রামের ইউপি সদস্য গনেশ সরকারের ছেলে সীমান্ত ডিগ্রী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র গৌতম সরকারকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে তার বাড়ির পাশে মোকলেছুর রহমানের নির্মাণাধীন বাড়িতে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তার গালের মধ্যে গুলের কৌটা ঢুকিয়ে মুখে ক্রস টেপ সেঁেট দেওয়া হয়। পরে লাশের বিভিন্ন স্থানে দড়ি দিয়ে ১২টি ইট ঝুলিয়ে পার্শ্ববর্তী মোকলেছুর রহমানের পুকুরে বাঁশের সঙ্গে বেঁধে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

নিহতের পিতা গনেশ সরকার বাদি হয়ে আলী আহম্মেদ শাওন, শাহাদাৎ হোসেন, সাজু শেখ, নাজমুল হোসেন, মুহসিন আলী, কবিরুল ইসলাম মিঠুর নামে ওই বছরের ১৬ ডিসেম্বর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামীদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি পরদিন ওমর ফারুক, নূর আহম্মেদ মুক্ত ও জামসেদের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি সম্পুরক অভিযোগ দায়ের করা হয়। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর সম্পুরক অভিযোগটি আদালতে পাঠানো হয়। নাজমুল ও শাহাদাৎ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। যদিও মামলার শেষ পর্যায়ে এসে নাজমুল ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন জানালে আদালত তা গ্রহণ করেনি।

মামলায় পুলিশ সাজু শেখের মা ফিরোজা খাতুনকে গ্রেফতার করে। সদর থানার উপপরিদর্শক আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে মামলাটির তদন্তভার গত বছরের ৫ জানুয়ারি মমালার ডিবি পুলিশের উপপরিদর্শক আশরাফুল ইসলামের কাছে ন্যস্ত করা হয়। গত বছরের ১৮ এপ্রিল উপরোক্ত ১০ আসামীর নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগত্র দাখিল করেন। চলতি বছরের পহেলা মার্চ সকল আসামীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠণ করা হয়।

মামলার ১৬জন সাক্ষী ও নথি পর্যালোচনা শেষে শাহাদাৎ হোসেন, নাজমুল গাজী, সাজু শেখ ও নুর আহম্মদ শাওনের বিরুদ্ধে পরষ্পর যোগসাজসে হত্যার অভিযোগ সন্দোহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাদেরকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেন। দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় ওমর ফারুক, নূর আহম্মেদ মুক্ত, মহসিন আলী, কবিরুল ইসলাম মিঠু, জামসেদ আলী ও ফিরোজা খাতুনকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। একই সাথে রায় এর অনুলিপি হাতে পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে আসামীরা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবনে বলে আদেশে বলা হয়েছে।

গ্রেফতারের পর থেকে শাহাদাৎ হোসেন ও নাজমুল হোসেন জেল হাজতে রয়েছেন। জামিনে মুক্তি পেয়ে ফিরোজা খাতুন, আলী আহম্মেদ শাওন ও সাজু শেখ পলাতক রয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ফিরোজার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আসামীপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন, অ্যাড. মিজানুর রহমান পিন্টু, অ্যাড. আশরাফুল আলম, অ্যাড আক্তারুজ্জামান প্রমুখ।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচোলনা করেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি, অতিরিক্ত পিপি অ্যাড. তপন কুমার দাস, অ্যাড. জিএম লুৎফর রহমান, অ্যাড. তোজাম্মেল হোসেন তোজাম।

জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. ওসমান গনি বলেন, চাঞ্চল্যকর এ মামলাটি প্রায় দু’ বছরের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। আদালতের রায় সন্তোষজনক।

এ মামলার বাদী গনেশ সরকার বলেন, তিনি আসামীদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে যেসব না এসেছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছেন। অথচ ছয় জন আসামীকে বেকসুর খালাস দেওয়ায় তিনি হতাশ হয়েছে। আদেশের সত্যায়িত অনুলিপি হাতে পাওয়ার পর আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে উচ্চ আদালতে যাবেন।

(আরকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮)