শরীয়তপুর প্রতিনিধি : কোন কাজ না করেই টি,আর প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে। তারা এক পয়সারও কোন কাজ না করে বরাদ্দকৃত সমূদয় অর্থ ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে গেছে। সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার কাজে উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ এক কর্মকর্তা সহায়তা করেছেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে শরীয়তপুর সদর উপজেলায় গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন (টিআর) কর্মসূচির আওতায় শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্যের মাধ্যমে ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর কর্তৃক বরাদ্দকৃত নগদ অর্থ দ্বারা বাস্তবায়নযোগ্য কয়েকটি প্রকল্পের সমূদয় অর্থ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি কোন কাজ না করেই আত্মসাৎ করেছে।

প্রকল্প গুলোর নাম হচ্ছে (১) শরীয়তপুর পৌরসভা ৮ নং ওয়ার্ড স্বর্নঘোষ দিঘীর পাড় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ক্লাবের মাটি ভরাট। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান ৭৮ হাজার ২০২ টাকা ৬৯ পয়সা। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি আব্দুস সামাদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক জসিম মাদবর।

(২) তুলাসার ইউনিয়নের আড়িঁগাও মেইন সড়ক হতে মতিয়ার রহমান বেপারীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পূন:নির্মান। বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমান ৭৮ হাজার ২০২ টাকা ৬৯ পয়সা। প্রকল্পের সভাপতি মো. জসিম মাদবর, সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।

(৩) শরীয়তপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ড আলমগীর হাওলাদারের বাড়ি হতে কবির বিশ্বাসের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত। বরাদ্দের পরিমান ৪০ হাজার টাকা। প্রকল্পের সভাপতি আলমগীর হাওলাদার ও সাধারণ সম্পাদক তার স্ত্রী আকলিমা আক্তার বাবলী।

(৪) শরীয়তপুর জেলা শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে মুক্তিযোদ্ধা রাজ্জাকের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের কাজ। বরাদ্দের পরিমান ৪০ হাজার টাকা। এই প্রকল্পটিরও সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে আলমগীর হাওলাদার ও তার স্ত্রী বাবলী। এমনি করে আরো একটি কিন্ডার গার্টেনসহ অনেক প্রকল্পই নয়ছয় করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

সরেজমিন পরিদর্শণ করে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতা লাভের কিছুদিন পর স্বর্নঘোষ দিঘীর পাড় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ক্লাবের নামে একটি ঘর নির্মান করা হয়।

ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক খান জানান, ঘরটি স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুস সামাদ তালুকদারের নিজ জমিতে স্থাপন করা হয়। আব্দুস সামাদ তালুকদারকে সভাপতি ও তাকে (ফজলুল হক খান) সাধারণ সম্পাদক করে ক্লাবের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০০১ সালে ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সামাদ তালুকদার আওয়ামীলীগ থেকে বেড়িয়ে গিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করেন। তখন তিনি পুলিশের সহায়তায় ক্লাব থেকে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মীদের বেড় করে দিয়ে নিজ হাতে ওই ক্লাব ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন। এরপর সামাদ তালুকদারকে ক্লাবের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে ক্লাবের সহ-মভাপতি শাহাজহান হাওলাদারকে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।

সামাদ তালুকদার ক্লাবের জমি ২০১০ সালে একটি এনজিও‘র কাছে বিক্রি করে দেন। মাত্র এক মাস আগে ক্লাব ঘরটিও স্থানীয় রমজান মিয়া নামে এক ব্যসায়ীর কাছে বিক্রি করেন তিনি। সম্প্রতি আব্দুস সামাদ তালুকদার বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদ ক্লাবের নামে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছ থেকে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৭৮ হাজার ২০২ টাকার একটি প্রকল্প এনে কোন কাজ না করেই সমুদয় টাকা তুলে নিজের কাছে রাখেন।

এ বিষয়ে মিডিয়া কর্মীরা খোঁজ খবর নিতে গেলে তড়িঘড়ি করে নিজের বসত ঘরে ক্লাবের নামে একটি সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প বাস্তায়ন কমিটির সভাপতি আব্দুস সামাদ তালুকদার বলেন, বরাদ্দকৃত টাকা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংসদের নামে এম,পি সাহেব আমাকে দিয়েছেন। স্থানীয় কিছু সমস্যা সৃষ্টি হওয়া আর পুরনো ক্লাব ঘরটি বিক্রি করে দেয়ার কারনে নতুন করে নির্মান করা সম্ভব হয়নি। এখন আমি আমার বসত ঘরের এক অংশে ক্লাব ঘরটির সাইন বোর্ড লাগিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছি। ক্লাবের জন্য নির্ধারিত জমি রয়েছে। সে জমিতে আরো কিছু বরাদ্দ নিয়ে সুন্দর করে একটি ক্লাব ঘর নির্মাম করবো।

এদিকে তুলাসার ইউনিয়েনের আড়িঁগাও মেইন সড়ক হতে মতিয়ার রহমান বেপারীর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্পটির কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. জসিম মাদবর জানিয়েছেন, আমি অপর একটি কাবিখা প্রকল্পের সাথে মিলিয়ে উল্লেখিত প্রকল্পের টাকা দিয়ে ইটের রাস্তা সোলিং করে দিয়েছি।

শরীয়তপুর সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নাহার বেগম বলেন, যে বা যারা প্রকল্পের নামে টাকা তুলে নিয়ে কোন কাজ করেননি, তাদের প্রকল্পগুলো পূনরায় পরিদর্শণ করবো। অভিযোগের সত্যতা পেলে হয় টাকা ফেরৎ নেয়ার ব্যবস্থা করবো অথবা নিয়ম মত মামলা করে দিব।

(কেএনআই/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৮)