শোকের আবহ ইচলাদিতে
বিধান সরকার : বুধবার সন্ধ্যায় শেষ হবে উজিরপুরে ইচলাদিতে বাস চাপায় নিহতদের ক্ষতি পূরণ, আহতদের উপযুক্ত চিকিৎসা আর দায়ী বাস চালককে গ্রেফতারের দাবীতে বাজার কমিটি ও স্থানীয়দের দেওয়া আল্টিমেটামের সময় সীমা।
এরমধ্যে হানিফ পরিবহনের পক্ষ থেকে কোন ব্যাবস্থা নেওয়া না হলে দক্ষিাণাঞ্চলে হানিফ পরিবহন বন্ধ করে দেওয়াসহ কঠোর কর্মসূচি নেওয়া হবে বলে জানালেন ইচলাদি বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আলম ফরাজী। সহায়তা বলতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফনে ১০ হাজার ও আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫হাজার টাকা ব্যাতীত আর কোন সহায়তা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। অপরদিকে দুর্ঘটনা ঘটানো হানিফ পরিবহনের পক্ষ থেকে এযাবৎ কোন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। তবে বরিশালের জেলা প্রশাসক মো.শহীদুল আলম বলেছেন, তারা ত্রাণ মন্ত্রলাণয়ে চিঠি ইতিমধ্যেই পাঠিয়েছেন। আরো সহায়তার জন্য প্রধাণ মন্ত্রীর দপ্তরে চিঠি পাঠানোর পাশাপাশি নিহতদের শিশু সন্তাদের সহায়তার জন্য দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণের ইচ্ছা রয়েছে তাদের।
সরেজমিন ইচলাদি গ্রামে গেলে দেখা যায়, ঘটনার ৫ দিন অতিবাহিত হলেও শোকের আবহ বিরাজমান। এই গ্রামের টিউশানি করিয়ে চলা নীল শরিফের অসুস্থ বৃদ্ধ বাবা ও দুই সন্তান নিয়ে ৫ সদস্যের সংসার ছিল। তার অসুস্থ পিতা ইয়াসিন শরীফ (৯৫) আজো জানেন না তার ছেলে বাস চাপায় মারা গেছেন। নীল শরিফের স্ত্রী খাদিজা বেগম (২৮) নির্বাক। এই বয়সে স্বামী হারিয়ে এখন শিফাত (৯) এবং ৬ মাসের কন্যা শিপাকে নিয়ে কোথায় যাবেন। অসুস্থ শ্বশুড়কে কিভাবে দেখবেন, মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়া এই চিন্তায় এখন নিশ্চুপ হয়ে গেছেন খাদিজা বেগম।
এমন অবস্থা মুন্ডুপাশা গ্রামের রিক্সা চালক মো. হারুন ফকির (৪০), একই গ্রামের অটোটেম্পুর চালক জুয়েল বিশ্বস (৪০), বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামের টেম্পু চালক মো. ইউনুচ হাওলাদার (৪২), উজিরপুর উপজেলার চাউলাহার গ্রামের রাজমিস্ত্রী মোজাম্মেল মৃধা (৪৫), ডহরপাড়া গ্রামের বাসের হেলপার সোহাগ ফকির (৩০), আসোহার গ্রামের গৃহবধূ মুন্নি বেগম(২৮), হামদর্দ কোম্পানীতে কর্মরত দক্ষিণ ধামুরা গ্রামের জাহাঙ্গীর বেপারী (৩৮), ইচলাদি গ্রামের কৃষক আ. হাকিম বেপারী (৬০)এবং ইচলাদি গ্রামের বিএম কলেজে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্র মো. মামুন আকনের (২১) বাড়িতে। নিহতদের মধ্যে কেবল মামুন আকনের পরিবার আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল হলেও অন্যদের অবস্থা বলতে নিহতরাই ছিলেন পরিবারের আয়ের প্রধান ব্যক্তি।
১১ জুলাই সন্ধ্যা সোয়া ৬টার এই দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষ দর্শীদের মধ্যে আনসার ভিডিপি কমান্ডার হারুন অর রশীদ, চায়ের দোকানী মো. আলাউদ্দিন সরদার জানান, হানিফ পরিবহনের বাসটির গতি ছিল দ্রুত। গতিরোধকের বাম পাশে চাকা নমিয়ে পাশে থাকা রিক্সা, মিশুক, টেম্পু, মসজিদের দানবাক্স, সামনে পড়া বাজারের লোকজন চাপা দিয়ে (২শ মিটার এলাকার) মেজর এমএ জলিল সেতুর টোল ঘরের আগে একটি রেইন্ট্রি গাছে গিয়ে ঠেকে গাড়িটি। এসময় বাসের চালক রাজৈর উপজেলার সুতারকান্দি গ্রামের মৃত নিজামউদ্দিন বেপারীর ছেলে মো. বেলাল হোসেন বেপারী (৫০) এবং সুপারভাইজর বাবুগঞ্জ উপজেলার রাকুদিয়া গ্রামের মো. মিলন পালিয়ে যায়। তারা আরো জানান, এই ঘটনায় সময় নিয়েছে মাত্র ২৮ সেকেন্ড।
স্থানীয়দের অনেকেই অভিযোগ করেছেন গাড়িটি ব্রেক ফেইল করেনি, চালক মোবাইলে কথা বলছিলেন। এর নেপথ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লোকাল পরিবহনের টিকিট ক্লার্ক মো. শাওন বলেন ব্রেক ফেইল করলে, দুর্ঘটনার পর বাসটি ফের চালু করা যেতন না। এই বক্তব্যের রেশ ধরে বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আলম ফরাজী অভিযোগ তোলেন প্রশাসন কথা দিয়েছিলেন, বাসটি আটক করে উজিরপুর থানায় নেওয়া হবে। কিন্তু তা না করে বরিশাল নিয়ে যায় এবং রাতের বেলায় পরিবহনের মালিক পক্ষ তা ঢাকায় নিয়ে যায়। তিনি আরো অভিযোগ করেন, এই ঘটনার ৫ দিন পাড় হলেও নিহতদের পরিবারে শান্তনা বা আহতদের দেখভালের জন্য হানিফ পরিবহনের পক্ষ থেকে কেউ আসেননি।
বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল আলম জানালেন, তাদের সাথেও হানিফ পরিবহনের কেউ যোগাযোগ করেননি। তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনার দিন তারা নিহতদের দাফনের জন্য ১০ হাজার এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, ঢাকাতে চিকিৎসাধীন ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কা জনক। তবে তিনি চাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারদের সহায়তার জন্য প্রধাণ মন্ত্রীর তহবিল থেকে সহায়তার ব্যাবস্থা করতে। এজন্য চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করেছেন। জেলা প্রশাসক আরো জানান, এধরণের দুর্ঘটনা এড়াতে শিগিরই মহাসড়কের দুই পাশ থেকে হাট বাজার সড়িয়ে নেওয়ার ব্যাবস্থা করবেন। এছাড়াও বিআরটিএর সাথে তিনি কথা বলেছেন, চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যাবস্থা করতে। তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলার জন্য।
এই দুর্ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুচ বলেন, বাস চালক মোবাইলে কথা বলায় এই দুর্ঘটনা। এজন্য চালকই দায়ী অন্য কোন কারণ নয়। তিনি আরো বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের প্রধাণমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে আর্থিক অনুদানের ব্যাবস্থা করবেন, যাতে তরে পরিবারগুলো টিকে থাকতে পারে।
(ওএস/এটিআর/জুলাই ১৬, ২০১৪)