শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় ফেসবুকে নগ্ন ছবি পোস্ট ও বারবার অনৈতিক প্রস্তাবেব যন্ত্রণা সইতে না পেরে দিশা মজুমদার (১৭) নামের এক কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে। 

আত্মহনণকারী দিশা উপজেলা খাসেরহাট কালিদাস বড়াল স্মৃতি মাহবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেনীর মেধাবী ছাত্রী ছিল। বুধবার রাতে দড়িউমাজুড়ি গ্রামের নিজ বাড়ীর ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে সে আত্মহত্যা করে।

তার অকাল মৃত্যুতে এবং আত্মহত্যায় বাধ্যকারীদের বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার বিকালে খাসেরহাট কালিদাস বড়াল স্মৃতি মাহবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছে। সেই সাথে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা। ঘটনার পরপর লম্পট মিঠুন মজুমদার ও তার পরিবারের লোকজন বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে গেছে।

আত্মহনণকারী কলেজ শিক্ষার্থী দিশার বাবা সুকুমার মজুমদার জানান, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী জগদীশ মজুমদারের ছেলে মিঠুন মজুমদার (২৫) তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে দিশাকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে রাজি না হওয়ায় মিঠুন সুকৌশলে দিশার গোসলের কিছু অশ্লিল ছবি তোলে। গত দু-তিন মাস আগে সেই ছবি দিয়ে দিশাকে ব্লাক মেইল শুরু করে এবং অনৈতিক প্রস্তাব দিতে থাকে। এতে দিশা রাজি না হওয়ায় মিঠুন ওই নগ্ন ছবি লো দিয়ে ফেসবুকে একটি ফেক আইডি খোলে। এক সপ্তাহ ধরে ওই ফেসবুকের ওই ছবিগুলো নিয়ে এলাকায় তোলাপাড়ের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার পর গত বুধবার সন্ধ্যায় দিশা মিঠুনকে ফেসবুক থেকে ওই ছবিগুলো সরানো জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু মিঠুন পুনরায় অনৈতিক প্রস্তাব দিয়ে হুমকি দিলে দিশা ঘরের আড়ার সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনার তিনি বাদী হয়ে চিতলমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। পুলিশ দিশার মৃতদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে।

দিশার প্রতিবেশী লিটন শিকদার, রবীন্দ্র নাথ বৈদ্য, প্রদীপ বিশ্বাস ও সঞ্জয় মজুমদার জানান, মিঠুন এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী ও লম্পট যুবক। তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। তারা মেধাবী কলেজ ছাত্রী দিশা মজুমদার আত্মহত্যায় বাধ্যকারী মিঠুনের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

অপরদিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে কালিদাস বড়াল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ে দিশার সহপাঠিরা বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তারা অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত মিঠনকে গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবী জানিয়েছেন।

কালিদাস বড়াল স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার রায় জানান, দিশার আত্মহনণের খবর পেয়ে রাতেই ওদের বাড়িতে গিয়ে খোজ খবর নিয়েছেন। দিশা বিনয়ী ও মেধাবী ছাত্রী ছিল। বিনা কারণে আত্মহত্যা করার মত মেয়ে সে নয়। তাই তাকে আত্মহনণে বাধ্যকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় না আনলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।

চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) মো. ইকরাম হোসেন জানান, খবর পেয়ে রাতেই দিশার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার সকালে ময়না তদন্তের জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। সেই সাথে দিশার পরিবারে অভিযোগের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। ঘটনার পর থেকেই মিঠুনের গোটা পরিবার পালাতক রয়েছে। মিঠুনকে আটকে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

(এসএকে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮)