নিউজ ডেস্ক : রোহিঙ্গা সংকট সামলানোর ক্ষেত্রে বিচক্ষণতা দেখিয়ে জাতিসংঘে দু’টি আন্তর্জাতিক সম্মাননা পেয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিয়ানমার থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি সংকট সামাল দিতে অনুকরণীয়, দূরদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বৃহস্পতিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ভাষণ দেওয়ার পর পৃথক অনুষ্ঠানে তার হাতে পুরস্কার দু’টি তুলে দেওয়া হয়।

ইন্টার প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সির পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’। এই সম্মননা এর আগে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান, সাবেক মহাসচিব বুট্রোস ঘালি ও ফিনল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ম্যারটি অ্যাহটিসারি পেয়েছেন।আর গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে ‘স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’। এ সম্মাননা এর আগে নাইজারের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মাদু ইসুফু, তিউনেসিয়ার প্রেসিডেন্ট বেজি সাইদ এসেবসি এবং গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস লাভ করেন।

পুরস্কার দু’টি দেশের জনগণকে উৎসর্গ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব দেশেরই উচিত নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রাখাইনে দমন-পীড়ন শুরু করলে সেখান থেকে লাখ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে। বিভিন্ন সংস্থার হিসাব মতে, এ দফায় আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাত লাখের বেশি। এর আগে থেকেই বাংলাদেশ বয়ে চলেছে আরও প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার।

বিশ্ব সম্প্রদায়ের নিন্দা, সমালোচনা ও চাপের মুখে দমন-পীড়ন বন্ধ করে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে গত বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করলেও এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়নি। এজন্য নেপিদোর নিষ্ক্রিয়তাকেই বারবার দায়ী করে আসছে ঢাকা।

সংকটের সমাধানে গত বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের অধিবেশনেও সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের স্থায়ী ও টেকসই প্রত্যাবাসন শুরু করা সম্ভব হয়নি। জাতিসংঘের সঙ্গে মিয়ানমারের যে চুক্তি হয়েছে আমরা তারও আশু বাস্তবায়ন ও কার্যকারিতা দেখতে চাই। আমরা দ্রুত রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।’

অধিবেশনে ভাষণের পর জাতিসংঘ সদরদপ্তরেই ইন্টার প্রেস সার্ভিসের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার হাতে ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ তুলে দেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মহাপরিচালক উইলিয়াম লুসি সুইং।

এরপর রাতে নিউইয়র্কের পার্ক অ্যাভিনিউয়ে গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতে ‘স্পেশাল রিকগনিশন ফর আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন আয়োজক সংস্থার অনারারি প্রেসিডেন্ট ইরিনা বোকোভা।

দু’টি অনুষ্ঠানেই প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন।

(ওএস/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৮)